আশাশুনিতে গত ১২দিন ধরে লোনা পানিতে তলিয়ে আছে দুই ইউনিয়নের সাত গ্রাম

0

আহসান হাবিব, আশাশুনি (সাতক্ষীরা) ॥ আশাশুনিতে প্রবল বৃষ্টি, জোয়ারের পানি ও স্লুইস গেট নষ্ট হয়ে খাজরা ও বড়দল ইউনিয়নের ৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গত ১২দিন ধরে কপোতাক্ষ নদের লোনা পানি ভেতরে প্রবেশ করে নতুন আরও এলাকা তলিয়ে গেছে। তলিয়ে আছে উপজেলার গজুয়াকাটি,ফটিকখালী, রাউতাড়া, গোয়ালডাঙ্গা, পাঁচপোতা, বাইনতলা ও দক্ষিণ বড়-দল গ্রাম। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে কয়েক শ পরিবার।
গজুয়াকাটি গ্রামের সত্য চন্দ্র বৈদ্য ও তেজেন্দ্র নাথ বৈদ্য জানান, ‘গত ২৮ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত টানা হালকা ও মাঝারি বর্ষণে পার্শ্ববর্তী চিংড়ি ঘের প্লাবিত হয়ে লোনা জলে খাজরা ইউনিয়নের গজুয়াকাটি, ফটিকখালী, রাউতাড়া এবং বড়দল ইউনিয়নের পাঁচপোতা ও বাইনতলা গ্রামের আংশিক এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ১২ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও পানি অপসারণ না হওয়ায় আমরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছি। আমাদের এলাকার অধিকাংশ বসতঘর মাটির তৈরি। দীর্ঘদিন পানি জমে থাকায় এক এক করে ধসে পড়তে শুরু করেছে। রান্না খাওয়ার যেমন সমস্যা হচ্ছে, তেমন চারদিকে লোনা পানিতে ডুবে থাকায় গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে আছি। খড়ের গাদা ভেসে যাওয়া শুরু করেছে। গোখাদ্য ও মিষ্টি সুপেয় পানির অভাব দেখা দিয়েছে।’
সহকারী অধ্যাপক শিবপ্রসাদ মন্ডল জানান, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে আমাদের কালকির স্লুইসগেটের ভরাটি মুখ খনন করে পানি নিষ্কাশনের তড়িত ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। বিকল্প পথ হিসেবে যদি বামনডাঙ্গা ও তুয়ারডাঙ্গা স্লুইসগেট অবমুক্ত করা যায় তবে জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হতে পারে। তবে এসব খালে নেটপাটা থাকায় সহজে সমস্যার সমাধান করা অত্যান্ত কঠিন ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে।
দক্ষিণ বড়দল কৃষক সংগঠনের সভাপতি অসিম কুমার বৈরাগীসহ স্থানীয় অনেকে এ প্রতিবেদককে জানান, খাজরা ও বড়দল এলাকা এক ফসলি আমন ধানের এলাকা। অন্যান্য এলাকায় আমন চাষের চাষাবাদ শুরু হয়েছে আর আমাদের এলাকায় লোনা পানিতে জলাবদ্ধতার কারণে উল্লিখিত ৭ গ্রামের প্রায় ১২ হাজার বিঘায় আমন ধানের চাষাবাদে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে। খাজরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ ডালিম জানান, কারকি স্লুইসগেটের পলিমাটি অপসারণ করার চেষ্টা করা হচ্ছিল। গত রোববার দিবাগত রাতে কপোতাক্ষ নদের লোনা পানি উল্টো ভেতরে প্রবেশ করে দক্ষিণ বড়দল ও গজুয়াকাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বসতবাড়িতে পানি ঢুকে গেছে। বিকল্প পথে পানি নিষ্কাশিত না হলে ভোগান্তি চরমে পৌঁছে যাবে। তারা বলেন এমনিতেই খাল, বিল ও পুকুরে কানায় কানায় পানি জমে আছে।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান, ধান চাষের ভরা মৌসুম। দ্রুত পানি নিষ্কাশন করা না হলে এ এলাকার ধান চাষে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। তা ছাড়া কাঁচা ও আধা পাকা পানিতে ডুবে থাকা ঘরবাড়ি ও গৃহপালিত পশুর চরম ক্ষতি হবে। তিনি আরও বলেন, এখনো উঁচু এলাকায় কয়েকটি পুকুরে মিষ্টি পানিতে ডুবে আছে। নতুন করে জোয়ার তুললে ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে যাবে।
ইউপি চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ ডালিম বলেন, রাতে পলিতে ভরাট হওয়া কারকির স্লুইস গেটের পাটাতন ডুবে থাকায় তা তোলা হয়েছে। রাতে জোয়ারের পানি ভেতরে প্রবেশ করলেও সকালে গেট দিয়ে আর যাতে নতুন করে পানি প্রবেশ না করে তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এলাকাবাসী জানান, গেটের সামনের এলাকা অনেটা পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে, তা ছাড়া বিল এলাকার খাল ও আবাদি জমি নিচু হওয়ায় খাল খনন না করা পর্যন্ত কালকির গেট দিয়ে পানি নিষ্কাশন করা অত্যন্ত দুরুহ ব্যাপার। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসনের কোনও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এগিয়ে এসে এর প্রতিকারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। অবৈধভাবে সুকৌশলে লোনা পানি উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, খালে অবৈধ নেটপাটা অপসারণ করে এলাকার পানি নিষ্কাশন নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী।