বৃষ্টিতে কেটেছে মৎস্যপল্লীর অনিশ্চয়তা যশোরে রেণু ও পোনা উৎপাদন শুরু

0

আকরামুজ্জামান ॥ তীব্র দাবদাহ ও বৃষ্টির অভাবে ভূগর্ভস্থ পানির লেয়ার নেমে যাওয়ায় যশোরের মৎস্যপল্লী চাঁচড়ায় মাছের হ্যাচারিগুলোয় রেণু ও পোনা উৎপাদনে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। গত সোমবারের এক পশলা বৃষ্টির পর সেই অনিশ্চয়তা কেটে গেছে বলে মৎস্য ব্যবসায়ীরা বলছেন। তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে চলে আসায় ফের উদ্যোমে মাছের রেণু ও পোনা উৎপাদন শুরু হয়েছে।
দীর্ঘ অনিশ্চয়তা কেটে অবশেষে সুদিন ফিরছে যশোরের চাঁচড়ার মাছের রেনু ও পোনা উৎপাদন ও বিক্রির। অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে গত প্রায় ৫ বছর ধরে মৌসুমের শুরুতে রেনু পোনা বন্ধ থাকলেও এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তা অনেকটা কেটে গেছে বলে মনে করছেন এখানকার মাছ চাষি ও হ্যাচারি মালিকরা। এ অবস্থায় চলতি মৌসুমে মাছের রেনুপোনা উৎপাদন ও তা বিক্রির উজ্জল সম্ভাবনা দেখছেন তারা।
দেশের যে মাছের রেণু ও পোনার চাহিদা থাকে তার প্রায় ৬০ শতাংশ চাহিদাই পূরণ করে যশোরের মৎস্যপল্লীখ্যাত চাঁচড়ার হ্যাচারিগুলো। যে কারণে বরাবরের মতোই রেণু ও পোনা উৎপাদনে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে যশোর। বছরের মার্চ মাসের শেষে মূলত শুরু হয় চাঁচড়ার রেণু ও পোনা উৎপাদনের মৌসুম। জুলাই মাস পর্যন্ত চলে মাছের রেণু ও পোনা বিপণন। কিন্তু গত প্রায় ৩ বছর ধরে জলবায়ূর বিরূপ প্রভাবের কারণে দক্ষিণের সীমান্তবর্তী এ জেলা মার্চ-এপ্রিলে বৃষ্টি না হওয়ায় দীর্ঘ অনাবৃষ্টির কবলে পড়ে এখানকার রেণু ও পোনা উৎপাদনকারীরা বিপর্যয় অতিক্রম চলেছে। তবে এ বছর মার্চ মাসে বৃষ্টির পর ফের অনাবৃষ্টি ও দাবদাহের মধ্যে এপ্রিলের শেষের দিকে বৃষ্টি পেয়ে উচ্ছ্বসিত রেণু ও পোনা উৎপাদনের সাথে সংশ্লিষ্টরা।
চাঁচড়া মাতৃফিস হ্যাচারির স্বত্বধিকারী ও যশোর জেলা হ্যাচারি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান গোলদার বলেন, ‘অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর মাছের রেণু ও পোনা উৎপাদন অনেকটা অনুকূল মনে করছি। তবে গত কয়েকদিনের তীব্র গরম ও দাবদাহে আমাদের উৎপাদন বন্ধ হয়ে পড়ে। তীব্র দাবদাহের সাথে বৃষ্টির অভাবে ভূগর্ভস্থ পানির লেয়ার নেমে যাওয়ায় আমরা অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিলাম। তবে শেষমেষ গত সোমবারের বৃষ্টির পর সেই অনিশ্চয়তা কেটে গেছে। তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায় চলে আসায় আমরা ফের উদ্যোমে রেণু ও পোনা উৎপাদন শুরু করেছি।’
মা ফাতেমা ফিস হ্যাচারির স্বত্বাধিকারী ও হ্যাচারি মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ ফিরোজ খান বলেন, ‘ঈদের আগে প্রায় সপ্তাহজুড়ে যে তাপমাত্রা ছিলো তাতে জেলার মাছ চাষিদের ২৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। আমরা মনে করেছিলাম এ পরিস্থিতি দীর্ঘ হবে। তবে অল্প কয়েকদিনের ব্যবধানে বৃষ্টি পেয়ে তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে চলে এসেছে। এতে আমাদের বিপদ কেটে গেছে বলে মনে করছি।’ তিনি বলেন, ‘বৈরী আবহাওয়ার কারণে দাবদাহে মাছের পোনা ও রেণু উৎপাদনে মারাত্মক সমস্যা হচ্ছিল। গরমে মাছের অক্সিজেন ফেল করে মারা যায়। মোটর চালিয়েও পানি ঠাণ্ডা করা সম্ভব হচ্ছিল না। এতে রেণু ও পোনা উৎপাদনে ধস নামে।’ তিনি বলেন, ‘আপাতত বৃষ্টি পেয়ে আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়তে পেরেছি।’ সামনে ক্রমান্বয়ে বৃষ্টি পেয়ে রেণু ও পোনা বিক্রির সেই সুদিন ফিরে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
হ্যাচারি মালিক সমিতির দেওয়া তথ্যমতে যশোরের ৩৬টি হ্যাচারিতে বছরে দেড় লাখ কেজি রেণু উৎপাদন হয়। যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। এসব রেণু ও পোনা পাইকার ব্যবসায়ীদের হাত ধরে চলে যায় দেশের বিভিন্ন জেলায়।
শহরের শংকরপুর নতুন বাস টার্মিনাল সংলগ্ন বাবলাতলা রেণু ও পোনা বিক্রি হাটে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসে পাইকার ব্যবসায়ীরা। বাস-পিকআপসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে এসব রেণু ও পোনা কিনে নিয়ে যান তারা। এর বাইরে হ্যাচারি থেকেও সরাসরি বা অনলাইনের মাধ্যমে রেণু ও পোনা বিকিকিনি হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
বাবলাতলা রেণু ও পোনা বাজারের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক বছর অনাবৃষ্টি ও তাপমাত্রার কারণে আমাদের এ হাটে পোনা বিক্রি কমে যায়। এরপর করোনার কারণে দুই বছরে ব্যবসায়ে ধস নামে। তবে এবছর আগেভাগে বৃষ্টি হওয়ায় বাজারে পাইকার ব্যবসায়ীরা আসতে শুরু করেছেন। তিনি বলেন, গত প্রায় দেড় সপ্তাহের দাবদাহের পর বৃষ্টি হওয়ায় পোনা বিক্রির গতি ফিরেছে। সামনে বৃষ্টি বাড়লে পুরোদমে জমে উঠবে এখানকার বেচাকেনা।