বিজয়ের মাস

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ আজ ১৩ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিন চারদিক থেকে বিজয় নিশান উড়তে থাকে। বিশ্বমানচিত্রে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন- সার্বভৌম একটি দেশ জায়গা করে নেয়ার পথে এগুতো থাকে। পূর্ব ও উত্তর দিক থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সহযোগী মিত্রবাহিনী ঢাকার প্রায় ১৫ মাইলের মধ্যে পৌঁছে যায়। একমাত্র ঢাকা ছাড়া গোটা দেশ ইতিমধ্যে বাংলাভাষীদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এদিন পাকিস্তানকে রক্ষায় মরিয়া মার্কিন-চীনের কূটনৈতিক শেষ চেষ্টাও ব্যর্থ করে দেয় সোভিয়েত ইউনিয়ন। এ নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের বিরুদ্ধে তৃতীয়বারের মতো ভেটো দেয় তারা। এদিন বঙ্গোপসাগরের দিকে যাত্রা শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহর । অন্যদিকে নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে এ জাতিকে মেধাশূন্য করতে পাকিস্তানি বাহিনীও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার আল-বদর, আল-শামস বাহিনী শিক্ষক,সাংবাদিক,বিজ্ঞানী,চিকিৎসকসহ বুদ্ধিজীবীদের হত্যার ঘৃণ্য পরিকল্পনা শুরু করে। এ সময় মিত্রবাহিনী জানমালের ক্ষতি কমাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে আত্মসমর্পণের জন্যে চাপ দেয়। ঢাকার পূর্ব ও উত্তর দিক ছাড়াও পশ্চিমেও অবস্থান নেয় মিত্রবাহিনী। অর্থাৎ মিত্রবাহিনী ঢাকা ঘিরে ফেলে। টাঙ্গাইলে নামে মিত্রবাহিনীর ছত্রীসেনারা। অন্যদিকে লে.কর্নেল শফিউল্লাহ’র ‘এস’ ফোর্স ঢাকার উপকণ্ঠে ডেমরা পৌঁছায়। সৈয়দপুরে আত্মসমর্পণ করে হানাদার বাহিনীর একটি রেজিমেন্টের অধিনায়কসহ ১০৭ পাকিস্তানি সেনা। এছাড়া খুলনা,বগুড়া ও চট্টগ্রামে পাকিস্তানি অধিনায়কেরা শেষ লড়াই চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু বিভিন্ন অঞ্চলে দলে দলে পাকিস্তানি সৈন্যরা আত্মসমর্পণ শুরু করে। এদিন কুমিল্লার ময়নামতিতেই এক হাজার ১১৪ জন পাক সেনা আত্মসমর্পণ করেন। ভারতীয় বিমান বাহিনী দুই দিন বিরতি দিয়ে আবার ঢাকায় ব্যাপক বোমবর্ষণ শুরু করে। পাশাপাশি ঢাকা ঘিরে রাখা মিত্র বাহিনী ব্যাপক গোলাবর্ষণ শুরু করে। ফলে প্রাণ বাঁচাতে ঢাকায় আটকে পড়া পাক বাহিনী আত্মসমর্পণের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন এলাকা পাকিস্তানি দখলমুক্ত হওয়ায় ঘর থেকে রাস্তায় নেমে উল্লাস করতে থাকেন দীর্ঘ ৯ মাস অবরুদ্ধ থাকা সাধারণ মানুষ।