বড় মাছ মজুত হচ্ছে খুলনায় যশোরে সরবরাহ ছোট ইলিশ

0

শেখ আব্দুল্লাহ হুসাইন ।। ভরা মৌসুমে ভালোমানের বড় ইলিশ মজুত হচ্ছে খুলনার ফিস প্রসেসিং কোম্পানিগুলোয়। যশোরের বড়বাজার মাছবাজারে আসছে ছোট সাইজের ইলিশ। অল্প পরিমাণ যা বড় ইলিশ যশোরে আসছে তার দাম মোটেও কম নয়। তবে ছোট সাইজের নিম্নমানের ইলিশ কিছুটা কম দামে পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে,পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে অল্প সময়ে ইলিশ চলে যাচ্ছে ঢাকায়। বর্তমানে দীর্ঘদিনের ব্যবসায়ে লেনদেনের আষ্টেপৃষ্ঠে যারা জড়িয়ে আছেন সেই উপকূলীয় জেলা-উপজেলার আড়তদাররাই ইলিশ পাঠাচ্ছেন যশোর বড়বাজার মাছবাজারে।
অসময়ে বেশি দামে বিক্রির আশায় এতদ্বঞ্চলে খুলনার ফিস প্রসেসিং কোম্পানিগুলো উপকূলীয় বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, চাঁদপুর ও বরগুনা জেলা থেকে ভালোমানের বড় সাইজের বাছাই করা ইলিশ কিনে তাদের স্টোরেজে মজুত শুরু করছে। ৮শ গ্রাম ওজনের ওপরের সাইজের ইলিশ মাছ কিনে নিচ্ছে মাছ কোম্পানিগুলো। এর ফলে যশোরে আসছে নিম্নমানের ছোট ইলিশ।
পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে মাত্র তিন/সাড়ে তিন ঘণ্টায় উপকূলীয় জেলা-উপজেলা থেকে ইলিশ চলে যাচ্ছে ঢাকায়। ওই অঞ্চলের মৎস্য ব্যবসায়ীরা রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে নগদ মূল্যে ও ৪০ কেজির মণ হিসেবে ইলিশ বিক্রি করে দিনে দিনে এলাকায় ফিরে যেতে পারছেন, তেমন কোনো বাড়তি খরচ লাগছে না তাদের।
আর ওই ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন বাকিতে ইলিশ বিক্রি করে, দাদন নিয়ে, ৪২ কেজির মণ হিসেবে ও বিক্রয়লব্ধ টাকা লেনদেনে জড়িয়ে পড়ার কারণে যশোরে এখনও মাছ সরবরাহ করে চলেছেন। তবে পদ্মা সেতুর কারণে রাজধানীতে অল্প সময়ের পরিবহন সুবিধা পাওয়ায় তারা এখন আগের থেকে যশোরে অনেক পরিমাণ মাছ সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। আর সরবরাহ কম থাকায় যশোরে ইলিশের দাম কমছে না।
যশোরের বড়বাজার মাছবাজারের খুচরা বিক্রেতা এরশাদ আলী জানান, তিনি গতকাল শুক্রবার ১ কেজির সামান্য একটু ওপরের সাইজ ইলিশের কেজি ১৭শ টাকা, ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ১৬শ টাকা, ৬/৭শ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ১৩শ টাকা ও ৩টায় কেজি ইলিশ ৮শ টাকায় বিক্রি করেছেন। এসব নদীর মিষ্টি পানির ইলিশ।
তবে আরেক খুচরা বিক্রেতা মো. শাহআলম জানান, তিনি সাগরের নোনা পানির ৭শ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ১১শ টাকা, ৩টায় কেজি ইলিশ ৮শ টাকা ও ৫/৬ টায় কেজি ইলিশ ৪/৫শ টাকায় বিক্রি করেছেন।
স্থানীয় আড়তদার আলহাজ পিয়ার মুহাম্মদ এ প্রতিবেদককে জানান, বর্তমানে যশোর বড়বাজার মাছবাজারে ছোট ইলিশের সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে। ৮শ গ্রাম ওজনের ওপরের সাইজের ভালোমানের ইলিশ চলে যাচ্ছে খুলনার ফিস প্রসেসিং কোম্পানির মজুতঘরে। অফসিজনে বেশি দামে সেগুলো বাজারে পাওয়া যাবে।
অপরদিকে, বছরের ৩৬৫ দিনের ৩২৭ দিনই ইলিশ ধরার ক্ষেত্রে সরকারের নিষেধাজ্ঞা জারি থাকে। মাত্র ৩৮দিন রসনাপ্রিয় বাঙালির ভাগ্যে জোটে ইলিশ। এরপরও পদ্মা সেতুর সুবিধার কারণে বরিশাল ভোলা, বরগুনা ও পটুয়াখালীর মৎস্য ব্যবসায়ীরা ইলিশ পাঠিয়ে দিচ্ছেন রাজধানীতে।
মৎস্য মন্ত্রণালায়ের সূত্রে জানা যায়, মা ইলিশকে নির্বিঘ্নে ডিম ছাড়ার সুযোগ করে দিতে আগামী ১২ অক্টোবর থেকে ২২ দিন ইলিশ ধরা ও বিক্রি নিষিদ্ধ থাকবে। যদিও উপকূলীয় ম্যৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দের অভিমত মা ইলিশের ডিম ছাড়ার সময় পিছিয়ে দেওয়ার । কারণ এই ২২ দিনে ইলিশের পেটে ডিম থাকে। গত বছরও নিষিদ্ধ সময়ের পরেও বাজারে প্রচুর ডিমওয়ালা ইলিশ বিক্রি হতে দেখা গেছে। এতে করে সরকারের মৎস্যসম্পদ রক্ষার পরিকল্পনায় বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
ডিম ছাড়ার পর জাটকা ইলিশের পরিপূর্ণতা আনতে সরকার আবার আগামী ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুুন পর্যন্ত আট মাস বা ২৪০ দিন ২৫ সেন্টিমিটার লম্বা ইলিশ ধরার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরবর্তীতে বঙ্গোপসাগরে মৎস্য সম্পদরক্ষায় ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই এই ৬৫ দিন সবধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। অর্থাৎ তিন দফায় বছরের ৩২৭ দিনই ইলিশ ধরায় সরকারের নিষেধাজ্ঞা জারি থাকে।
এছাড়াও জাটকা সংরক্ষণে বিভিন্ন নদ-নদীর অন্তত ৪শ কিলোমিটার এলাকায় ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি থাকে।