নির্বাচনের পর অন্তর্কলহে জ¦লছে জাতীয় পার্টি, যা বলছেন যশোরের নেতারা

0

 

আকরামুজ্জামান ॥ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভরাডুবির পর বিক্ষোভ অস্থিরতা চলছে আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যতম শরীক দল জাতীয় পার্টিতে। শীর্ষ নেতাদের অসহযোগিতা, সাংগঠনিক দুর্বলতাসহ নানা কারণে দলটিতে তৈরি হওয়া বিভক্তির জেরে অনেক নেতা-কর্মী ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। তারা চাইছেন দলটির বর্তমান নেতৃত্বের পরিবর্তন। বিশেষ করে নির্বাচনে অংশ নেয়া পরাজিত প্রার্থীদের অনেকেই এখন তারা নিজেরাই নতুন নেতৃত্ব তৈরির উদ্যোগে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন।
এ অবস্থায় জাতীয়পার্টি তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা কার্যত দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়লেও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলটির হয়ে অংশ নেয়া যশোরের নেতারা কী করবেন বা এই মুহূর্তে কী ভাবছেন? সেই প্রশ্ন এখন সবার মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে।
এ বিষয়ে সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যশোর-৩ সদর আসনের পরাজিত জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী ও দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান প্রবীণ রাজনীতিক অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম বাচ্চু বলেন, দলটির অভ্যন্তরীণ এ সংকটে আমরা কী পদক্ষেপ নেবো সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নিইনি। বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। তবে পার্টির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বিব্রত বলে জানান।
এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টির এ নেতা বলেন, আমরা ক্ষমতায় যাবো বলে নির্বাচনে অংশ নিইনি। দলের সাংগঠনিক ভিত্তি ও অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে নির্বাচনে অংশ নিয়ে শেষ পর্যন্ত মাঠে থেকেছি। তবে দলের শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ সরকারের সাথে ২৬ টি আসনে সমঝোতায় আসায় আমাদের দলের জন্য বুমেরাং হয়ে গেছে। জয়-পরাজয় মেনে ৩শ আসনেই ভোটে লড়াই করা উচিৎ ছিলো। এতে দলের সাংগঠনিক অবস্থা সুদৃঢ় হতো, পাশাপাশি বিজয়ী আসনের সংখ্যাও বাড়তো বলে তিনি দাবি করেন।
নির্বাচন কতটা গ্রহণযোগ্য বা অংশগ্রহনমূলক হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুব আলম বাচ্চু বলেন, নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত অংশ নিয়ে এখন অনেক কথা বলার থাকলেও তা বলতে পারছি না। তবে এটা বলতে পারি নির্বাচন একতরফা হয়েছে। প্রতিযোগিতামূলক হয়নি। সুক্ষ্ম কারচুপি হয়েছে। অংশগ্রহণমূলক হলে অবশ্যই ফলাফল পাল্টে যেতো। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা কী করবো আপাতত বলতে পারছিনা। আরও কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হবে। তখন বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া যাবে।
যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর) আসনের পরাজিত জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী ও দলের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট জহুরুল জহির বলেন, জাতীয় পার্টির বর্তমান পরিস্থিতির জন্য মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু দায়ি। তিনি তার ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে আমাদেরকে এবং দলকে কুরবানি দিয়েছেন। দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে ভুল বুঝিয়ে সংগঠনকে বিপথগামী করেছেন। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা নীরব রয়েছি। এখনো কোনো পক্ষে অবস্থান নেয়নি। তবে ভবিষ্যতে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্তে আসবেন বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, ভোটে পরিকল্পিতভাবে আমাদেরকে পরাজিত করা হয়েছে। এর কারণে দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিষয়টি তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও উপলব্ধি করছেন। ফলে ভবিষ্যতে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানান এ নেতা।
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির যশোর জেলা কমিটির আহবায়ক আজিজুর রহমান বলেন, জাতীয় পার্টির বর্তমান নেতৃত্বের মধ্যে কেউ কেউ দলের চেয়ারম্যানের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। যেকারণে দলের মধ্যে এ বিভক্তি দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনের আগে ১০ ডিসেম্বর পার্টির এক সভায় ঢাকায় মিলিত হয়েছিলাম। ওই সভায় সারাদেশ থেকে ৬০ জন নেতা বক্তব্য রাখেন। এর মধ্যে ৫৯ জন নেতাই বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার পরামর্শ দেন। তারপরও কিছু নেতা চেয়ারম্যানকে ভুল বুঝিয়ে নির্বাচনে যেতে বাধ্য করেছেন। এতে দলকে ক্ষতি করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
তিনি বলেন, সংগঠনের বর্তমান পরিস্থিতি আমরা অবলোকন করছি। আশা করি বিভক্তির সমাপ্তি ঘটে আমরা এক কাতারে আসতে পারবো। সংগঠন আরও সুসংগঠিত হবে। তানাহলে ভবিষ্যতে কী হবে সময় বলে দেবে।