চৌগাছায় জমজমাট কাঁঠালের হাট

0

 

এম এ রহিম, চৌগাছা (যশোর) ॥ যশোরের চৌগাছায় জমে উঠেছে জাতীয় ফল কাঁঠালের হাট। পৌর শহরের বেলে মাঠ গরুর হাটের পাশে নতুন জায়গায় কাঁঠালের হাট বসায় ক্রেতা-বিক্রেতারা বেজায় খুশি। চলতি মৌসুমে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা ট্রাক নিয়ে পছন্দের কাঁঠাল কিনছেন। কৃষক-ব্যবসায়ীরা কাঁঠালের দাম পেয়ে খুশি।

উপজেলার প্রধান কাঁঠালের হাটটি ছিলো সরকারি শাহাদৎ পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে। হাটমালিক পক্ষ ক্রিতা-বিক্রেতাদের সুবিধার কথা চিন্তা করে সেটি চৌগাছা-মহেশপুর সড়কের পশুহাটের পাশে সরিয়ে নেন। নতুন স্থানের কাঁঠাল হাটে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতা সকলেই ব্যস্ত সময় পার করছেন। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যবসাযীরা কাঁঠাল কিনে ট্রাকে ভর্তি করে নিয়ে যাচ্ছেন। এলাকা থেকে কাঁঠাল ব্যবসায়ীরা ভ্যান, ট্রলি ও ইজিবাইকে করে কাঁঠাল কিনে হাটে নিয়ে এসে জড়ো করছেন। কাঁঠাল কিনতে আসা ব্যাপারীরা ঘুরে ঘুরে পছন্দে কাঁঠাল কিনছেন।

কথা হয় উপজেলার আন্দারকোটা গ্রামের আশাদুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে এলাকায় কাঁঠালের ফলন কম। তাই চাহিদা অনেক বেশি এবং দামও ভালো। তিনি বলেন, এ বছর একটি কাঁঠাল ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ এলাকার দুধ কাঁঠাল, রাজভোগ, বেনী কাঁঠাল ও খাজাকাঁঠালসহ বিভিন্ন জাতের কাঁঠালের চাহিদা ব্যাপক। চলতি মৌসুমে কাঁঠালের ফলন হয়েছে তুলনামূলক কম। তাই বাজারে ব্যাপক চাহিদার পাশাপাশি কাঁঠাল ব্যবসায় বেশ লাভ হওয়ায় বিক্রেতারা বেজায় খুশি।

উপজেলার গুয়াতলী গ্রামের আব্দুল করিম, হোগলডাঙ্গা গ্রামের আশিকুল ইসলাম, চাদপাড়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন, হাজরাখানা গ্রামের মহিদুল ইসলাম, খড়িঞ্চা গ্রামের শাহিনুর রহমান জানান, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর গাছে কাঁঠাল ধরেছে কম। তাছাড়া সারা বছর ব্যাপক খরায় ফলন কম হয়েছে। তাই কাঁঠালের দাম ভালো। এলাকার ব্যাপারীরা বিভিন্ন গ্রাম থেকে কাঁঠাল কিনে তা এবাজারে নিয়ে আসেন। এ বছর তাদের ব্যবসায় ভলো লাভ হচ্ছে।

কথা হয় বরিশাল জেলার পাইকারি কাঁঠাল ব্যবসায়ী আমিনুর রহমান, কুষ্টিয়ার জাহিদুর রহমান, ঢাকার জামিনুর রহমানের সাথে। তারা বলেন, কাঁঠালের মৌসুম শুরু হলে এ উপজেলার হাট থেকে কাঁঠাল কিনে নিজ এলাকায় নিয়ে বিক্রি করেন। পিরোজপুর, ভোলা, খুলনা, বাগেরহাট ও ঝালকাঠি জেলাসহ বিভিন্ন জেলায় কাঁঠালের উৎপাদন খুবই কম। সে কারণে এসব জেলাতে যশোরের কাঁঠালের ব্যাপক চাহিদা। মৌসুম শুরু হলে চৌগাছা থেকে তারা কাঁঠাল কিনে ট্রাক ভর্তি করে বিভিন্ন শহরে নিয়ে বিক্রি করেন। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে যশোরের চৌগাছা উপজেলার কাঁঠালের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চৌগাছা উপজেলার পেটভরা, পাতিবিলা, নারায়রপুর, জগদিশপুর, হাজরাখানা, দেবীপুর, আন্দুলিয়া ও নিমতলাসহ বিভিন্ন গ্রামের কাঁঠালের স্বাদ দারুণ। তাই চাহিদাও বেশ।
এক সময় পতিত জমিতে বিনা সার ও অযত্নে কাঁঠালের চাষ হতো। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে অল্পকিছু কাঁঠাল বিক্রি করতেন গাছ মালিক। বদলে গেছে সময়। এখন সার ও সেচ দিয়ে কাঁঠালের চাষ হচ্ছে। খাদ্যগুণ, পুষ্টিমান ও ব্যবহারিক দিক থেকেও এর গুরুত্ব ব্যাপক। কাচা কাঁঠাল তরকারি হিসেবে খেতে বেশ লাগে। পাকা হলে তো কথাই নেই।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোসাব্বির হুসাইন বলেন, চৌগাছা উপজেলার পেটভরা, পাতিবিলা, নারায়রপুর, জগদিশপুর, হাজরাখানা, বড়খানপুর, দেবীপুর, নিমতলাসহ বিভিন্ন গ্রামের কাঁঠালের স্বাদ দারুণ। এ এলাকায় মূলত রসালো জাতের কাঁঠাল বেশি পাওয়া যায়। তবে এ বছর কাঁঠালের ফলন একটু কম হলেও দাম ভালো।