চিকিৎসা ব্যয় নাগালের বাইরে অসহায় হয়ে পড়েছে মানুষ

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ চিকিৎসা ব্যয় সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা, অপারেশন, ওষুধ, উপকরণ সবখানেই লেগেছে উচ্চমূল্যের ছোঁয়া। গত কয়েক বছরের ব্যবধানে কোন কোন ক্ষেত্রে মূল্য বেড়েছে দুইগুণেরও বেশি। এতে গরিব অসহায় রোগীদের চিকিৎসা নেওয়া অসাধ্য হয়ে পড়েছে। যশোরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। তবে হাসপাতাল কর্মকর্তারা বলছেন, এটা শুধু চিকিৎসা ক্ষেত্রে নয় সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় তার প্রভাব এ ক্ষেত্রে।
জানা গেছে, শহরের দড়াটানা এলাকায় অবস্থিত একটি প্রথম শ্রেণির বেসরকারি হাসপাতালের সিজার অপারেশন খরচ ৩০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। ডাক্তার ভেদে এ খরচ কমবেশি হয়। সেখানে একজন ডাক্তারের ফি সর্বনিম্ন ১৪ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ২৩ হাজার টাকা। এর বাইরে অপারেশন থিয়েটারের বিল ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। কেবিন ভাড়া ১ হাজার ৮শ টাকা থেকে ৩ হাজার ৭ শ টাকা। সাধারণ বেড ভাড়া ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা । সিজারিয়ান অপারেশনের জন্যে প্রতি রোগীর ৫ থেকে ৭ হাজার টাকার ওষুধ লাগে। সব মিলিয়ে একজন সিজারিয়ান রোগীকে গুণতে হয় ৩০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা।
এই হাসপাতালে বহির্বিভাগে ডাক্তারের ফি নতুন রোগীর ক্ষেত্রে ৭শ টাকা। পুরাতন রোগীর ক্ষেত্রে ৬ শ টাকা। তাও তিন মাসের জন্য। কথা হয় গাইনি রোগের চিকিৎসা নিতে আসা শিলা খাতুনের সাথে। তিনি বলেন, আমাদের মত মানুষের ৭শ টাকা ফি দিয়ে ডাক্তার দেখানো খুবই কষ্টসাধ্য।
হাসপাতালের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মূল্য তালিকায় দেখা গেছে, হাতে গোণা কয়েকটি ছাড়া অধিকাংশ পরীক্ষার মূল্য হাজার টাকার ওপরে। শতকারা ২৫ ভাগ ডিসকাউন্টসহ রোগ নির্নয়ের পরীক্ষা (এমআরআই) মূল্য ৫ থেকে ১৮ হাজার ৭৫০ টাকা পর্যন্ত। সিটি স্ক্যান ৩ হাজার ৮২৫ টাকা।
এই হাসপাতালের সামান্য দূরে অবহিত প্রথম শ্রেণির অপর একটি বেসরকারি হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের খরচ ৫০ হাজার টাকা । ক্যাশ কাউন্টার থেকে জানানো হয়, কেবল ডাক্তারের খরচ সর্বনি¤œ ২৫ হাজার টাকা। এর বাইরে অপারেশন থিয়েটারের বিল প্রতি ঘন্টা ২৫শ টাকা। এর সাথে কেবিন অথবা বেড ভাড়া এবং ডাক্তারের ভিজিট যুক্ত হয়। এখানে একটি কেবিনের ভাড়া ১২শ ৫০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৫০ টাকা পর্যন্ত। সাধারণ বেড ভাড়া ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা।
যশোর-২৫০ শয্যা হাসপাতালের সামনে একটি মধ্যম শ্রেণির হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, সেখানে সিজারিয়ান অপারেশন বাবদ ডাক্তারকে দিতে হয় ২৫ হাজার টাকা। অপারেশন খরচ ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা।
চিকিৎসা ব্যয়ের পাশাপাশি বেড়েছে জীবন রক্ষাকারী ওষুধের দাম। আব্দুল জোবায়ের নামে এক ফার্মেসি মালিক জানান, অতিসম্প্রতি অধিকাংশ ওষুধের দাম বেড়েছে। অপটিমক্স ৪০০ মিলিগ্রাম প্রতিটি ট্যাবলেটের মূল্য ছিল ৫০ টাকা। বর্তমান মূল্য ৭০ টাকা। ৬০ টাকার একটি সিরাপ ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ বিষয়ে যশোরের সিভিল সার্জন বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস বলেন, বেরসকারি হাপাতালের ক্ষেত্রে সরকারের নির্ধারিত কোন রেট নেই। যে কারণে আমাদের কিছু করার নেই। তারপরও কোন অভিযোগ পেলে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখবো। তিনি আরও বলেন, সরকার বেসরকারি হাসপাতালে রেট বেধে দেবার পরিকল্পনা করছে। সেটি বাস্তবায়ন হলে আমরা দেখবো।
বিপ্লবী কমিউনিস্ট লিগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, সাধারণ মানুষ বড় অসহায়। চিকিৎসার নামে তাদেরকে জিম্মি করে পকেট কাটা হচ্ছে। চিকিৎসা সেবা দুর্বৃত্তদের হাতে চলে গেছে, সরকার দুর্বৃত্তদের সাথী। সাধারণ মানুষ চিকিৎসা সেবা নিতে এলে তাদেরকে প্রতিপদে অর্থের বলী হতে হয়। এটা দেখার কেই নেই। এখন জনগণকে প্রতিবাদী হতে হবে।
এ ব্যাপারে প্রাইভেট হাসপাতাল ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত কুমার বিশ্বাস বলেছেন, চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধির প্রধান কারণ হচ্ছে সব উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি। যার প্রভাব পড়েছে চিকিৎসা ক্ষেত্রে।