যশোরে প্রথম দিনের অবরোধ স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালিত

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরে বিএনপির ডাকে দ্বিতীয় দফার প্রথম দিনের অবরোধ শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা পুলিশের অব্যাহত ধরপাকড়, নির্যাতন নিপীড়ন ও শাসক দলের রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে সড়ক-রেল-নৌপথে স্বতঃস্ফূর্ত ও শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রথম দিনের অবরোধ পালন করেন দলটির নেতাকর্মীরা। সাধারণ মানুষও দেশ ও মানুষ বাঁচানোর কর্মসূচিতে তাদের অবস্থান থেকে বিএনপির অবরোধ কর্মসূচিতে সমর্থন জানান, এমনটি জানিয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। বতর্মান সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিএনপির ডাকে দ্বিতীয় দফার অবরোধের রোববার ছিল প্রথম দিন।
এদিন ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে দলীয় নেতা-কর্মীরা সড়কে নেমে আসেন। তবে দ্বিতীয় দফার অবরোধের আগের রাতেও পুলিশ ও র‌্যাব বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবিরা নাজমুল মুন্নিসহ বেশ কয়েকজনকে আটক করে ।
রোববার সকাল থেকে জেলার দূরপাল্লার কিংবা আঞ্চলিক কোনো রুটে যাত্রীবাহী কিংবা পণ্যবাহী কোনো যানবাহন চলতে দেখা যায়নি। সকাল থেকে যশোরের সড়ক,মহাসড়কে বিএনপি নেতা-কর্মীরা অবস্থান নিয়ে মিছিল করতে থাকেন। বিশেষ করে যশোর-ঝিনাইদহ, যশোর-বেনাপোল,যশোর-খুলনা , যশোর – মাগুরা মসহাসড়কের পাশাপাশি সকল আঞ্চলিক সড়কে দলীয় নেতা-কর্মীরা অবস্থান নিয়ে মিছিল করতে থাকেন। আবার যশোর শহরের হাজী মহসিন সড়ক,ঝুমঝুমপুর,নীলগঞ্জ এলাকায় মিছিল হয়।
এ দিন ভোর থেকে যশোর- কেশবপুর সড়কে ছাত্রদল অবরোধের সমর্থনে মিছিল করে। নগর যুবদল যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধের সমর্থনে মিছিল মিছিল করে। যশোর- নড়াইল সড়কে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল,যশোর-বেনাপোল সড়কে ধোপাখোলা নামকস্থানে সদর উপজেলা যুবদল ও ছাত্রদল সকাল থেকে একক কখনো পৃথক ভাবে মিছিল করে। এছাড়া সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দল যশোর-খুলনা মহাসড়কে , নীলগঞ্জ এলাকায় সিটি কলেজ ছাত্রদল সড়কে অবস্থান করে একের পর এক মিছিল করে।
এদিন যশোরের কোনো রুটে যাত্রী কিংবা পণ্যবাহী কোনো পরিবহন চলতে দেখা যায়নি। বেলা আড়াই টার সময় শংকপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের চিত্র ছিল সম্পূর্ণ বিভিন্ন। টার্মিনালের বিশাল জায়গা জুড়ের সারিদ্ধভাবে শ শ বাস দাঁড়িয়েছিল। পরিবহন সংশ্লিষ্ট শ্রমিকরা জানান, সকাল থেকে সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। আব্দুল আলিম নামের এক পরিবহন শ্রমিক বলেন, তিনি নিয়মিত যশোর- সাতক্ষীরা রুটে বাস চালান। রোববার সকাল থেকে বাসের মধ্যে বসে অলস সময় পার করছেন। কোনো যাত্রী নেই, তাই তিনি বাস ধোয়া মোছার কাজ করে বসে আছেন। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বাস চালক জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাস চালানোর জন্য তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে।
এর আগে সকালে মনিহার বাসস্ট্যান্ড ও খাজুরা বাসস্ট্যান্ড গিয়ে একই চিত্র দেখা যায়। যশোরের ওপর দিয়ে যাওয়া চারটি মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন বেনাপোল স্থলবন্দর ও খুলনা শিল্পাঞ্চলের শ শ পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করে। কিন্তু রোববার সেটি চোখে পড়েনি। বেলা তিন টায় যশোর-খুলনা মহাসড়কের মুড়লী মোড়ে গিয়ে যায়,সড়কে কোনো পণ্যবাহী যানবাহন নেই।
এদিকে পুলিশ শনিবার দিবাগত রাত র‌্যাব সদস্যরা শহরের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সাবিরা নাজমুল মুন্নিকে আটক করে।
শনিবার রাত ও রোববার দিনের বেলা পুলিশ, র‌্যাব ও ডিবি পুুলিশ যশোর শহর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিএনপি নেতা সুলতান আহমেদ, নূর মোহাম্মদ মশিয়ার রহমান,জসিম উদ্দিন, যুবদল নেতা সানি আহমেদ, মারুফ বিল্লাহ সানি,মশিয়ার রহমান, রাব্বি হোসেন মেহেদী, মোহাম্মদ বাবু সহ অন্তত ১০ জনকে আটক করে।
এছাড়া আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন মনিরামপুরে খানপুর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা ফারুক হোসেন, নেহালপুর ইউনিয়ন যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমান ও হরিহরনগর ইউনিয়ন যুবদল নেতা মমিনুর রহমান, বাঘারপাড়া উপজেলার দোহাকুলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাস্টার জাকির হোসন, বন্দবিলা ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক হাদিউজ্জামানসহ অন্তত ১৫জনকে আটক করে।
বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী বলেন, দেশ রক্ষার এই অবরোধ কেবল বিএনপির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটি সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। যে কারণে সাধারণ মানুষও স্বতস্ফূর্ত ভাবে তাদের যৌক্তিক কর্মসূচির প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জ্ঞাপন করেছেন।