কারাবন্দী বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধেও নতুন মামলা দিচ্ছে যশোরের পুলিশ!

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ যশোর কোতয়ালি থানা পুলিশ কারাগারে থাকা বিএনপি নেতাদের নতুন করে ‘গায়েবি’ মামলার আসামি করে প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। একই মামলায় এক ব্যক্তিকে একাধিকবার আসামি করা হচ্ছে। তাছাড়া আটকের পরে মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। কোতয়ালি থানার উদ্ভট এসব কর্মকা-ে আইনজীবীরা পুলিশ কতৃক দায়েরকৃত এসব মামলায় আনীত অভিযোগগুলিকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে মতামত দিয়েছেন।
জানা যায়, কারাগারে থাকা ইদ্রিস আলীকে একের পর এক নাশকতা মামলায় আসামি করা হচ্ছে। আবার একই মামলায় মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চুকেও একাধিকার আসামি করা হচ্ছে। আবার পুলিশ আগেই আটক করে পরে এজাহার দিয়ে আদালতে প্রেরণ করছে। যশোর কোতয়ালী থানা পুলিশ এমন চাঞ্চল্যকর মামলা করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রতিটি মামলায় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট বাদীর স্বাক্ষর রয়েছে।
তবে পুলিশ গত কয়েকদিনে এমন তথাকথিত নাশকতার অভিযোগে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে একের পর এক গায়েবি মামলা দায়ের করছে, অভিযোগে বর্নিত স্থানে এ ধরণের ঘটনা ঘটেছে এমন কোন প্রমাণও পাওয়া যায়নি। দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, শাসক দলের অনুগত প্রশাসন আজ বিএনপিকে গণতান্ত্রিক আন্দোলন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে এই মামলা দায়ের করছে।
যশোর সদর উপজেলার নারাঙ্গালী গ্রামের মৃত ওসমান মুন্সীর পুত্র বিএনপি নেতা ইদ্রিস আলীকে গত শনিবার (২৮ অক্টোবর) দিবাগত রাতে কোতয়ালী থানা পুলিশ আটক করে। পরদিন রোববার (২৯ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় চাঁনপাড়া ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় তাকে এজাহারভুক্ত আসামি করে আদালতে পাঠায়। পরে আদালত তার জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করে। এরপর থেকে তিনি কারাগারেই আছেন। কারাগারে থেকেও তিনি মামলা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না।
গত মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) তালবাড়িয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ একরামুল হক বাদী হয়ে আরেকটি তথাকথিত নাশকতা মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায়ও ইদ্রিস আলীকে ৩৩ নম্বর আসামি করা হয়। বুধবার (১ নভেম্বর) নরেন্দ্রপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ নাজমুল হাছান বাদী হয়ে আরও একটি মামলা দায়ের করেন, সেই মামলায়ও ইদ্রিস আলীকে আসামি করা হয়। এই মামলায় তাকে ১২ নম্বর আসামি করা হয়। প্রতিটি মামলায় তার নাম ঠিকানা একই । প্রতিটি মামলায় বাদীর পাশাপাশি কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাকের স্বাক্ষর আছে।
ইদ্রিস আলী যেমন কারাগারে থেকে একাধিক মামলার আসামি হচ্ছেন,ঠিক একই ভাবে বিএনপি নেতা মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চুকে উপরিউক্ত তিনটি মামলায় দুইবার করে আসামি করা হয়েছে।
এ বিষয় যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো.ইসহক বলেন, কারাগারে থাকা অবস্থায় একজন ব্যক্তি কোনভাবেই কোনো ঘটনার সাথে যুক্ত থাকতে পারে না। সুতরাং কারাগারে থাকা অবস্থায় যদি কারও নামে মামলা দায়ের করা হয়, তাহলে বুঝতে বাকি থাকে না যে অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে, সম্পূর্ণ অভিযোগটি মিথ্যা কিংবা ভিত্তিহীন।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান বলেন, বিষয়টি আইনসিদ্ধ নয়। কোনভাবেই একজন ব্যক্তিকে আগে আটক করে পরে এজাহার দিয়ে তাকে আটক দেখাতে পারে না। তাছাড়া কারাগারে থাকা ব্যক্তির নামে মামলা দায়েরের ঘটনাটি মামলার অভিযোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
এ বিষয় যশোর নগর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম চৌধুরী মুল্লুক চাঁদ বলেন, আমরা সংবিধান স্বীকৃত এবং গণতান্ত্রিকভাবে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি। সেই আন্দোলন থেকে আমাদের দাবিয়ে রাখতে শাসক দলের অনুগত প্রশাসন একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করছে। আমাদের অতীত ইতিহাস বলে, এভাবে হামলা করে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারেনি। বতর্মানে জনতার এই আন্দোলন থেকেও আমাদেরকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না।
এবিষয় কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, হয়তো মিসটেক হতে পারে। কিন্তু বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি জেনে আপনাকে বলতে পারবো।