রিজার্ভ কমলো আরও ২৮ কোটি ডলার

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও কমেছে। গত এক সপ্তাহে রিজার্ভ কমেছে ২৮ কোটি ডলার। বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত ২৫ অক্টোবর গ্রস রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৬৭০ কোটি ডলার। বুধবার (১ নভেম্বর) এটি কমে দাঁডায় ২ হাজার ৬৪২ কোটি ডলার। অর্থাৎ গত সাত দিনে বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ কমেছে ২৮ কোটি ডলার।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী রিজার্ভ এখন ২ হাজার ৬৬ কোটি ডলার। এক সপ্তাহ আগে অর্থাৎ ২৫ অক্টোবর এটি ছিল ২ হাজার ৮৯ কোটি ডলার। এই হিসাবে গত সাত দিনে নেট রিজার্ভ কমেছে ২৩ কোটি ডলার। অবশ্য প্রকৃত নেট রিজার্ভ এখন ১৭ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের নিচে বলে জানা গেছে। প্রকৃত রিজার্ভের এ তথ্য কেবল আইএমএফকে জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আগামী সপ্তাহে রিজার্ভ থেকে আরও ১০০ কোটি ডলার কমে যেতে পারে। কারণ, এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আওতাধীন দেশগুলো থেকে আমদানি বাবদ (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) ১.২১ বিলিয়ন ডলার আগামী সোমবার (৬ নভেম্বর) পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। এই দায় পরিশোধের পর দেশের রিজার্ভ নেমে দাঁড়াবে ১৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে।
গত জুলাই-আগস্ট সময়ে আকু পেমেন্টের পরিমাণ ছিল ১.২ বিলিয়ন ডলার। আর এর আগের মে-জুন সময়ের জন্য পেমেন্টে করা হয়েছিল ১.১ বিলিয়ন ডলার।
আঞ্চলিক আমদানির ক্ষেত্রে ৯টি সদস্য দেশ—বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার আর্থিক লেনদেন কভার করে আকু পেমেন্ট গেটওয়ে। প্রতি দুই মাস অন্তর এ বিল পরিশোধ করা হয়।
এদিকে রিজার্ভ বাড়ানোর অন্যতম উপাদান প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহে যে পতন দেখা যাচ্ছিল—অক্টোবর মাসে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে রফতানি আয়ে বড় ধাক্কা লেগেছে। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে টানা প্রবৃদ্ধিতে থাকা রফতানি আয় অক্টোবরে এসে বড় ধরনের হোঁচট খেয়েছে। অর্থাৎ আগের অর্থবছরের একই মাসের তুলনায় কমেছে ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
সদ্য সমাপ্ত অক্টোবর মাসে মোট পণ্য রফতানি থেকে আয় গত চার মাসের মধ্যে প্রথম ৪০০ কোটির নিচে নেমেছে।
বৃহস্পতিবার রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবির প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, অক্টোবরে মোট ৩৭৬ কোটি ২০ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে তা ৫৯ কোটি ৪৬ লাখ ডলার বা ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ কম। ২০২২ সালের অক্টোবরে ৪৩৫ কোটি ৬৬ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছিল। রফতানি আয়ের এই পরিস্থিতির মধ্যে দেশে নতুন করে শুরু হয়েছে অবরোধ-হরতাল। এছাড়াও শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোকে কেন্দ্র করে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে পোশাক খাতে। একদিকে বিরোধী দলের অবরোধ, আরেক দিকে চলছে শ্রমিকদের আন্দোলন। বেশ কিছু কারখানায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় প্রায় তিনশ’র মতো কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।
এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ মুখপাত্র মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমেরিকাসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমাদের ওভেন পোশাক রফতানি কমে গেছে। এখন বিরোধী দলের অবরোধ-হরতাল ও শ্রমিকদের আন্দোলন শুরু হয়েছে, তাতে সামনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গত এক বছরে রিজার্ভ কমেছে ৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২২ সালের ১ নভেম্বর গ্রস রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ৫৭২ কোটি ডলার। ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪ হাজার ৮০০ কোটি বা ৪৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি।