অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের বাড়িতে হামলা শহরে গভীর রাতে একটি বাড়িতে মুহুর্মুহু বোমা ফুটলেও জানতেন না কোতয়ালি থানার ওসি!

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গভীর রাতে যশোর শহরের প্রায় কেন্দ্রস্থল ঘোপে বিএনপির নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের বাড়ির সামনে ও ভেতরে মুহুর্মুহু বোমার বিষ্ফোরণ ঘটলেও এক ঘণ্টা পরও সে খবর গিয়ে পৌঁছেনি যশোর কোতয়ালি থানার ওসির কাছে। তিনি ভেবে ছিলেন কালী পূজার পটকা-বাজি ফুটছে হয়তো। সাংবাদিকদের কাছ থেকে শুনে বললেন, খোঁজ নিচ্ছেন। অথচ বোমা হামলার পরপরই ঘটনাস্থলে যান পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ পুলিশের একটি দল।
এদিকে বোমা হামলার ২৪ ঘণ্টা পার হলেও জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। বেশুমার বোমা হামলার একটি ভিডিও বিভিন্ন সংবাদপত্রের অনলাইন ভার্সনে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায় গতকাল। স্থানীয় সিসিটিভির ফুটেজে ধরা পড়ে বোমা হামলার ওই দৃশ্য। তারপরও টনক নড়েনি যশোরের পুলিশ প্রশাসনের।
সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, গত ১৮ নভেম্বর শনিবার রাত ১০টা ৩৯ মিনিটের দিকে এমএন খান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের গলি দিয়ে কয়েকটি মোটরসাইকেলে সন্ত্রাসীরা ঘোপে সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত তরিকুল ইসলাম ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের বাসভবনের সামনে আসে। তাদের সকলের মুখ বাঁধা ছিলো। মোটরসাইকেল থেকে নেমেই সকলে ওই বাসভবনকে লক্ষ্য করে অন্তত ১৫টি বোমা নিক্ষেপ করে। বোমা বিস্ফোরিত হলে বাসভবনের ভেতর ও সামনে ধোয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। এর পরপরই সন্ত্রাসীরা মোটরসাইকেলে উঠে একই গলি দিয়ে ফিরে যায়। সবচেয়ে বেশি বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের চাচা মরহুম সিরাজুল ইসলামের বাড়িতে। এসময় তার ৮০ বছর বয়সী চাচি জাহানার বেগম ওই বাড়িতে ছিলেন।
এছাড়া অনিন্দ্য ইসলাম অমিতও বাড়িতে ছিলেন না, ছিলেন তার মা যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, সন্ত্রাসীরা যখন বোমা চালাচ্ছিলো তখন ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের রাজুর মোড়ে কয়েকজন পুলিশ সদস্য অবস্থান করছিলেন। কিন্তু বোমার শব্দ পেলেও তারা ঘটনাস্থলে এগিয়ে যায়নি।
অনিন্দ্য ইসলাম অমিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপি বড় কোনো কর্মসূচির আগে প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়া আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা আমাদের বাড়িতে বোমা হামলা চালায়। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি, এবারও সেই ধারাবাহিকতায় এ হামলা চালানো হয়েছে। এর আগে অন্তত পাঁচবার এমন বোমা হামলা চালানো হয়।’
তিনি বলেন, রোববার থেকে বিএনপির হরতাল কর্মসূচি শুরু হয়েছে। নেতা-কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য এ হামলা চালানো হয়েছে। এ হামলা কোনো রাজনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না। এটা ভীরু কাপুরুষতা।
এদিকে ঘটনার পরপরই স্থানীয় সাংবাদিকরা জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন ও কোতয়ালি থানা পুলিশের ওসি মো. আব্দুর রাজ্জাকের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু কোনো কর্মকর্তাই মোবাইল ফোন কল রিসিভ না করায় সাংবাদিকেরা তাৎক্ষণিক তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টায় ব্যর্থ হন। এর প্রায় ঘণ্টা খানিক পর এক দল সাংবাদিক কোতয়ালি থানায় গিয়ে ওসি মো. আব্দুর রাজ্জাকের সাথে দেখা করেন। এ সময় সাংবাদিকরা তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বোমা হামলা সম্পর্কে অবহিত নন বলে জানান। শুধু তাই নয়, তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, কালী পূজায় পটকাবাজি ফুটানো হচ্ছে !
গতকাল রোববার বিকেলে যোগাযোগ করা হলে কোতয়ালি থানা পুলিশের ওসি মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, বোমা হামলার একটি ভিডিও তারা হাতে পেয়েছেন। ভিডিও দেখে জড়িতদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জড়িত কাউকে এখনো আটক করা যায়নি।