দ্বিতীয় দফার শেষ দিনেও যশোরে স্বতঃস্ফূর্ত অবরোধ পালিত

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরে বিএনপির ডাকে দ্বিতীয় দফার অবরোধ সর্বত্র স্বতঃস্ফূর্ত ও শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। জেলা শহর থেকে শুরু করে সমগ্র জেলাজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তান্ডব ও শাসকদলের অব্যাহত হুমকির মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় দফার শেষ দিনের অবরোধ পালিত হয়। তবে রোববার রাতভোর ও সোমবার দিনের বেলা যশোর পুলিশ,র‌্যাব ও ডিবি পুলিশ জেলা জুড়ে গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রাখে।
সোমবার ভোরে আলো ফোটার আগেই রাজপথে নেমে আসেন গণতন্ত্রকামী জনতা। দিনভর তারা রাজপথে থেকে অবরোধের সমর্থনে মিছিল করেন। তবে এদিন বিএনপির নেতৃত্বে চলমান আন্দোলনে বাড়তি মাত্রা যুক্ত করে ছাত্রদল। তারা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দেয়। পাশাপাশি যশোর শহর থেকে শুরু করে জেলার সকল সড়ক-মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে তারা অবরোধের সমর্থনে মিছিল করেন দলীয় নেতাকর্মীর। দেশ রক্ষার এই কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে যশোরে যাত্রী ও পণ্যবাহী যান চলাচল বন্ধ ছিল।
সোমবার ভোর থেকেই শহরের আর এন রোড, মনিহার বাসস্ট্যান্ড, নীলগঞ্জ, ঢাকা রোডসহ বিভিন্ন সড়কে যুবদল ও ছাত্রদল অবস্থান নিয়ে মিছিল করে। যশোর-মাগুরা মহাসড়কে জেলা ও সদর উপজেলা যুবদল সড়কে দীর্ঘ সময় অবস্থান নিয়ে অবরোধের সমর্থনে মিছিল স্লোগান দিতে থাকে। এদিন দুপুরের পর থেকে যশোর – ঢাকা রোড ছিল জেলা,নগর,সদর,এমএম কলেজ,সিটিকলেজ, পলিটেনিক কলেজ ছাত্রদলের দখলে। তারা অবরোধের সমর্থনে দফায় দফায় মিছিল করে। এর আগে নগর ও সদর উপজেলা ছাত্রদলও একই ভাবে অবস্থান নিয়ে যশোর-খুলনা মহাসড়কে দফায় দফায় মিছিল করে।
এ দিন সকালে সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রদল কলেজের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়। পাশাপাশি ‘দেশ বাঁচানো অবরোধ সফল হোক’ ‘রাষ্ট্র মেরামতের কাজ চলছে সাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা দুঃখিত’ এমন লেখা সংবলিত ব্যানার লাগিয়ে দেয়। পরে তারা একই লেখা সংবলিত ব্যানার ও তালা কলেজের প্রতিটি বিভাগের গেটে ঝুলিয়ে দেয় । এরপর ছাত্রদল নেতারা কলেজ ক্যাম্পাসে অবরোধের সমর্থনে মিছিল করেছে।
আবার সরকারি এম এম কলেজ ও পলিটেনিক ইনস্টিটিউট ছাত্রদলও কলেজের প্রধান ফটকে তালা ও ব্যানার ঝুলিয়ে দেয়। যশোরে সর্বোচ্চ তিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদলের এমন কর্মসূচি চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। যশোরের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রদলের এমন কর্মসূচিকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি আকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছেন, এমনটি বলছেন ছাত্রদল নেতারা।
এদিকে যশোর-মাগুরা মহাসড়কের খাজুরা এলাকায় কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য ও কৃষক দলের যুগ্ম-সম্পাদক টি এস আইয়ূব দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে সড়কে দীর্ঘ সময় অবস্থান করেন। যশোর-বেনাপোল সড়কে শার্শা উপজেলা ছাত্রদল সকাল থেকে অবস্থান মিছিল করে। আবার যশোর- নড়াইল সড়কে যুবদল অবস্থান নিয়ে মিছিল করে। এদিকে যশোর-চৌগাছা সড়কে উপজেলা বিএনপি যুবদল,ছাত্রদল মিছিল করে।
এদিকে অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যশোর শহর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিএনপি নেতা আব্দুল মাজিদ, আব্দুল মান্নান, যুবদল নেতা আব্দুল্লাহ মল্লিক ডলার,জীবন হোসেন,জাহিদুল ইসলাম, অভয়নগরের শুভরাড়া ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মীরাঙ্গীর মোল্লাকেসহ বেশ কয়েকজনকে আটক করে।
এদিকে যশোর সদর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম, চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক মাসুদুর রহমানসহ অনেক নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তল্লাশি চালিয়েছে। এসময় তারা বাড়িতে থাকা দলীয় নেতাকর্মীর স্বজনদের সাথে খারাপ এমন করেন, এমন অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মত এমন অভিযান চালায়।
এদিকে বিএনপির ডাকে অবরোধের দ্বিতীয় দিনেও যশোরের সকল রুটে যাত্রীবাহী পরিবহন বন্ধ ছিল। এদিন বেলা দেড়টার পর শংকরপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল গিয়ে বিগত দিনের চিত্র পরিলক্ষিত হয়। টার্মিনাল এলাকার চতুর পাশে সারিবদ্ধভাবে বাসগুলো দাঁড়িয়ে আছে। এসময় কথা হয় কয়েকজন বাস চালকের সাথে তারা জানান,সকাল থেকে কোনো কর্মব্যস্ততা নেই। টার্মিনাল ভবনের নিচে কিংবা চায়ের দোকানে খোশগল্প করে তারা সময় পার করছেন। তারাও বিএনপির দেশ ও বাঁচানোর এই কর্মসূচির প্রতি আকুন্ঠ সমর্থন জানিয়ে বলেন, বর্তমান সরকার গরিব মারা সরকার। আজ প্রতিটি দ্রব্যের মূল্য এতটাই লাগামহীন, স্ত্রী সন্তান নিয়ে ডাল ভাত খেয়ে বেঁচে থাকাটাই বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এর আগে শহরের মনিহার ও খাজুরা বাসস্ট্যান্ডে গিয়েও এই চিত্র দেখা যায়। তবে এদিন যশোর জেলার চারটি মহাসড়কের ওপর দিয়ে পণ্যবাহী কোনো যানবাহন চলতে দেখা যায়নি।