বৃষ্টির অপেক্ষায় আমন চাষি

0

আকরামুজ্জামান ॥ সময়মতো আমন চাষ শুরু করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে আছেন যশোরের কৃষকরা। পর্যাপ্ত পানির অভাবে এখনও কৃষকরা আমনের বীজতলা তৈরি করতে পারেননি। সেচের পানি দিয়ে আগাম আমন চাষের জন্য কৃষক বীজতলা তৈরি করলেও কাঙ্খিত বৃষ্টির দেখা না পাওয়ায় তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।
কৃষি বিভাগের সূত্রে জানা গেছে, জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে আমন ধান চাষের মৌসুম শুরু হলেও প্রতিবছর আগেভাগেই বীজতলা প্রস্তুতসহ আনুষঙ্গিক কাজ শুরু করে কৃষক। তবে এ বছর দীর্ঘ অনাবৃষ্টির কারণে কৃষক আমনের বীজতলা তৈরিতে পিছিয়ে পড়েছে। আষাঢ় মাসের এক সপ্তাহ পর গত দুদিন আগে এ অঞ্চলে মৌসুমি বৃষ্টি হলেও তা আমন চাষের জন্য যথেষ্ট ছিলো না। এ অবস্থায় আষাঢ় মাসের প্রায় মাঝামাঝি সময় এসেও আমন ধানের বীজতলা তৈরির জন্য বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে তাদের। এ অবস্থায় বৃষ্টি নির্ভর আমন চাষ অনেকটা সেচ নির্ভর হয়ে পড়ায় কৃষকের বাড়তি খরচে কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। ফলে আমন চাষ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন এ অঞ্চলের লাখো কৃষক।
সদর উপজেলার ইছালী এলাকার কৃষক হাদিউজ্জামান মিলন বলেন, আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে সাধারণত বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করে আমন চাষে নামেন কৃষকরা। কিন্তু চলতি মৌসুমে যশোরে বৃষ্টি হচ্ছে না বললেই চলে। গত বছরের তুলনায় এ বছর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অর্ধেকের নিচে নেমেছে। তিনি বলেন, আষাঢ় মাসের আজ ৯ তারিখ। এ সময় খালেবিলে পানিতে থইথই করার কথা। গত ২০ জুন বৃষ্টি হয়েছে বটে, তাতে মাটিতে পানি জমতে পারেনি। এরপর আকাশে বৃষ্টির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ফলে জমিতে বৃষ্টির পানি না জমায় আমন আবাদ ঠিকমতো শুরু করতে পারছেন না বলে তিনি জানান।
আব্দুর রহিম নামে আরেক কৃষক বলেন, অন্যান্য বছরে বর্ষা মৌসুমের আগ মুহূর্তে বৃষ্টি হয়। সেই বৃষ্টির পানিতে তারা বীজতলা তৈরি করেন। বীজতলার চারা বড় হতে হতে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি নেমে আসলে জমিতে ধানের চারা রোপণ শুরু করেন। অথচ এখন আষাঢ় মাসের প্রায় মাঝামাঝি সময় চলে আসলেও পর্যাপ্ত বৃষ্টির দেখা নেই। ফলে সামনে বৃষ্টি হলেও আমন চাষ পিছিয়ে যাবে বলে তিনি দাবি করেন।
বাঘারপাড়ার শেখের বাতান গ্রামের আবু বকর বলেন, স্যালো মেশিনের পানিতে আগেভাগে আমনের বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। এতে খরচ বেড়েছে আগাম আমন ধান চাষে। তিনি বলেন, আগে আমরা আউশ ধান চাষ করতাম। এখন সেটি বন্ধ করে আগাম আমন চাষ করি। তবে এ বছর পানির অভাবে উৎপাদন খরচ যেমন বাড়বে ঠিক তেমনি পরিত্যক্ত থাকবে অনেক জমি বলে তিনি দাবি করেন।
একই এলাকার কৃষক আসাদুল ইসলাম বলেন, সাধারণত আমন চাষ করে তারা পরবর্তী বোরো চাষের খরচ যোগান দেন। এজন্য এ বছর যদি আমন চাষ ব্যাহত হয় তাহলে সামনে বোরো আবাদ করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাছাড়া সেচ, সার-কীটনাশক ও শ্রম খরচ বেড়ে যাওয়ায় এটি আমাদের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি হয়ে দেখা দিয়েছে।
তবে এ বিষয়ে কৃষকদের হতাশ না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক ড. সুশান্ত কুমার তরফদার। তিনি বলেন, এ বছর বৃষ্টি কম হলেও যথাযথ সময়ে কাঙ্খিত বৃষ্টি পেয়ে কৃষক আমন চাষ শুরু করতে পারবেন। ইতোমধ্যে জেলার অধিকাংশ এলাকায় কৃষক আমনের আগাম জাতের চাষের প্রস্তুতি শুরু করেছেন। আশা করা যাচ্ছে সহসা মৌসুমি বৃষ্টির দেখা মিলবে এবং কৃষক পুরোদমে আমন চাষের প্রস্তুতিতে নেমে পড়বেন বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, এ বছর যশোরে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে।