তীব্র শীতের মধ্যে যশোরে ২২ মি.মি বৃষ্টিপাত রেকর্ড বোরো চাষে আশীর্বাদ হলেও ক্ষতি হয়েছে সরিষা

0

আকরামুজ্জামান ॥ গত প্রায় এক সপ্তাহব্যাপী যশোরসহ দক্ষিণের জেলাগুলোতে চলছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। তীব্র শীতে নাকাল জনজীবন, পাশাপাশি শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে ফসল নিয়ে উদ্বিগ্ন কৃষক। এরই মধ্যে বুধবার গভীর রাত থেকে যশোরে আকাশ থেকে নেমে আসে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। বুধবার রাত সাড়ে ১১ টার দিক থেকে শুরু হওয়া গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি গতকাল দিনভর চলে। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বুধবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত জেলায় ২২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এরমধ্যে এদিন ভোর ৫টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত ২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
হঠাৎ এই বৃষ্টিতে জনজীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। তীব্র শীতের মাঝে যখন বৃষ্টি শুরু হয়েছে তখন জেলার বিস্তীর্ণ মাঠে বোরো, রবিশস্যসহ নানান জাতের শীতের সবজি ক্ষেত রয়েছে। তবে বৃষ্টির কারণে বোরো চাষের জন্য আশীর্বাদ হলেও সরিষাসহ অন্যান্য রবি ফসলের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে।
বৃষ্টির কারণে গত কয়েকদিনের চলমান শীতের তীব্রতা কিছুটা কমেছে। গত কয়েকদিন ধরেই যশোরে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছিল। তাপমাত্রার পারদ নেমে এসেছিল ১০ এর ঘরে। শীতে সবচেয়ে বেশি কষ্টে ছিলেন সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টিতে জেঁকে বসা ঠান্ডা কিছুটা কমে জনজীবনে স্বস্তি এনেছে বটে । তবে স্যাঁতস্যাঁতে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
যশোর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটি নিয়ন্ত্রিত আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিক থেকে জেলার বিভিন্ন এলাকায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। রাত যত গভীর হতে থাকে ততই টপটপ বৃষ্টি পড়তে থাকে। তবে ভোর সাড়ে ৫টা থেকে বৃষ্টিপাতের তীব্রতা শুরু চলে সকাল ৮টা পর্যন্ত। এরপর সকাল ১০টা পর্যন্ত গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি চলতে থাকে। সে পর্যন্ত ২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। সকাল ১০টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত বিরতি দিয়ে বিকেলের দিক ফের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি চলতে থাকে। যা বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত চলমান ছিলো। আবহাওয়া অফিস বলছে, আজ শুক্রবারও সারাদিন আকাশ মেঘলা থাকবে এবং গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি নামতে থাকবে। বৃহস্পতিবার যশোরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃষ্টির কারণে সকালের দিকে কুয়াশা ছিল না। তবে তার আগে কুয়াশার কারণে দৃষ্টি সীমা ছিলো ৬শ মিটার।
আকস্মিক এ বৃষ্টিপাতে সকাল থেকেই সড়কে লোক চলাচল ছিল কম। একান্ত কাজে মানুষ ঘরের বাইরে এলেও তারা বৈরী পরিবেশের কারণে ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন।
আব্দুস সামাদ নামে এক পথচারী বলেন, বেশ কয়েককদিন ধরেই শীতের তীব্রতা ছিল। সকালে বৃষ্টি হওয়ায় কিছুটা কমে এসেছে। তবে বৃষ্টিতে ভোগান্তি হচ্ছে। সকালে রাস্তাঘাট ফাঁকা ছিল, রিকশা ছিল না। অফিসে যেতে বিলম্ব হয় অনেকের বলে তিনি জানান।
হাফিজুর রহমান নামে অপর একজন বলেন, ভোর সাড়ে ৫টা থেকে বৃষ্টির তীব্রতা শুরু হয়। এদিন ফজরের সময়ে মসজিদে নামাজেও লোক কম এসেছে। এরপর সকল ১০/১১টা পর্যন্ত ঝিরিঝিরি হয়েছে। এই বৃষ্টি শীতের প্রভাব কমালেও রাস্তা স্যাঁতসেতে থাকায় কিছুটা ভোগান্তি হলেও আজকের আবহাওয়াটা বেশ স্বস্তিদায়ক বলে তিনি জানান।
এদিকে বৃষ্টিতে বোরো আবাদের জন্য আশীর্বাদ হলেও রবিশস্য বিশেষ করে সরিষা আবাদের জন্য ক্ষতি হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সুশান্ত কুমার তরফদার জানান, জেলায় এই মুহূর্তে বোরো আবাদের প্রস্তুতি চলছে। বৃষ্টির কারণে সেচ নির্ভর এ চাষের জন্য ব্যাপক উপকার হয়েছে। ঝুঁকিমুক্ত হয়েছে কোল্ড ইনজুরি আক্রান্ত থেকে বোরোর বীজতলা। তবে সরিষাসহ রবি ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, জেলায় এই মুহূর্তে ৩১ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে সরিষা, ১২শ হেক্টর জমিতে মসুরি ও ২২শ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি আবাদ হয়েছে। মসুরি ক্ষেতে ফলন না আসায় তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। পাশাপাশি সবজির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। তবে বৃষ্টিতে সরিষার ফুল ঝরে যাওয়ার কারণে ফলম কম ও বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে তিনি জানান।