কালবৈশাখী ঝড়ে যশোরে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

0

আকরামুজ্জামান ॥ যশোরে বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে কালবৈশাখী ঝড়ে বোরো ধান, আম, লিচু ও কলা ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ৩৮ মিনিট স্থায়ী এ ঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ৮০ কিলোমিটার।
যশোর বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমানঘাঁটি নিয়ন্ত্রিত আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই হঠাৎ আকাশে কালো মেঘ চেপে বসে। যা কয়েক মিনিটের মধ্যে প্রকৃতিতে অন্ধকার রূপ ধারণ করে। এরপর থেকেই পুরো আকাশে বজ্র আওয়াজ শুরু হয়ে বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটের দিকে প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়ায় রূপ নেয়। এসময় বাতাসের গতিবেগ ছিলো ৪২ নট অর্থ্যাৎ ঘন্টায় ৮০ কিলোমিটার। তবে ঝড় চলাকালীন প্রায় আধা ঘন্টা সময় পর্যন্ত কোনো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ধুলোবালিতে একাকার হয়ে যায় সর্বত্র। পরে বিকেল ৫ টার পর আকাশ থেকে ঝিরঝির বৃষ্টি নেমে আসার পর ঝড়ের গতিবেগ কমতে থাকে। এদিন সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় বলে আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে যশোরের ওপর দিয়ে মৌসুমের প্রথম কালবৈশাখী ঝড় যখন বয়ে যায় তখন জেলার ৮ উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠে চলছিলো বোরো ধান কাটার প্রস্তুতি। এসব ক্ষেতে কোথাও ধান কেটে শুকানোর জন্য ফেলে রাখা হয়েছে আবার কোথাও পাকা ধান কাটার প্রস্তুতি নেয় কৃষক। ঠিক এমন সময় ঘন্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ায় এসব ক্ষেতের ধান নিশ্চিত ক্ষতির মুখে পড়েছে বলে কৃষক ও কৃষি বিভাগের লোকজনরা আশঙ্কা করছেন।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর যশোরের উপপরিচালক (প্রশিক্ষণ) সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, যশোরে চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলার শার্শা, মণিরামপুর, ঝিকরগাছা অঞ্চলের ৮০ শতাংশ ধান কেটেছে কৃষক। তবে বাকি উপজেলাগুলোতে সবেমাত্র ধানকাটা শুরু হয়েছে। এরমধ্যে অধিকাংশ এলাকায় কৃষক ধান কেটে ক্ষেতে ফেলে রেখেছেন শুকানোর জন্য। ঝড় ও বৃষ্টিতে এসব ধান ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর যেসব ধান এখনো কাটা হয়নি সেগুলোও মাটিতে পড়ে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বলে তিনি জানান। তবে কী পরিমাণ ধানের ক্ষতি হয়েছে তা এই মুহূর্তে বলা কঠিন বলে তিনি জানান।
সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, ঝড় ও বৃষ্টির আগাম খবর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে কৃষকদের মাইকিং করে জানিয়ে দেওয়া হয়। অনেক কৃষক আমাদের আহ্বানকে গুরুত্ব দিয়ে ধান কেটে ঘরে তুলেছেন। তিনি বলেন, সামনে বৃষ্টি বিলম্বিত না হলে সামান্য ক্ষতি হলেও কৃষক খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের উৎপাদিত ফসল ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা করা যায়।
এদিকে জেলার বিভিন্ন উপজেলা খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকেলের কালবৈশাখী ঝড়ের কারণে অধিকাংশ এলাকার মাঠের বোরো ধান মাটিতে ন্যূয়ে পড়েছে। পাশাপাশি যেসব ধান ক্ষেতে ফেলে রাখা হয়েছে বৃষ্টির কারণে সেগুলোও নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জেলার বাঘারপাড়া উপজেলার রায়পুর গ্রামের শামসুর রহমান বলেন, ৬ বিঘা জমিতে বোরো ধান রয়েছে। এরমধ্যে দুই বিঘা জমির ধান কেটে মাটিতে শুকানোর জন্য ফেলে রাখা হয়েছে। ঝড়ের কারণে ধান মাটিতে একাকার হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আর দ্ইু দিন সময় পেলে নির্বিঘ্নে পুরো ধান ঘরে তুলতে পারতাম। কিন্তু শেষ পর্যায়ে কালবৈশাখী ঝড়ে আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে।
পাশের সিলুমপুর গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম মন্ডল বলেন, ঝড়ে শুধু ধান নয়, আম, লিচু ও কলা ক্ষেতের ক্ষতি করেছে। অধিকাংশ গাছের আম ও লিচু ঝরে গেছে। কলাগাছও ভেঙে পড়েছে। তিনি বলেন, এবছর বোরো আবাদে ভালো ফলনের আশা করছিলাম। কিন্তু ঝড় ও বৃষ্টিতে সে স্বপ্ন ভেঙে চূরমার হয়ে গেছে।
ঘুরুলিয়া গ্রামের কৃষক মাফিজুর রহমান বলেন, ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ করে আড়াই বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছিলাম। ফলনও ভালো হয়েছিল। ঝড়ে পাকা ধান প্রায় সব পড়ে গেছে। এ অবস্থায় সামনে কীভাবে ফসল ঘরে তুলবেন সেই চিন্তায় মাথায় যন্ত্রণা করছে।
এদিকে আবহাওয়া অফিস সূত্রের সর্বশেষ খবর, বৃহস্পতিবার রাতভর যশোরসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলাতে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এরমধ্যে উপকূলবর্তী জেলা খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে।