উৎপাদন খরচের চেয়ে বাজারমূল্য কম মনিরামপুরে সোনালী আঁশখ্যাত পাট এখন কৃষকের গলার ফাঁস হয়ে দেখা দিয়েছে

0

মজনুর রহমান,মনিরামপুর (যশোর)॥ মনিরামপুরে বর্তমান বাজারমূল্য কম থাকায় পাট নিয়ে কৃষকরা পড়েছেন বিপাকে। একমণ পাট উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয় প্রায় দুই হাজার টাকা। কিন্তু বর্তমান বাজারে পাট বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ১৫ থেকে ১৭শ টাকা। ফলে সোনালী আঁশখ্যাত পাট এখন কৃষকের গলায় ফাঁস হয়ে দেখা দিয়েছে। আর এমনটিই জানা গেছে উপজেলার বিভিন্ন পাট চাষি ও ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে মনিরামপুর উপজেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় পাঁচ হাজার দুই শ হেক্টর জমি। এবার মৌসুমের শুরুতে প্রতিকূল আবহাওয়া বিরাজ করায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে চাষ করা হয় পাঁচ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে। কিন্তু পাট কাটার সময় কাঙ্খিত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পানির অভাবে পচাতে হিমশিম খেতে হয়। তবে মৌসুমের শুরুতে পাটের বাজার মূল্য ছিল মণপ্রতি আড়াই থেকে দুই হাজার সাত শ টাকা। ফলে কৃষকরা মৌসুমের শুরুতে পাট বিক্রি করে বেশ লাভবান হন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে হঠাৎ করেই পাটের বাজার দর পড়ে যাওয়ায় কৃষকরা পড়েছে মহাবিপাকে।

হালসা গ্রামের কৃষক বাবর আলী এবার পাট চাষ করেন পাঁচ বিঘা জমিতে। বীজ, সার, কীটনাশক, শ্রমিকের মজুরি, জমিসহ সব মিলিয়ে একমণ পাঠ উৎপাদন করতে এবার তার খরচ হয়েছে প্রায় দুই হাজার টাকা। কিন্তু বর্তমান তিনি বাজারে বিক্রি করেছেন ১৬ থেকে ১৭শ টাকা মণ। প্রতিমণে চার থেকে পাঁচ শ টাকা লোকসান হয়েছে তার। আবার হাজরাকাটি গ্রামের কৃষক জামাল হোসেন তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করে তিনি গত সপ্তাহে বিক্রি করেছেন এক হাজার ছয় শ টাকা মণ। পারখাজুরা গ্রামের চাষি ফজলুর রহমান, টুনিয়াঘরা গ্রামের বজলুর রহমানসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকের সাথে আলাপ করে জানা যায় হঠাৎ করে বাজার দর কমে যাওয়ায় তারা এখন পাট নিয়ে পড়েছে মহাবিপাকে।
পৌর শহরসহ উপজেলার চিনাটোলা, নেহালপুর, ঢাকুরিয়া, কুয়াদা, কাশিমনগর, নেঙ্গুড়াহাট বাজার ঘুরে দেখা যায় এ সব বাজারে বর্তমান প্রতিমন পাট বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ছয় শ থেকে এক হাজার সাত শ টাকায়। পৌর শহরের পাট ব্যবসায়ী মোকতার আলী বলেন, পাটের গুনগত মানের উপর নির্ভর করে বাজার দর কম বেশি হয়। তবে বর্তমান পাটকল গুলোতে ক্রয় চাহিদা কম থাকায় হঠাৎ করেই বাজার দর কমে গেছে। অপর ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান দোলন জানান, বাজার দর হঠাৎ করে পড়ে যাওয়ায় এবার বেশি পরিমান পাট কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার বলেন, মৌসুমের শেষ পর্যায়ে এবার পাটের দাম কমে যাওয়ায় কৃষকরা বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।