বৃষ্টিতে আগাম সবজির ক্ষতি

0

আকরামুজ্জামান ॥ ভালো নেই যশোরের সবজি চাষিরা। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে তাদের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে গেছে। যশোরের বিস্তীর্ণ মাঠের আগাম শীতকালীন সবজির ক্ষেত বৃষ্টিতে তলিয়ে যাওয়ায় এর অধিকাংশই নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন জেলার চাষিরা। চাষিরা বলছেন, বৃষ্টিতে সবজিক্ষেত নষ্ট হওয়ার কারণে এ বছর জেলায় সবজির উৎপাদন কম হবে। যা ভোক্তা পর্যায়ে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে যশোর জেলায় ৬ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন আগাম জাতের সবজির আবাদ করা হয়। এরমধ্যে রয়েছে বাঁধাকপি ৭৫০ হেক্টর, ফুলকপি ৭৩০ হেক্টর, টমেটো ৫০০ হেক্টর, পালং শাক ৩৫০ হেক্টর, মুলা ১০৫০ হেক্টর, লালশাক ৩০০ হেক্টর, সবুজশাক ২০০ হেক্টর, লাউ ২৫০ হেক্টর, কুমড়ো ৩০০ হেক্টর। বাকি জমিতে অন্যান্য জাতের সবজি রয়েছে। এসব সবজি ক্ষেতে অধিকাংশ সবজি গত শুক্র ও শনিবারের বৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছে। কৃষক বলছেন, অসময়ের বৃষ্টির কারণে তাদের অপূরণীয় ক্ষতি হওয়ায় তারা খুবই চিন্তায় পড়েছেন।
জেলার নোঙরপুর মাঠের সবজি চাষি গোলাম মোস্তফা বলেন, তাদের মাঠের অধিকাংশ বাঁধাকপি ও ফুলকপি ক্ষেতে পানি জমে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন এসব ক্ষেতে নতুন করে চাষ শুরুর পরিকল্পনা নিচ্ছে কৃষক। তিনি বলেন, বৃষ্টি এমন সময় হয়েছে যে যখন সবেমাত্র আগাম শীতকালীন সবজি বাজারে উঠতে শুরু করেছে।
কথা হয় হযরত আলী নামে আরেক চাষির সাথে। তিনি বলেন, এ বছর এমনিতে বৈরী আবহাওয়ার কারণে আমরা আগাম শীতকালীন সবজি চাষে নানা সংকট অতিক্রম করেছি। বাড়তি সার-কীটনাশক, সেচের কারণে খরচ বেড়ে যায় চাষে। তারপরও আমরা আশা করছিলাম আগাম শীতকালীন সবজি বিক্রি করে লাভবান হবো। কিন্তু ভারি বৃষ্টিতে সে স্বপ্ন কেড়ে নিয়ে গেছে। এখন নতুন করে চাষ শুরু করতে খরচ কোথা থেকে জোগাড় করবো সেই চিন্তায় আছি। তিনি বলেন, যেসব জমিতে সবজি আবাদ করা হয় সেগুলো নিশ্চিত ক্ষতির মুখে পড়েছে। বৃষ্টির পর রোদ হলেও গোড়ায় পচন ধরেছে।
সবজি চাষিরা জানান, অন্যান্য বছরে আগাম শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাজারে বেড়ে যাওয়ায় সবজির দাম নিয়ন্ত্রণ থাকলেও এ বছর তা একেবারেই উল্টো। বৈরী আবহাওয়ার কারণে এমনিতে এসব সবজি বাজারে দেরিতে আসতে শুরু করেছে। তারপর শেষ সময়ে ক্ষতির কারণে বাজারে সবজি সরবরাহ কমে আরও দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত এই মৌসুমে এতো বৃষ্টিপাত যশোরাঞ্চলে এর আগে হয়নি। মাত্র দুদিনের ব্যবধানে ১৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। হঠাৎ এমন বৃষ্টিতে প্রকৃতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশিক্ষণ) সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, গত দুই দিনের ভারি বৃষ্টিতে যশোরাঞ্চলের আগাম জাতের শীতকালীন সবজির কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে কী পরিমাণ সবজির ক্ষতি হয়েছে সেটি নিশ্চিতভাবে জানতে হলে আরও কয়েকদিনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, সবজির ক্ষতি হলেও আমনের জন্য এ বৃষ্টি বড় ধরনের উপকার বয়ে এনেছে। আশা করা যায় কৃষক নতুন করে সবজির পরিচর্যা করে তারা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।