পানির অভাবে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে বিপাকে যশোরের চাষিরা

0

আকরামুজ্জামান ॥ যশোরাঞ্চলে পাটের ভালো ফলন হলেও গত কয়েক বছর পানির অভাবে জাগ দিতে না পেরে ভোগান্তিতে পড়েন চাষিরা। এবারও সেই পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন পাট চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে যশোর জেলায় ২৫ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। যা গত মৌসুমের চেয়ে ১০০ হেক্টর জমি বেশি। ধানের চেয়ে পাটের দাম অপেক্ষাকৃত বেশি ও লাভজনক হওয়ায় কৃষক দিন দিন পাট চাষের দিকে ঝুঁকছেন। কিন্তু সমস্যা দেখা দিচ্ছে পাট কাটার উপযুক্ত সময়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় জাগ দেওয়া নিয়ে। ইতোমধ্যে জেলার অধিকাংশ জায়গায় পাট কাটা শুরু হয়েছে। কিন্তু মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হলেও তা পাট জাগ দেওয়ার জন্য মোটেও পর্যাপ্ত নয়। এমন অবস্থায় কৃষক ক্ষেতের পাট কাটতে সাহস পাচ্ছেন না বলে তারা জানান।
জেলার বাঘারপাড়া উপজেলার হাবুল্যা এলাকার চাষি মোহাম্মাদ আলী বলেন, গত কয়েক বছর ধরে পাটের ভালো ফলন হলেও শেষ সময়ে এসে পানি সংকটে পড়ে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। যেকারণে পাটের ন্যায্যমূল্যে থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন তারা। এবারও সেই আগের অবস্থা বিরাজ করছে। শ্রাবণ মাস এলেও এখনও যশোরাঞ্চলে কাঙ্খিত বৃষ্টির দেখা মিলছে না। গ্রামের খাল-বিল, পুকুর-জলাশয়, ডোবানালায় পানি জমছে না। এ অবস্থায় পাট কাটার উপযুক্ত সময় চলে আসলেও তারা পাট কেটে জাগ দিতে পারছেন না বলে জানান তিনি।
একই উপজেলার বন্দবিলা ইউনিয়নের রোস্তম মোল্লা বলেন, পাটের ভালো দাম পেতে হলে ভালো পানিতে পাট জাগ দিতে হয়। এতে পাটের ভালো রং পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের এলাকার চাষিরা পাটের ভালো ফলন করলেও শুধুমাত্র পানির অভাবে তা জাগ দিতে না পারায় মান হারাচ্ছে। যেখানে সেখানে কাঁদাপানিতে পাট জাগ দিয়ে রং ও মান নষ্ট করে ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তিনি বলেন, এবছর বিস্তীর্ণ মাঠে পাট ক্ষেত রয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পাটের গঠনও ভালো হয়েছে। কিন্তু পানির অভাবে তা জাগ দিতে পারছেন না বলে তিনি জানান।
একই এলাকার চাষি ফিরোজ হাসান বলেন, অনেকে পাট কেটে পাশেই নদীতে নিয়ে কোনোরকম জাগ দিচ্ছেন। তবে সে ক্ষেত্রে তাদেরকে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। তিনি বলেন, এমনিতে পাটের বীজ, সার, কীটনাশকের দামের পাশাপাশি শ্রমিক খরচ আগের চেয়ে কয়েকগুন বেড়েছে। এ অবস্থায় ক্ষেতের পাট দূর-দূরান্ত নদী ও খালবিলে নিয়ে জাগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এখন একমাত্র বৃষ্টিই তাদের ভরসা হয়ে দেখা দিয়েছে বলে জানান।
আবু বকর নামে আরেক চাষি বলেন, পানি সংকটের এ বিষয়টির কথা চিন্তা করে সরকার রিবন রেটিং পদ্ধতির মাধ্যমে পাটের ছাল উঠানোর প্রকল্প হাতে নেয় বেশ কয়েক বছর আগে। এজন্য আমাদেরকে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। কিন্তু এখন সেই পদ্ধতি আর নেই। সরকারের কোটি কোটি টাকার প্রকল্প কৃষকের কোনও কাজেই আসেনি। তিনি বলেন, সোনালী আঁশ পাটের সুদিন ফিরিয়ে আনতে হলে সরকারকেই এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক (প্রশিক্ষণ) সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, পানি স্বল্পতার কারণে যশোরাঞ্চলের পাট চাষিরা বেশ কয়েক বছর ধরে ভোগান্তির শিকার হয়ে আসছেন। জলবায়ূর বিরূপ প্রভাবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এ সংকট দিন দিন প্রকট হচ্ছে। এ অবস্থায় কৃষককে বেগ পেতে হচ্ছে ঠিক। তবে আশা করা যায় শ্রাবণে পর্যাপ্ত বৃষ্টি নামলে এবছর সে সংকট কেটে যাবে।