পেঁয়াজ ও মুরগির দাম কমলেও মাছের বাজারে উত্তাপ

0

শেখ আব্দুল্লাহ হুসাইন॥ যশোরে আমদানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজের প্রভাবে দেশি পেঁয়াজের কেজিতে ৩০ টাকা কমেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন চাষি ও মজুতদারদের কাছে এখনও প্রচুর পরিমাণে দেশি পেঁয়াজ রয়েছে, যা আগামী দু মাস পর্যন্ত অনায়াসে চলবে। এদিকে বাজারে মুরগির দাম অনেকটাই কমেছে। তবে উত্তাপ ছড়াচ্ছে মাছের বাজার। ইলিশসহ সব ধরনের মাছের দাম বেশ চড়া। এ সপ্তাহে কিছুটা কমেছে খোলা সয়াবিন তেলের দাম। শুক্রবার (১০ জুন)  যশোরের বড়বাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া যায়।
গত রোববারও (৪ জুন) বড়বাজারে দেশি পেঁয়াজ ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। ভারত থেকে গত সোমবার (৫ জুন) পেঁয়াজ আমদানির পর গতকাল শুক্রবার ৭০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। আর আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৫০ টাকা। তবে দাম কম হলেও স্বাদের ঘাটতির কারণে ক্রেতাদের ভারতীয় পেঁয়াজ কেনার পরিবর্তে দেশি পেঁয়াজ কিনতে দেখা যায়।
বাজারে খুচরো দোকানিরা ভারতীয় পেঁয়াজ আড়ত থেকে কিনে প্রতি কেজিতে ১৭ টাকা বেশি নিয়ে ৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। বড়বাজার কালীবাড়ি মার্কেটের আড়তদার ‘নিউ মদিনা ভান্ডারের’ স্বতাধিকারী মো. জিয়া জানান, শুক্রবার সকালে তিনি ভারতীয় আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতি কেজি পাইকারি বিক্রি করেছেন ৩৩ থেকে ৩৫ টাকায়। ভারতীয় এ পেঁয়াজগুলো সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর থেকে যশোরের আড়তদাররা কিনে নিয়ে আসেন। ভোমরা স্থলবন্দরের আড়তদাররা আমদানিকারকদের কাছ থেকে কিনে পাইকারি দরে বিক্রি করেন।
ভোমরা স্থলবন্দরের আড়তদার শাহজাহান আলী এ প্রতিবেদককে জানান, তিনি গতকাল শুক্রবার ভারতীয় ইন্দোরের (মধ্যপ্রদেশ) পেঁয়াজ ২৯ থেকে ৩০ টাকা, আর নাসিকের (মহারাষ্ট্র) পেঁয়াজ ৩৯ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। তিনি আরও জানান, ভোমরা থেকে যশোর পর্যন্ত পরিবহন খরচ পড়ে কেজি প্রতি ১ টাকারও কম।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, এ বছর দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি। বর্তমানে মজুত আছে ১৮ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়।
তবে যশোর বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা বলছেন, ফরিদপুর ও রাজবাড়ি জেলায় প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজ উৎপন্ন হয়। সেখানকার হাট-বাজার থেকে যশোরে পেঁয়াজ আসে। সেখানে চাষিদের কাছে এখনও অনেক পেঁয়াজ মজুত আছে। তাছাড়া মজুতদাররাও কুরবানির বাজার ধরার অপেক্ষায় রয়েছে। তাই দেশি পেঁয়াজ বর্তমানে চাষি ও মজুতদাররা বাজারে কম ছাড়ছেন। কুরবানি ঈদের পর ছাড়া দেশি পেঁয়াজের দাম খুব একটা কমার সম্ভাবনা নেই বলে মন্তব্য করলেন বড়বাজার কালীবাড়ি মার্কেটের ‘নিতাই গৌর ভান্ডারের’ অন্যতম স্বত্বাধিকারী নিতাই চন্দ্র সাহা।
এদিকে, তীব্র গরমে খামারিরা বাধ্য হয়ে মুরগির দাম কমিয়ে দিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার বড়বাজারে ব্রয়লার মুরগি ২০০ টাকা, সোনালী মুরগি ২৫০/২৬০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩৫০ টাকা ও দেশি মুরগি ৫৮০/৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। বিক্রেতা আবুল হাশেম জানান, এই গরমে খামারিরা মুরগি রাখতে পারছেন না। তাছাড়া ক্রেতারাও কিনছেন কম। এ কারণে দাম কমেছে।
এদিকে বড়বাজার মাছবাজারে ইলিশসহ সব ধরনের মাছের দাম চড়া। গতকাল শুক্রবার দেড় কেজি ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হয়েছে ২৬শ টাকা, এক কেজি ইলিশ ২ হাজার/২২শ টাকা, ৮০০/৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ১৭শ/১৮শ টাকা, ৬০০/৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ১৩শ/১৪শ টাকা, এক কেজি রূই মাছ ৩শ টাকা, এক কেজি কাতল মাছ ২৭৫ টাকা, নাইলোটিকা ২শ টাকা, পাবদা ৪শ টাকা, বাটা ১৮০ টাকা, ২ কেজি ওজনের পাঙাশের কেজি ২শ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। ইলিশ বিক্রেতা এরশাদ আলী জানান, ঠিকমত বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত বাজারে ইলিশের আমদানি হবে না।
বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম এ সপ্তাহে কিছুটা কমেছে। খুচরো ভোজ্যতেল বিক্রেতা রবি ব্যানার্জি জানান, তিনি শুক্রবার সয়াবিন তেল প্রতি কেজি ১৮০ টাকা, সুপার ১৪০ টাকা, পাম ১৩৫ টাকা ও সরিষার তেল ১৯০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। তার ধারণা সামনের দিনে আরও কমতে পারে।