খোঁজ নিতে থানায় এসে ভোগান্তি স্বজনদের সাধারণ মানুষও হচ্ছেন কথিত নাশকতা মামলার আসামি !

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সোমবার তখন বেলা সাড়ে ১২টা। নারী-পুরুষসহ বেশ কয়েকজন যশোর কোতয়ালি থানার সামনে উদ্বিগ্নের সাথে দাঁড়িয়ে আছেন। থানা চত্বরের বাইরে থাকলেও একজন পুলিশ কনস্টেবল বারবার ছুটে এসে তাদের তাড়িয়ে দিচ্ছিলেন। আবার ওই কনস্টেবল চলে যাওয়ার পর ফের তারা এগিয়ে এসে থানার ভেতর উঁকি মারতে থাকেন, আটক স্বজনদের দেখার জন্য। শুধু এই দৃশ্য গতকালের নয়, প্রতিদিনের।
কোতয়ালি থানার সামনে কথা হয় রাজু নামে এক মাংস বিক্রেতার সাথে। বড় বাজারে তার মাংসের দোকান। তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, গত রোববার সন্ধ্যায় র‌্যাব জীবন নামে তার এক স্বজনকে ধরে নিয়ে যায়। জীবনের বাড়ি বেজপাড়ায়। চুড়িপট্টিতে প্রসাধনী সামগ্রীর ব্যবসা করেন। পরে তাকে কোতয়ালি থানায় সোপর্দ করেছে র‌্যাব। তিনি এসেছেন জীবনের সাথে দেখা করার জন্য। সকাল ৮টা থেকে থানার সামনে বসে আছেন। কিন্তু থানার ভেতর ঢুকতে পারেননি। জীবনকে খাবারও দিতে পারেননি। পুলিশ বারবার এসে তাদেরকে তাড়িয়ে দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, কী কারণে জীবনকে র‌্যাব ধরে নিয়ে এসেছে তা তারা জানেন না। তাছাড়া জীবন কোনো অপরাধের সাথে জড়িত নন।
সদর উপজেলার কচুয়া খানপাড়া থেকে রেক্সোনা খাতুন নামে এক নারী শিশু সন্তান কোলে নিয়ে থানার বাইরে স্বামীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। রেক্সোনা খাতুনের সাথে আরও কয়েকজন নারী স্বজন এসেছেন। এই প্রতিনিধিকে রেক্সোনা খাতুন জানান, তার স্বামী জাহিদুল ইসলাম বাবু রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। গত রোববার রাতে রূপদিয়া থেকে তার স্বামীকে পুলিশ ধরে নিয়ে এসেছে। শুনেছেন, তার স্বামীর নামে নাকি নাশকতার মামলা রয়েছে। এরপর তিনি এই প্রতিবেদকের কাছে জানতে চান, তার স্বামীকে কোন আদালতে নিয়ে যাবে পুলিশ। সেই আদালত কোথায়। কখন নিয়ে যাবে পুলিশ ইত্যাদি। দিনমজুর স্বামীকে পুলিশ ধরে নিয়ে আসায় শিশু সন্তান কোলে সহজ সরল এই নারীর চোখেমুখে চরম উৎকণ্ঠা লক্ষ্য করা যায়। পরে পুলিশ কথিত নাশকতার মামলায় জাহিদুল ইসলাম বাবুকে আদালতে সোপর্দ করলে সেখানেও ছুটে যান রেক্সোনা খাতুন। সন্ধ্যায় কারাগারে পাঠানোর আগ পর্যন্ত শিশু সন্তান নিয়ে স্বামীকে শেষ দেখার জন্য আদালতের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় তাকে।
রেক্সোনা খাতুেনর মতো দুপুরে কোতয়ালি থানার বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন শফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। তিনি জানান, তার চাচা মোবারককাটি গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল ওহাবকে গত রোববার রাত ৯টার দিকে ধরে নিয়ে যায় র‌্যাব। শংকরপুরস্থ কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনালের সামনে থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাকে পুলিশে দেয় র‌্যাব। তার চাচা আব্দুল ওহাব বাস কাউন্টারে স্ট্যার্টারের চাকরি করেন। তিনি তার সাথে দেখা করতে এসেছেন। সকাল ৮টা থেকে থানার সামনে অপেক্ষা করছেন। কিন্তু পুলিশ তাকে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না। বাইরে দাঁড়িয়ে থাকলেও একজন পুলিশ সদস্য এসে বারবার তাদের তাড়িয়ে দিচ্ছে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে যশোরে প্রতিদিন দিনমজুরসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ আটক হচ্ছেন। নারীও বাদ যাচ্ছেন না আটকের হাত থেকে। উদ্বিগ্ন স্বজনেরা কোতয়ালি থানায় ছুটে গেলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের আটকের বিষয়ে খোঁজখবর দেওয়া হচ্ছে না। পুলিশের দুর্ব্যবহারের শিকার হতে হচ্ছে তাদেরকে এমন অভিযোগ অধিকাংশ স্বজনের।
জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মী এমনকি সমর্থকদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ধরপাকড় অব্যাহত রয়েছে। এসব ব্যক্তিকে কথিত নাশকতার মামলায় আটক দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। প্রতিদিন দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ জন্য উদ্বিগ্ন স্বজনদের আদালতের বারান্দায় অপেক্ষায় বসে থাকতে দেখা যায়। কারাগারে পাঠানোর প্রাক্কালে পুলিশের প্রিজন গাড়িতে আটক ব্যক্তিরা ওঠা পর্যন্ত স্বজনেরা সেখানে অবস্থান করে থাকেন। পরে একরাশ কষ্ট বুকে নিয়ে তারা বাড়ি ফিরে যান।