আওয়ামী লীগ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বারবার হেরেছে এবং বারবার হারবে:নজরুল ইসলাম খান

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, আওয়ামী লীগ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বারবার হেরেছে এবং বারবার হারবে ইনশাল্লাহ। এটা জানে বলেই তারা কায়দা কৌশল করে ইলেকশন করতে চায়।
বৃহস্পতিবার (১ জুন) যশোরে জেলা বিএনপির আয়োজনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪২তম শাহাদৎবার্ষিকী উপলক্ষে সকাল ১০ টায় স্থানীয় জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম।
নজরুল ইসলাম আরও বলেন, আমাদের এত সাথী প্রাণ দিয়েছে, গুম হয়েছে, নির্যাতনের শিকার হয়েছে এরপরেও তারা যদি খুশি মত নির্বাচন করতে পারে তবে আমাদের সাথীদের কাছে আমরা বেইমান বলে চিহ্নিত হবো। আজকে সেই সকল সাথীর রক্তের ঋণ পরিশোধের সময় এসেছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে যে আন্দোলন চলছে সেই আন্দোলনে আমাদের বিজয় নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, আজকে যারা ক্ষমতায় তারা গণতন্ত্রকে জবাই করেছে। আর আমাদের নেতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সেই জবাই করা গণতন্ত্রের গোরস্তানের উপর বহুদলীয় গণতন্ত্রের বাগান রচনা করেছেন। আমরা বলতে পারি একটা নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে স্বৈরাচারী এরশাদ সামরিক স্বৈরশাসন জারি করেছিল। আমাদের নেতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ৯ বছর অবিশ্রান্ত ও আপোষহীণভাবে লড়াই করে খেতাব পেয়েছেন আপোষহীন নেত্রী হিসেবে। আর আপোষ করেছে আজকে যারা ক্ষমতায় আছে তারা।
নজরুল ইসলাম আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তারা ১/১১ এর যে অসাংবিধানিক সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যায় নাই? বলে নাই যে, এটা আমাদের আন্দোলনের ফসল? এখন বলে ওটা অবৈধ সরকার।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ জিয়াউর রহমানের কর্মকান্ডকে যেমন বাদ দিতে পারবে না, তেমনি তাকেও বাদ দিতে পারবে না। তার কর্মকান্ড যেভাবে বেঁচে থাকবে, সেভাবে তিনিও বেঁচে থাকবেন। তার জীবদ্দশায় যা কিছু করেছেন সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্যে করেছেন। তিনি বাংলাদেশে নতুন রাজনীতির ধারার সূচনা করে গেছেন। তার রাজনীতি ছিল উন্নয়ন,উৎপাদন,জনগণের গণতন্ত্রের জন্যে রাজনীতি, যেটি জনগণ গ্রহণ করেছিল বলে আওয়ামী লীগ বিএনপির চেয়ে দ্বিগুণ বয়সের দল হয়েও যতবার সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে,ততবার জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের কাছে পরাজিত হয়েছে।
নজরুল ইসলাম খান বলেন,আইন করে ও সংবিধানে লিখে স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে ক্ষমতাসীনরা যাই বলুক না কেন,সেই দিনের সাড়ে ৭ কোটি জনগণ তার প্রত্যক্ষদর্শী । তারা সেদিন শহীদ জিয়ার কণ্ঠে তাদের নিজ কানে স্বাধীনতার ঘোষণা শুনেছিল । সেটি কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। আজকে অনেকে বলে ইপিআর’র ওয়ারলেসের মাধ্যমে তারা নাকি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিল, কিন্তু যেদিন রাতে স্বাধীনতার ঘোষণা হয়,সেদিন সন্ধ্যায় ইপিআর দখল করে নিয়েছিল পাক সেনাবাহিনী। সকল বেতার যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল। তাহলে ইপিআর’র ওয়ারলেসের মাধ্যমে কে বা কারা স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিল?
তিনি বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমান যা কিছু করেছেন, দেশ ও জনগণের স্বার্থে করেছেন। আজকে যারা বৈদেশিক রিজার্ভ নিয়ে গর্ব করে, সেই উন্নয়নের সূচনা তিনি করেছিলেন। তৈরি পোশাক, প্রবাসী শ্রমিকদের প্রেরিত অর্থ এবং কৃষি খাতের ওপর ভিত্তি করে দেশের যে মজবুত অর্থনীতি গড়ে উঠেছে-এই তিন খাতের উন্নয়নের সূচনা তিনিই করেছিলেন। তার ভিত্তিতে দেশের অর্থনীতির মজবুত ভিত গড়ে উঠেছে। তিনি সর্ব প্রথম বিদেশে শ্রমিক রফতানি করেন। বর্তমানে বিভিন্ন দেশে ১ কোটির বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত আছেন। বিদেশে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক রফতানির পাশাপাশি দেশের গার্মেন্টেস সেক্টরের উন্নয়নে তিনি অবদান রাখেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে বেড়িয়ে কৃষির উন্নয়ন সাধন করে সবুজ বিপ্লবের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে এক নব দিগন্তের সূচনা করেছিলেন। তিনি দুর্ভিক্ষের বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছিলেন। তিনিই প্রথম রাষ্ট্রীয় মালিকানায় শিল্প,সুগার মিল,টেক্সটাইল মিল স্থাপন করেছিলেন।
তিনি বলেন, জিয়া গ্রামীণ অর্থনীতির ভিত মজবুত করতে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প স্থাপনের পাশাপাশি বিনা জামানতে ঋণের ব্যবস্থা করেছিলেন। বেকার যুবক ও মহিলাদের কর্মমুখি ও আত্মনির্ভশীল করার লক্ষ্যে তাদেরকে প্রশিক্ষিত করেছিলেন। চাকরির ক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের অংশগ্রহণসহ তাদের নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করেছিলেন। শিশুদের মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে শিশু একাডেমি প্রতিষ্ঠা ও নতুন কুঁড়ি নামক অনুষ্ঠানের সূচনা করেছিলেন। সংস্কৃতি বিকাশের জন্যে শিল্পকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি বাঙালিকে তার নিজস্ব জাতিসত্ত্বা দিয়েছিলেন। পাশাপাশি একটি আত্মনির্ভশীল জাতিতে পরিণত করেছিলেন। গ্রামীণ জনপদের নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করেছিলেন। তাদের ক্ষমতায়নে গ্রাম সরকার গড়ে তোলেন।
দলের স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে যখন দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার পথে ঠিক সেই সময় তিনি দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে নিষ্কণ্ঠক করেছিলেন। দেশের সর্বসময় ক্ষমতার অধিকারী হয়েও তিনি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। সেই সময়ে দেশের সংবাদপত্রগুলো তার বিরুদ্ধে লেখালেখি করার পরও তিনি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি দেশ ও জনগণের প্রশ্নে আপোষ করেননি। এরকম একজন নেতার কর্মী হয়ে তাকে নিয়ে আমরা যতটা গর্ব করতে পারি যেটা অন্যকোন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা পারেন না।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মুনিরুল হুদা, লেখক ও গবেষক বেনজীন খান প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু। আলোচনা সভা পরিচালনা করেন জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন।