ভারী বৃষ্টিপাতে জনদুর্ভোগ যশোরে

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ যশোরে ভারী বৃষ্টিপাত যেমন স্বস্তি এনে দিয়েছে, ঠিক তেমনই জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। কৃষি বিভাগ ফসলের জন্য এই বৃষ্টিকে আর্শীবাদ বললেও কৃষক বলছেন ভিন্ন কথা । এদিকে টানা বৃষ্টিতে যশোর পৌরসভার নি¤œাঞ্চলে ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। আবার শহরে শ্রমজীবী মানুষ বিপাকে পড়েছেন।
গত মঙ্গলবার দিনের বেলা থেকে সামান্য পরিমাণে বৃষ্টি শুরু হয়। এরপর বুধবার থেকে ভারী বৃষ্টিতে পরিণত হয়। যশোর বিমানবন্দর নিয়ন্ত্রিত আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়,  বৃহস্পতিবার সকাল ৬ টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত ২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়। আবার বুধবার সকাল ৬ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৩৫ মিলিমিটার।
টানা বৃষ্টিতে পৌর এলাকার শংকরপুর ছোটনের মোড়,দুলালের মোড়,মেডিকেল কলেজ মোড়,বেহারাপাড়া,বেজপাড়া আনসার ক্যাম্প,সিটি কলেজপাড়া,খড়কি এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। শংকরপুরের বাসিন্দা রায়হান বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই আমার এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। সেখানে গত তিন দিনের ভারী বর্ষণে এই এলাকার অবস্থা কতটা নাজুক হতে পারে সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। তিনি বলেন,উপরোক্ত এলাকার মধ্যে কোথাও হাটু পানি আবার কোথাও কোমর পানি জমে আছে। অনেক পরিবারের রান্না খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকে এলাকায় পানি বন্দি হয়ে পড়েছেন। শংকরপুরের এই বাসিন্দা বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে ব্যাপক জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হলেও পৌরসভার দায়িত্বশীল কোনো কর্তাব্যক্তি এলাকায় আসেননি। কিংবা পানি অপসারণের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেননি।
এদিকে রেল গেট এলাকার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, রেলগেট সংলগ্ন,ষষ্ঠিতলা বুনো পাড়ায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন,তার বাড়িতে হাটু পানি জমে আছে। রেল গেট থেকে রেল বাজার পর্যন্ত সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। তেঁতুলতলা এলাকার চোরমারা দিঘীরপাড়স্থ আদর্শ পাড়া জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দিনের বেলায় শহরের গুরুদাস বাবু লেনের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সামনে ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
আবার বৃষ্টিতে শহরের শ্রমজীবী মানুষ বেশ বিপাকে পড়েছেন। বিশেষ করে রিকসা,ইজিবাইক চালকরা। তারা বলছেন রাস্তায় লোকজন নেই তাদের ঠিক মত ভাড়া হচ্ছে না। বৃষ্টি ভিজে কোন রকম মালিকের ভাড়া টাকা উঠছে।
এদিকে টানা বৃষ্টি যশোরের কৃষি বিভাগ আর্শীবাদ হিসেবে নিলেও কৃষকরা তা পুরোপুরি সেভাবে নিচ্ছেন না। তারা বলছেন, অতিবৃষ্টিতে ফসলের ক্ষেতের পোকা মাকড়ের উপদ্রব ঠেকানো যায় না। সেটি সবজি ও ধান উভয় ক্ষেতের। টানা বৃষ্টিতে বালাইনাকশ স্প্রে করা যায় না।
মনিরামপুরের ঝাঁপা গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম বলেন, আমনের ক্ষেতে বিভিন্ন পোকা মাকড়ের উপদ্রব দেখা দিয়েছে । বিশেষ করে খোলপচা ও ধানের পাতা মোড়ানো পোকা ধান গাছের পাতার রস চুষে সাদা করে ফেলছে। যার ফলে নিচের অংশে পচন ধরছে। কিন্তু টানা বৃষ্টির কারণে ধান ক্ষেতে বালাই নাশক স্প্রে করতে পারছি না। ফলে ধানের ক্ষতির পরিমাণ বেড়েই চলেছে।
আবার চুড়ামনকাটি এলাকার কৃষক আমিন উদ্দিন বলেন, টানা বৃষ্টিতে সজবি ক্ষেতে পোকা মাকড়ের উপদ্রব হচ্ছে। বিশেষ করে বেগুনের ও পটলের ক্ষেতে এক ধরণের অতি ক্ষুদ্র পোকা আক্রমণ করে। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে ক্ষেতে বালাই নাশক স্প্রে করা যাচ্ছে না। আবার আগাম রবি শস্য চাষের প্রস্তুতি নিয়েও জমি প্রস্তুত করার কাজে নামতে পারছি না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হক বলেন, এখনো পর্যন্ত যে বৃষ্টি হয়েছে। সেটি সামগ্রীভাবে ফসলের জন্য আর্শীবাদ। বিশেষ আমন ধানের ক্ষেত্রে এই ধরণের পানি বড় আর্শীবাদ । তাছাড়া এই বৃষ্টি পরিবেশ ও প্রতিবেশ জন্যই খুবই দরকারি। বিশেষ এই আগামী বোরো মৌসুমে পানির স্তর স্বাভাবিক রাখতে এই বৃষ্টির পানি । তবে এই বৃষ্টি যদি আগামী ৩-৪ দিন বার তারও বেশি স্থায়ী হয় সেক্ষেত্রে সবজির জন্য কিছু ক্ষতি বয়ে আনতে পারে। বিশেষ করে যে সকল কৃষক আগাম রবি শষ্যর চাষের জন্য প্রস্তৃতি নিয়ে রেখেছেন। সেক্ষেত্রে কিছু সমস্যা সৃষ্টি হবে। আবার এই মুহুর্তে যদি কোন কৃষক কোন ধরণের ফসলের বিজ রোপন করে থাকেন,তাহলে টানা বৃষ্টিতে কিছু ক্ষতির শিকার হতে পারেন।