চৌগাছায় বাড়ছে ড্রাগন চাষ

0

এম. এ. রহিম, চৌগাছা (যশোর) ॥ লাভজনক হওয়ায় চৌগাছায় ড্রাগন চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। বর্তমানে উপজেলার ফলের দোকান থেকে শুরু করে ছোট-বড় বাজার, এমনকি রাস্তার ধারে বসেও সুস্বাদু এই ড্রাগন ফল বিক্রি হতে দেখা যায়। চাষিরা বলছেন বিঘাপ্রতি সব খরচ বাদে দুই লাখ টাকা লাভ হয়।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের তথ্য কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম জানান, ৪৫ হেক্টর জমি থেকে বর্তমানে উপজেলায় ড্রাগন চাষের জমি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২০ হেক্টরে। যাতে ড্রাগন উৎপাদন হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৪শ মেট্টিক টন। ভালো ফলন ও লাভজনক হওয়ায় নতুন নতুন চাষি তৈরি হচ্ছেন। চাষে খরচ কম ও লাভ বেশি হওয়ায় এর চাষ বাড়ছে। উপজেলায় গত কয়েক বছরে ড্রাগন ফলের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৩০ গুণ।
জানা যায়, উপজেলার স্বরুপদাহ ইউনিয়নের আড়সিংড়া গ্রামের শিক্ষিত যুবক ইসমাইল হোসেন প্রথমে নিজ উদ্যোগে এই বিদেশি ফলের চাষ শুরু করেন। পরে মানসম্মত উদ্যান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু হয়। ধীরে ধীরে এর ব্যাপ্তি বাড়তে থাকে। অন্যান্য ফসলের চেয়ে লাভ জনক হওয়ায় ধীরে ধীরে চাষিরা ঝুঁকেছেন ড্রাগন চাষের দিকে। উদ্যোগী হয়েছেন সরকারও।
কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা চাঁদ আলী বলেন, আগে কৃষি সম্প্রসারণ অফিস থেকে চাষিদের ফল চাষের জন্য উৎসাহিত করা হতো। এখন বেশির ভাগ চাষিই নিজ উদ্যোগে ড্রাগনের চাষ করছেন। তবে পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। আগামীতে ড্রাগনের চাষ আরও বাড়বে বলে আশা করছেন এই কর্মকর্তা।
চাষি বিএম বাকী বিল্লাহ জানান, উপজেলার পাতিবিলা, হাকিমপুর, নারায়ণপুর, স্বরুপদহ ও জগদিশপুর ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি ড্রাগন ফলের চাষ হচ্ছে। তিনি আরও জানান, তার ১০ বিঘা জমিতে ড্রাগনের আবাদ রয়েছে। এ বছর নতুন করে দুই বিঘা জমিতে বাগান করেছেন। নতুন বাগানে বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ৪ লাখ টাকা। সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে এক বিঘা জমি থেকে প্রথম বছরেই ৪ লাখ টাকার ড্রাগন বিক্রি করা যায়।
সিংহঝুলি গ্রামের প্রবাসী আল হেলাল মিঠু বলেন, উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের মাঠসহ বিভিন্ন এলাকায় ২০ বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ করেছেন তিনি। তার নতুন পুরাতন মিলে ২০ বিঘা জমিতে ড্রাগন বাগান রয়েছে। পুরাতন বাগানে খরচ বাদ দিয়ে বছরে কমপক্ষে ২ লাখ টাকা লাভ হয়। সে হিসেবে এবছরে ২০ বিঘা জমিতে ৪০ লাখ টাকা লাভ হবে। এ বছরে মানভেদে ড্রাগনের পাইকারি বাজার দর ৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি।
উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের ড্রাগন চাষি বাদশা মিয়া, পাতিবিলা গ্রামের আইনাল ম-লের ছেলে আক্তার হোসেন, নাসির উদ্দিনের ছেলে রুবেল হোসেন, মাঠচাকলা গ্রামের জাহিদ হোসেন, খড়িঞ্চা নওদাপাড়া গ্রামের মামুন হোসেন জানান, বাজারে এই ফলের ব্যাপক চাহিদা, তাই ফল বিক্রি উপযোগী হলে ব্যাপারি ক্ষেতে এসে কিনে নিয়ে যায়। এ জন্য বিক্রি করতে কোনও বাড়তি ঝামেলা নেই। ড্রাগনে পোকার আক্রমণ কম। এ সময়ে ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করলে গাছকে রক্ষা করা যায়। গাছে ফল ধরার পর দেড় মাস পরেই বিক্রি করার উপযোগী হয়। অন্য যে কোনও ফসলের চেয়ে ড্রাগন একটি লাভজনক এবং ঝুঁকিমুক্ত চাষ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোসাব্বির হুসাইন বলেন, ড্রাগন চাষ লাভজনক হওয়ার কারণে প্রতি বছরই চাষ বাড়ছে। চাষিরা যাতে এ ধরনের ফসলের চাষে আরও আগ্রহী হয়ে ওঠেন সে লক্ষ্যে কৃষি অফিস নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।