চৌগাছায় মাছ ধরার প্রস্তুতি, বেড়েছে সরঞ্জাম বিক্রি

0

এম এ রহিম, চৌগাছা (যশোর)॥যশোরের চৌগাছায় বর্ষা মৌসুমে পানি বাড়ার সাথে সাথে মাছ ধরার সরঞ্জাম তৈরি ও বিক্রি বেড়েছে। দেশীয় বাঁশ, তালের ডাঁটা ও বেত দিয়ে মাছ ধরার ফাঁদ তৈরি করা হয়। পেশাদার ও মৌসুমী জেলেরা এসব দিয়ে মাছ ধরে পরিবারের চাহিদা মেটানোর পর বাজারে বিক্রি করে সংসারের জন্যে বাড়তি অর্থ উপার্জন করছেন।
এলাকাভিক্তিক এসব দেশীয় উপকরণের নাম ঘুনি, চারই, দুয়াড়ী, খুল্লে, আটুল, পলোই, পাড়ি প্রভৃতি। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে এ এলাকার কপোতাক্ষ নদ, ভৈরব, খাল-বিল পুকুর-ডোবাসহ নিন্মাঞ্চল পানিতে টইটম্বুর হয়ে গেছে। পানিতে বিভিন্ন নদ-নদী,পুকুর ডোবা থেকে ভেসে আসছে পঁটি, টেংরা, পাকাল, খরসে, মায়া, শিং, মাগুর, টাকি, কই, জিয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি ও কার্প জাতের মাছ। এ সুযোগে লোকজন মাছ ধরার উৎসবে মেতে উঠেছে। ভরা মৌসুমে ফাঁদ তৈরির কারিগররা এসব উপকরণ তৈরি করে বাড়তি আয় করছেন। বর্ষার সময় বাড়ির কাজের পাশাপাশি মহিলারাও অবসরে এ কাজ করে বাড়তি আয় করছেন।
বর্ষা মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে বাঁশের তৈরি ঘুনি-চারই। এলাকা ভেদে এই জিনিসগুলোর ভিন্ন ভিন্ন নাম রয়েছে।
উপজেলার চৌগাছা, পুড়াপাড়া, চাঁদপাড়া, সলুয়া ও হাকিমপুর হাটে দেখা যায়, মাছ ধরার ঘুনি, চারই, দুয়াড়ী, খুল্লে, আটুল, পলোই, পাড়ি ইত্যাদি উপকরণ নিয়ে বসে আছেন কারিগরেরা। পেশাদার ও সৌখিন মাছ শিকারীদের আনাগোনায় জমে উঠেছে এই বাজার। একেকটি উপকরণের দাম প্রকারভেদে তিনশো টাকা থেকে প্রায় হাজার টাকা।
চৌগাছা বাজারে মাছ ধরার উপকরণ কিনতে আসা পেটভরা গ্রামের আব্দুল আলীম বলেন, আমাদের গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে কপোতাক্ষ নদ। এ ছাড়াও আশপাশের আবাদি জমি ও ছোট-বড় খাল-বিল ডোবা নালা বর্ষার পানিতে ভরে গেছে। আর সেখানে দেখা মিলছে বিভিন্ন জাতের দেশি মাছ। আমি বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই মাছ ধরি। এটা আমার নেশা। তাই মাছ ধরার জন্যে ঘুনি-চারই কিনতে এসেছি। তবে অন্য বারের তুলনায় এ বছর দাম অনেক বেশি।
উপজেলার নায়ড়া গ্রামের আব্দুল মালেক প্রায় ২০ বছর ধরে ঘুনি-চারই তৈরি করে বিক্রি করেন। তিনি বলেন, আগের মতো তো আর বাঁশের তৈরি ঘুনি-চারইসহ উপকরণের বিক্রি নেই। এখন মানুষ আধুনিক হয়ে গেছে। তারা বিভিন্ন জিনিস ও প্রযুক্তি ব্যবহার করেন। তবে বর্ষাকাল এলে একটু বেশি মাছ ধরার উপকরণ বিক্রি হয়। একেকটি উপকরণ বিক্রি করে প্রকারভেদে একশ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ হয়। তবে আগের চেয়ে এসবে লাভ কমে গেছে। শুধু বাপ-দাদার পেশা তাই অনেকেই এখন এসব উপকরণ তৈরি ও বিক্রি করি।
উপজেলার টেঙ্গুরপুর গ্রামের আব্দুল মুন্নাফ কালুমিয়া বলেন, আমার বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কপোতাক্ষ নদ। পাশেই রয়েছে বয়শাগাড়ীর খাল। প্রতি বছর বর্ষ মৌসুমে এখানে প্রচুর দেশি মাছ ধরা পড়ে। আমি নিজেও ঘুনি, চারই, ঠেলাজাল, খেপলাজাল, পাতাজাল, বশিরফাঁদ ও ছিপ দিয়ে মাছ ধরি। এ বছর কপোতাক্ষ নদ নতুন করে খনন করায় প্রচুর মাছ হচ্ছে।