বাঘারপাড়ায় সরিষার আবাদ বাড়লেও ফলন নিয়ে শংকা

0

বাঘারপাড়া (যশোর) সংবাদদাতা॥ বাঘারপাড়া উপজেলার জামদিয়া ইউনিয়নের ঘোড়ানাছ গ্রামের কৃষক মলয় লস্কর। তিনি চলতি বছর চার বিঘা (৪৮শতাংশে এক বিঘা) জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষার চাষ করেন। ফুলে ফলে মাঠ ছেয়ে যায় সরিষায়। স্থানীয় অনেক কৃষক তখন মলয়কে বলেছিলেন, ‘সাবাশ। এবার তুমি কমপক্ষে ৬০ মণ সরিষা ঘরে তুলতে পারবা।’ মলয়ও আনন্দে ছক কষতে থাকেন সরিষা নিয়ে তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা। ১ ডিসেম্বার ভরা সরিষার ক্ষেতে হঠাৎ করে আঘাত হানে ঘুর্ণিঝড় মিগজাউম। নিম্নচাপের প্রভাবে সরিষাক্ষেতে হাঁটু পানি জমে যায়। সরিষার গাছগুলো শুকাতে শুরু করে। কয়েকদিন পর সরিষাগাছে নতুন পাতা ছাড়তে শুরু করে। বোরো আবাদ বাদ দিয়ে রেখে দেন নতুন পাতা গজানো সরিষার গাছগুলো। এতে টেনেটুনে ১৫ থেকে ২০মণ সরিষার ফলন হবে বলে আশা করেছিলেন তখন মলয় লস্কর। আবার এল নিম্নচাপ। মনের দুঃখে মলয় আর সরিষার খেতে যায়নি । তবে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে শুনেছেন ৪ থেকে ৫ মণ সরিষার ফলন হতে পারে। এভাবেই একই গ্রামের অনিমেষ, তুহিন, সন্দীপ, কমলাপুর গ্রামের তরুণসহ অনেকেই সরিষার চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেককে সরিষার ক্ষেত ভেঙে বোরো আবাদও করতে দেখা গেছে।
কথা হয় মলয় লস্করের সাথে। তিনি বলেন, এ বছর ৪ বিঘা জমিতে সুন্দর সরিষা হয়েছিল। গত বছর এই একই পরিমাণ জমিতে ৫৫ মণ সরিষা পেয়েছিলাম। এবার আরও ১০মণ বেশি হতো। দুইবারের বৃষ্টিতে সব নষ্ট হয়ে গেছে। এখন যা হবে তা দিয়ে দিয়ে কোনোরকমে নিজের খরচের তেলটা হবে। মনের দুঃখে ব্লকটাও আর করিনি। তিনি আরও বলেন, এ বছর আমাদের মাঠে গত বছরের তুলনায় বেশি সরিষার চাষ হয়েছিল। অনেকে একেবারে সরিষার ক্ষেত ভেঙে দেছেন। আবার অনেকে আধাপাকা সরিষার গাছ তুলে সেখানে বোরো আবাদ করেছেন।
উপজেলার বাসুয়াড়ি ইউনিয়নের আয়াপুর গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম জানালেন, এবার ৭ কাঠা জমিতে সরিষার চাষ করেছিলেন। অনেক সরিষা হয়েছিল। জমিটা অপেক্ষাকৃত নিচু হওয়ায় বৃষ্টিতে সরিষার ক্ষেতে পানি জমে যায়। পরে তা ভেঙে দিয়ে বোরো চাষ করেছেন। একই কথা জানালেন রায়পুর ইউনিয়নের শালবরাট গ্রামের হুমায়ূন কবির ও পৌরসভার রাকিবও।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর সরিষার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৮ শ ২০ হেক্টর জমিতে এবং আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৬ শ ৫০ হেক্টর জমিতে। উপজেলায় বারি সরিষা-১৪ জাতের আবাদ হয়েছে বেশি। যার পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৩ শ ৫০ হেক্টর। এছাড়াও টরি-৭ ছিল ৮ শ ১৭ হেক্টর, বারী-১৭ ছিল ৩ শ ২৪ হেক্টর, বারী-৯ ছিল ১ শ ১৭ হেক্টর, বিনা সরিষা-৯ ছিল ২ হেক্টর ও বারী সরিষা-১৮ ছিল ২০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৫ শ ১০ মেট্রিকটন।
উপজেলা কৃষি অফিসার সাইয়েদা নাসরিন জাহান জানান, এক মৌসুমে পরপর দুইবার বৃষ্টির প্রভাবে সরিষার ফলন কিছুটা কম হবে। তবে ক্ষতি খুবই কম। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সমস্য হবে না। কারণ আবাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি চাষ হয়েছে। যারা আগাম সরিষা চষে করেছিলেন তাদের ক্ষতি তুলনামূলক কম হয়েছে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।