বাল্যবিয়ের কারণে শিক্ষার্র্থী শূন্য মহাকাল বিসিসি দাখিল মাদরাসা

0

নজরুল ইসলাম মল্লিক, অভয়নগর(যশোর)॥ অভয়নগরে বাল্য বিয়ের কারণে মহাকাল বিসিসি মোজাদ্দেদিয়া মহিলা দাখিল মাদরাসার শিক্ষার্থী শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। ওই প্রতিষ্ঠানে সম্প্রতি ১৭ জন শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়।
মাদরাসার সুপার আ ন ম আব্দুল হক শিকদার কাজী সেজে মাদরাসা পড়ুয়াদের বাল্যবিয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
মহাকাল বিসিসি মোজাদ্দেদিয়া মহিলা দাখিল মাদরাসার ২০জন শিক্ষার্থী ২০২৩ সালে দাখিল পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের জন্যে রেজিস্ট্রেশন করে। এর মধ্যে থেকে ১১ জন শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়। এছাড়াও ২০২৪ সালে দাখিল পরীক্ষায় অংগ্রহণ করবে ২২ জন। তার মধ্যে থেকেও কিছুদিন আগে ১০ শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে গেছে বলে জানা যায়। মাদ্রাসার সুপার আ ন ম আব্দুল হক শিকদার চেঙ্গুটিয়া ১ নং ওয়ার্ডের কাজী। তিনি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের সচেতন না করে বরং তাদের বাল্যবিয়ে দিচ্ছেন।
সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের মার্চ মাসে যশোর জেলার বাল্যবিয়ে মুক্ত ঘোষণা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে যশোরের অভয়নগর উপজেলাকে বাল্যবিয়ে মুক্ত ঘোষণা করে ঢাকঢোল পেটানো হয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে লাল কার্ড পৌঁছে দেয়া হয়। বাল্যবিয়ে বন্ধে তৎপরতা থাকলেও পরবর্তীতে তা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।
বিভিন্ন অজুহাত এলাকায় বখাটেদের উৎপাত, উত্ত্যক্ত করা, অপরহরণচেষ্টা এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে অ্যাসিড নিক্ষেপের আতঙ্কে অভিভাবকরা তাদের মেয়েকে বয়স পূর্ণ না হতেই বিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
মাদরাসা সূত্রে জানা গেছে, অভয়নগর উপজেলার মহাকাল বিসিসি মোজাদ্দেদিয়া মহিলা দাখিল মাদরাসার ২২ জন ছাত্রীর মধ্যে ১১ জনের সম্প্রতি বিয়ে হয়েছে। তাদের কেউ কেউ ছিল এসএসসি পরীক্ষার্থী কেউবা নবম ও দশম শ্রেণির ছাত্রী। অভিভাবকরাই গোপনে এসব বিয়ে দিয়েছেন। এর সাথে জড়িত বিবাহ রেজিস্ট্রার ও নোটারি পাবলিক। যারা জাল কাগজপত্র তৈরি করে বিয়ে সম্পন্ন করেছেন। ওই মাদরাসার ৬ষ্ঠ থেকে দাখিল পর্যন্ত ছাত্রী সংখ্যা ১০০ জন। বাল্যবিয়ের শিকার শিক্ষার্থীদের বয়স সর্বোচ্চ ১৬ বছর।
অভিভাববক সদস্য আব্দুল কুদ্দুস গাজী বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিকভাবে অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে পড়াশুনা করে। যখন অষ্টম শ্রেণি পার হয় তখন তাদের বিয়ে হয়ে যায়। ১০ শ্রেণিতে ওঠার পর পর ঢালাওভাবে বিয়ে হয়ে যায়। আমি প্রতিবাদ করেও কাজ হয়নি।
সহকারী সুপার আবু তাহের বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের ২০২৪ সালের দাখিল পরীক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে ২২ জনের। ২০২৫ সালে তারা পরীক্ষা দেবে । নবম শ্রেণিতে আছে ২৫ জনের মত। এদের মধ্যে থেকে ৫০% বাল্যবিয়ের শিকার হচ্ছে।
সভাপতি মো. আলী হোসেন বলেন, দাখিল বালিকা মাদরাসার ২০ জন শিক্ষার্থী ২০২৩ সালে দাখিল পরীক্ষার জন্যে রেজিস্ট্রেশন করে। এর মধ্যে থেকে ১১ জন শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়েছে। এছাড়া ২০২৪ সালে দাখিল পরীক্ষায় অংগ্রহণ করবে ২২ জন। তার মধ্যে থেকেও কিছুদিন আগে ১০ শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে গেছে।
মাদরাসার সুপার আ ন ম আব্দুল হক শিকদার বলেন, আমার বিরুদ্ধে শিক্ষক ও অভিভাবকদের যে অভিযোগ তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি মূলত বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে থাকি। সরকার লাইসেন্স দিয়েছে। আমি শুনেছি অভিভাবকেরা তাদের মেয়েদের বিয়ে দিয়েছে। আমি এ কাজে জড়িত নই।
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শহিদুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।