সৌদি আরবে গৃহকর্মীর রহস্যজনক মৃত্যু : রফিকুল দালালের শাস্তি দাবি

0

আসিফ কাজল,ঝিনাইদহ ॥ সংসারে সচ্ছলতা ও স্বামী সন্তানের ভবিষ্যতের চিন্তা করে গৃহকর্মীর চাকরি নিয়ে সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছিলেন ছাবিনা খাতুন (২৪) নামে এক গৃহবধূ। কিন্তু তার কপালে সুখ সয়নি। সৌদি আরবে যাওয়ার তিন দিনের মাথায় তার রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। ছাবিনার মৃত্যু নিয়ে লোকমুখে নানা কথা শোনা গেলেও কী কারণে তিনি বহুতল ভবন থেকে পড়ে মারা গেলেন তা নিয়ে রহস্য থেকেই যাচ্ছে।
ছাবিনা খাতুন ঝিনাইদহের সদর উপজেলার সাগান্না ইউনিয়নের বাথপুকরিয়া গ্রামের রুবেল হোসেনের স্ত্রী। দেশে তার দুই সন্তান রয়েছে। অনেকেই বলছেন পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে তিনি নিজের সম্ভ্রম বাঁচাতে ৮ তলার ভবন থেকে লাফ দেন।
সরজমিন তথ্য নিয়ে জানা যায়, গত ২২ সেপ্টেম্বর বাথপুকুরিয়া গ্রামের আব্দুল খালেকের পালিত ছেলে দালাল রফিকুলের মাধ্যমে সৌদির উদ্দেশ্যে পাড়ি জামান ছাবিনা খাতুন। ঢাকার মগবাজার এলাকার তিশা ইন্টারন্যাশনালের মালিক ফারুক হোসেন ছাবিনাকে সৌদি আরবে যেতে সহায়তা করেন। ২৪ সেপ্টেম্বর সৌদির মালিকের বাসায় গিয়ে ছাবিনা দালালের কথার সাথে কাজের কোনো মিল পাননি। পরিবারের ধারণা মালিকের কু-প্রস্তাব বা পাশবিক নির্যাতনে রাজি না হওয়ায় ছাবিনাকে ৮ তলা ভবন থেকে ফেলে দেওয়া হয়।
স্বামী রুবেল হোসেন জানান, দালাল রফিকুল আমাদের বলেছিলেন, মোটা অংকের বেতন, তিন বেলা ঠিক মত খাবার ও আকামা সব কিছুই সৌদির মালিক করে দিবেন। কিন্তু খাবার, মালিকের ব্যবহার ও বেতন কোনো কিছুই ঠিকঠাক ছিল না বলে মৃত্যুর আগে ছাবিনা খাতুন তার পরিবারকে জানান। ছাবিনা তার স্বামীর কাছে জানান, সৌদিতে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছে দালাল রফিকুল। ফলে গত ২৬ সেপ্টেম্বর সাবিনা খাতুন বহুতল ভবন থেকে পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করে দালাল রফিকুল।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, দালাল রফিকুল এলাকার সহজ সরল কম বয়সী মেয়েদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে অর্থ আদায় করেন। কিছু দিন আগে একই এলাকার হাসান মিয়ার মেয়ে হাসি বেগম দালাল রফিকুলের খপ্পরে পড়ে সৌদি আরব শারিরীক নির্যাতন ও সর্বস্ব হারিয়ে এখন সন্তান নিয়ে দিশেহারা। হাসি বেগম গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, দালাল রফিকুল আমাকে ভালো কাজের প্রলোভন দেখিয়ে সৌদি আরব নিয়ে যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে মালিকের অনৈতিক প্রস্তাব ও খাবারের কষ্টসহ বিভিন্ন অমানুষিক কষ্ট দিতে থাকেন। পরে এলাকায় জানাজানি হলে সাগান্না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হকের মধ্যস্থতায় আমাকে দেশে ফিরিয়ে আনেন দালাল রফিকুল।
হাসি বেগমের ভাষ্যমতে, তাকে দেশে আনতে ৫০ হাজার টাকা নেয় দালাল রফিকুল। হাসি বেগম আরও জানান, সৌদি আরবের ওই এলাকায় আরও ৫/৬ জন মেয়ে আছেন যারা দালাল রফিকুলের মাধ্যম গিয়ে এখনো নিয়মিত নির্যাতিত হচ্ছেন। এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও বাথপুকুরিয়া গ্রামের আকবর হোসেন জানান, বিদেশে নারী কর্মী পাঠিয়ে রফিকুলের নির্যাতনের বিষয় নতুন না। এর আগেও বিভিন্ন মেয়েদের নির্যাতনের বিষয়ে সালিশ বিচার করেছি। কিন্তু দালাল রফিকুল তার অভ্যাস পরিবর্তন হয়নি।
এ বিষয়ে দালাল রফিকুল ইসলাম জানান, ছাবিনা সৌদি আরবে যাওয়ার তিন দিনের মাথায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি পানির পাইপ দিয়ে নামতে গিয়ে নিচে পড়ে মারা যান। তবে তার ওপর কোনো পাশবিক নির্যাতনের তথ্য ময়নাতদন্তের রিপোর্টে নেই বলে তিনি দাবি করেন। তিনি দাবি করেন ছাবিনা তার আত্মীয়। সৌদি আরব যেতে তার কাছ থেকে তেমন কোনো টাকা পয়সা গ্রহণ করা হয়নি। মাত্র দেড় লাখ টাকায় ছাবিনাকে সৌদি আরবে পাঠানো হয়। এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানা জানান, সৌদিতে ছাবিনা নামে কোনো নারীর মৃত্যুর খবর তার কাছে নেই। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।