যশোরে বিএনপির বিশাল জনসমাবেশে রুহুল কবির রিজভী দেশের মানুষকে আধাবেলা-আধাপেটা খাইয়ে বিদেশে গিয়ে উন্নয়নের গল্প শোনাচ্ছেন

0

 

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেছেন, দেশের মানুষকে আধাবেলা-আধাপেটা খাইয়ে তিনি জাতিকে পর্যুদস্ত ও নিপীড়িত করে বিদেশে গিয়ে উন্নয়নের গল্প শোনাচ্ছেন। অথচ সংবাদপত্রে প্রকাশ পেয়েছে দেশে ৩৮ লাখ শিশু পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। তারা শারীরিকভাবে বেড়ে উঠতে পারছে না।
রিজভী বলেন, গোটা দেশ আজ বৃহৎ কারাগার। বিএনপি নেতা-কর্মীদের কাছে কারাগার ও বাড়ির মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। বেগম জিয়া এখন বন্দি আছেন। গায়েবি মামলায় যশোরের গুরুত্বপূর্ণ নেতাকর্মীরাও কারাগারে। এখন বাইরেও কারাগার, ভেতরও কারাগার। আমরা কেউই নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারছি না। সার্বক্ষণিক আমাদের অনুসরণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এখন আর কোনও রাজনৈতিক দল নয়, এটা এখন সন্ত্রাস আর গুন্ডামি করার সংগঠন।
বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা দাবিতে শনিবার বিকেলে শহরের ভোলা ট্যাংক রোডে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে যশোর জেলা বিএনপি আয়োজিত বিশাল জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে জনসমাবেশে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন।
জনসমাবেশে রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, ঢাকায় গরুর মাংস ৯শ টাকা কেজি খাইয়ে প্রধানমন্ত্রী কাতারে গিয়ে উন্নয়নের গল্প শোনান, আমেরিকা লন্ডনে গিয়েও এই উন্নয়নের গল্প শোনান। অথচ দেশের মানুষ আজ অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে আলোর গতির সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, বর্তমানে দ্রব্যমূল্য শব্দের গতিতে নয়, প্রতি সেকেন্ডে ১ লাখ ৮৬ হাজার মাইল গতিতে ধাবিত হচ্ছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ২০০৬ সালে জাস্টিস কে এম হাসানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ৪৫ বছর আগে কেএম হাসান বিএনপির সম্পাদকম-লির সদস্য ছিলেন, এই ধুয়ো তুলে শেখ হাসিনা তাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে মেনে নিতে চাননি। তাহলে আপনি শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের প্রধান, অবৈধভাবে ক্ষমতায় আছেন, জনগণের ভোট আত্মসাৎ করেন, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে দেন না। আপনার গুন্ডা বাহিনী বিরোধী দলের নমিনেশেন পেপার ছিনিয়ে নেয়। সুতরাং আপনার অধীনে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে এই গ্যারান্টি জনগণ কখনোই পেতে পারে না। তাই আমাদের স্পষ্ট ঘোষণা আপনার অধীনে আর কোনো নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না।
গত কয়েকটি নির্বাচনের উদাহরণ টেনে তিনি শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে বলেন, এখন নির্বাচন হলে সেটা আর দিনের আলোয় হবে না। রাতেই ব্যালট বাক্স ভরে যাবে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে আপনি নিজের মতো সাজিয়েছেন, আর ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে আপনার গুন্ডা বাহিনী শাসিয়ে আসবে যেন ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে না আসে। ফলে বিএনপি আর কোনও পাতানো ফাঁদে পা দেবে না বলে তিনি স্পষ্ট ঘোষণা দেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, সংবিধানের দোহাই দিয়ে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে আড়াল করা চেষ্টা করছে। অথচ তত্ত্বাবধায়ক এর আগে কখনও সংবিধানে ছিলো না। আওয়ামী লীগসহ সকল দল আন্দোলন করে তত্ত্বাবধায়ক এনেছে। এখন আমরা আন্দোলন করছি। তাহলে সংবিধান কি এমন বড় পাথর যে সেটা সংশোধন করা যাবে না। জনগণের প্রয়োজনে সংবিধান। ফলে এটা সংশোধন করে নিরপেক্ষ ভোটের ব্যবস্থা করতে হবে।
মাকিন ভিসা নীতি প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, আমেরিকা বাংলাদেশের জন্য করা ভিসা নীতি গত ৩ মে সরকারকে জানিয়ে দিয়েছে। অথচ আমরা দেশবাসী জানতে পারলাম গত তিনদিন আগে। আমাদের প্রশ্ন এতোদিন কেনো লুকিয়ে রাখলো সরকার। ভিসা নীতির কথা জেনে সরকার প্রধান গোস্বা করে বলেছিলেন আমেরিকা আমাকে ক্ষমতায় রাখতে চায় না। যারা স্যাংসন দেয় তাদের কাছ থেকে কিছু কিনবো না। অথচ একদিন পরই চিনি আমদানি চুক্তি করা হলো। তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, লাখ লাখ গার্মেন্ট শ্রমিককে বেকার করার ঝুুঁকি নিয়েও আপনাদের ক্ষমতায় থাকতে হবে। কিন্তু আর সময় দেওয়া হবে না। তিনি উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, এ সরকার জগদ্বল পাথরের মতো জনগণের ওপর চেপে রয়েছে। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে রাজপথে থাকার আহ্বান জানান তিনি।
জনসমাবেশে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে গত কয়েকদিনে যশোরে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর যে জুলুম নির্যাতন হয়েছে তা সাম্প্রতিককালের নজিরবিহীন। শুধু ২শ নেতাকর্মীর গ্রেফতার দিয়ে সীমাহীন জুলুম নির্যাতন বোঝানো যাবে না। ছাত্রদল-যুবদলের অনেক নেতাকর্মী রয়েছেন যারা গত ৭ দিন এক কাপড়ে রয়েছেন। মা বোনেদের অনেকে গত তিনদিন গোসল করেননি। আওয়ামী লীগের জেলা নেতাদের আস্ফালন বক্তব্যের মাধ্যমে একটি ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে। তারপরও নেতাকর্মীরা সকল রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আজকের এই সমাবেশ সফল করেছেন।
তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে এই যশোরে ৫০ জনেরও বেশি আমার রাজনৈতিক সহকর্মী প্রাণ দিয়েছেন। তাদের উত্তরসূরি হিসেবে, ভাই হিসেবে, সন্তান হিসেবে আমাদের সুযোগ নেই তাদের রক্তের সাথে বেঈমানি করা। সেই কারণে আমরা রাজপথ ছেড়ে চলে যেতে পারিনি।
অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, আজকের সমাবেশে যারা আছেন তাদের মধ্যে অনেকেই তরিকুল ইসলামের সাথে রাজনীতি করেছেন। আবার কেউ কেউ তরিকুল ইসলামের নাম শুনে বড় হয়েছেন। তরিকুল ইসলাম কখনও জিয়া পরিবারের সাথে কারোর তুলনা করেননি। একদিকে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ আরেক দিকে জিয়া পরিবার। দৃঢ়চিত্তে জিয়া পরিবারের প্রতি তিনি অকুন্ঠ সমর্থন দিয়েছেন। সে কারণে তরিকুল ইসলামের উত্তরসূরি ও খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের সৈনিকরা রাজপথ ছেড়ে যেতে পারে না। আজকের সমাবেশে সেটিই প্রমাণ করেছে। তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে সারাদেশে ৬শরও বেশি নেতাকর্মী গুম-হত্যার শিকার হয়েছেন। যশোরে ৫০ জন প্রাণ দিয়েছেন। প্রয়োজনে তাদের মতো আমরাও এই যশোরের পিচঢালা রাজপথ রক্তে রঞ্জিত করে দেবো, তারপরও রাজপথ ছেড়ে যাবো না আমরা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতাকর্মীরা সংযম প্রদর্শন করতে পারে ঠিক, তেমনি তারা গুন্ডা, মস্তানদেরও প্রতিরোধ করতে জানে। আগামীতে যেকোনও পরিস্থিতিতে তারা মাঠে থাকবে বলে তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
জনসমাবেশের সভাপতির বক্তৃতায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম সব ধরনের বাধা ডিঙিয়ে জনসমাবেশ সফল করায় নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। আগামীতে জনগণের সকল দাবি আদায়ে এভাবে রাজপথে থাকার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এই যশোরের যে রাজনৈতিক সহনশীলতা ছিলো তা স্থাপন করেছিলেন, মরহুম আফসার আহমেদ সিদ্দিকী, তরিকুল ইসলাম, আলমগীর সিদ্দিকী, অ্যাডভোকেট রওশন আলী, অ্যাডভোকেট আব্দুস শহীদ লালসহ আরও কয়েকজন। অথচ সেই সংস্কৃতিকে একশ্রেণির লোক নষ্ট করছে। এসব কর্মকা- থেকে তাদের বিরত থাকার আহ্বান জানান তিনি। সমাবেশ থেকে আটক নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করেন তিনি।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আলহাজ মিজানুর রহমান খানের পরিচালনায় জনসমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক জাহানারা সিদ্দিকী, সাবেক দফতর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাবিরা নাজমুল মুন্নি, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট মো. ইসহক, মাগুরা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আহসান হাবিব কিশোর, যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. মুসা, আব্দুস সালাম আজাদ, কাজী আজম, নগর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম মুল্লুক চাঁদ, যশোর সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনজুরুল হক খোকন, কেশবপুর পৌর বিএনপির সভাপতি আব্দুস সামাদ বিশ্বাস, মণিরামপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শহীদ ইকবাল হোসেন, নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির সভাপতি আবু নঈম, বাঘারপাড়া থানা বিএনপির আহ্বায়ক শামসুর রহমান, চৌগাছা থানা বিএনপির আহ্বায়ক জহুরুল ইসলাম, ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোর্ত্তজা এলাহী টিপু, শার্শা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবু হাসান জহির, কেন্দ্রীয় যুবদলের সহসভাপতি তরিকুল ইসলাম বনি, নুরুজ্জামান লিটন, জেলা যুবদলের সভাপতি, এম তমাল আহমেদ,জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনছারুল হক রানা, কোতয়ালি থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, নগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক হোসেন, জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী রাশিদা রহমান, জেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক উপাধ্যক্ষ মকবুল হোসেন, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি আবু জাফর, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি রবিউল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আমীর ফয়সাল, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুর রহমান সাগর, নগর মহিলা দলের সভানেত্রী শামসুন্নাহার পান্না, নগর বিএনপির ৬ নং ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক,সদর উপজেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ারা মোস্তফা, নগর যুবদলের আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আরিফ, সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম রবি, সদর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক তানভির রায়হান তুহিন, সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম, নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব খায়রুল বাশার সুজন, নগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুমন আহমেদ ও সদর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন লিটন।