আ.লীগের দু পক্ষ আয়োজনের অনুমতি চেয়েছে, বলুহ মেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ বাংলা সনের ভাদ্র মাস এলেই উপজেলার হাজরাখানা গ্রামসহ গোটা উপজেলাতে শুরু হয়ে যায় উৎসবের আমেজ। এই মাসের শেষ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হবে ঐতিহ্যবাহী পীর বলুহ মেলা। তাই মেলাকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের কর্মযজ্ঞ শুরু হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে মেলা পরিচালনার জন্যে ক্ষমতাসীন দলের দুইপক্ষ প্রশাসনের কাছে দুটি আবেদন করেছে। দুইপক্ষের রশি টানাটানিতে মেলার ভাগ্য শেষমেষ কোথায় গিয়ে থামে তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীসহ স্থানীয়রা।
বছর ঘুরে আবারও এলো ভাদ্র মাস। ভাদ্র মাস আসা মানেই উপজেলার হাজরাখানা গ্রাম তথা গোটা উপজেলাতে সাড়া ফেলে বলুহ মেলা। বিগত বছরগুলোর মত এবারও তার কোন ব্যতিক্রম ঘটেনি। হাজরাখানা গ্রামবাসী মেলার জন্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে শুরু করেছেন। বলুহ মেলার প্রধান ও প্রথম আকর্ষণ থাকে কাঠের তৈরি বাহারি সব ফর্নিচার। ভাদ্র মাস আসার অন্তত দুই তিন মাস আগে থেকে চৌগাছাসহ পাশ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা -উপজেলার ফার্নিচার ব্যবসায়ীরা তাদের মালামাল তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। নানা রং আর ডিজাইনের ফার্নিচার তৈরি করে তারা গুদামজাত করেন আর মেলা শুরু হলে তা বিক্রির জন্যে নিয়ে আসেন।
গতকাল সরেজমিন বলুহ মেলার স্থান হাজরাখানা গ্রামে দেখা যায়, গ্রামের পুরুষ, নারী, শিশুসহ সব বয়সের মানুষের মাঝে এক ধরনের উৎসবের আমেজ। কথা হয় গ্রামের মুদি ব্যবসায়ী মো. মিঠুর সাথে। তিনি বলেন, বলুহ মেলার সময় এলেই সকলের মাঝে আনন্দ সৃষ্টি হয়। মেলায় অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে বেচাকেনা বেশি হয়। সে কারণে আমরা মেলা শুরুর অপেক্ষায় আছি। কলেজ  শিক্ষার্থী মো. রাব্বি বলেন, ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি এই মেলা। বলুহ মেলা মানে অন্যরকম এক আনন্দ। তাই ওই দিনটির অপেক্ষায় আছি।
গ্রামের বাসিন্দা আব্দার রহমান বলেন, বলুহ মেলা হাজরাখানা বা গোটা চৌগাছাবাসীর জন্যে গৌরবের। এই সময়টা এলে দেশের বিভিন্ন জেলা -উপজেলার মানুষের আগমন ঘটে গ্রামটিতে। এটি আমাদের জন্যে বড় একটি পাওয়া।
গৃহবধূ ইসমতারা বলেন, মেলা আসলে ব্যস্ততা বেড়ে যায়। যে কয়দিন মেলা থাকে সে কয়দিন অনেক আত্মীয়স্বজন আসেন। সকলে মিলে উৎসব করি।
একটি সূত্র জানায়, বলুহ মেলাতে হাজারও মানুষের আগমন ঘটে। বসে হরেক রকমের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সে কারণে মেলায় লাখ লাখ টাকা আয় হয়। যুগযুগ ধরে চলে আসা এই মেলাতে যে রোজগার হয়েছে তার সঠিক কোন হিসেব নেই। যার কারণে মেলার সময় আসলেই মেলা পরিচালনায় হুমড়ি খেয়ে পড়েন অনেকে। এ বছরও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ইতোমধ্যে মেলা পরিচালান জন্যে ক্ষমতাসীন দলের দুটি পক্ষ পৃথকভাবে প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছে। একটি পক্ষ হচ্ছে নারায়নপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও হাজারাখানা গ্রামের বাসিন্দা শাহিনুর রহমান শহিন (আহবায়ক) ও একই গ্রামের বাসিন্দা সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামন মিলন (সদস্য সচিব)। অপরপক্ষ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক আবুল হোসেন (আহবায়ক) এবং রওজা শরিফ কমিটির সভাপতি আশাদুল ইসলাম (সদস্য সচিব)।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিনুর রহমান শাহিনের কাছে জানার জন্যে মোবাইল ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেন নি। তবে সদস্য সচিব ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামন মিলন বলেন, মেলা পরিচালনার জন্যে প্রশাসনের কাছে দু’পক্ষ আবেদন করেছি। এছাড়া আর বেশি কিছু আমার বলার নেই। অপরপক্ষের আহবায়ক আবুল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেলা পরিচালনার জন্যে আমরা এমপি মহোদয়ের ডিও লেটার নিয়ে গত মাসের ৩০ তারিখে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছি। অনুমতি পেলে গ্রামবাসীকে সাথে নিয়ে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে মেলা সম্পন্ন করা হবে আমাদের মূল কাজ।