আজ চাঁদ দেখা গেলে কাল খুশির ঈদ

0

 

মহিউদ্দীন মোহাম্মদ ।।‘সকল ধরা মাঝে বিরাট মানবতা মুরতি লভিয়াছে হর্ষে,/আজিকে প্রাণে প্রাণে যে ভার জাগিয়াছে, রাখিতে হবে সারা বর্ষে/ এ ঈদ হোক আজ সফল ধন্য, নিখিল মানবের মিলনের জন্য;/ শুভ যা জেগে থাক, অশুভ ঘুরে যাক, খোদার শুভাশীষ পর্শে’ এই শিক্ষা নিয়ে বছর ঘুরে ফিরে এসেছে ঈদুল ফিতর আবার দুয়ারে। ঈদ মোবারক।

আজ ২১ এপ্রিল শুক্রবার সন্ধ্যায় যদি শাওয়ালের একফালি সরু চাঁদ দেখা যায় পশ্চিমের আকাশে তাহলে আগামীকাল ২২ এপ্রিল শনিবার, নতুবা ৩০টি রোজা পূর্ণ হয়ে ২৩ এপ্রিল রোববার সারা দেশে যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ-উৎসবের মধ্যদিয়ে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সদস্যরা সন্ধ্যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বায়তুল মোকাররম মিলনায়তনে বৈঠকে বসবেন।

এবার রমজান মাস ২৯ দিন ধরে ২২ এপ্রিল ঈদুল ফিতরের তারিখ নির্ধারণ করে ছুটির তালিকা করেছে সরকার। এক্ষেত্রে ২১ থেকে ২৩ এপ্রিল ঈদের ছুটি থাকবে। ২০ এপ্রিল ছুটি ঘোষণা হওয়ায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ১৯ থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৫ দিনের ছুটি পাবেন। এর মধ্যে ২১ ও ২২ এপ্রিল পড়েছে সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবার।

তবে রমজান মাস ৩০ দিন হলে ঈদুল ফিতর হবে ২৩ এপ্রিল। সেক্ষেত্রে ছুটি একদিন বাড়বে। ২৪ এপ্রিলও ছুটি থাকবে। ২০ এপ্রিল ছুটি হওয়ায় ১৯ থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৬ দিনের ছুটি ভোগ করতে পারবেন সরকারি কর্মচারীরা।

পবিত্র লাইলাতুল কদরের ছুটির পর ২০ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সরকারি অফিস খোলা থাকলেও ওইদিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে গত ১০ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সরকার টানা ছুটির সুবিধার জন্যে ২০ এপ্রিল সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। ঈদের ছুটিতে দূর-দূরান্তে প্রিয়জনদের সঙ্গে নির্বিঘ্নে যাতে ঈদ করতে যেতে পারেন সেজন্যে শবে কদর ও ঈদের ছুটির মাঝখানে একদিন কর্মদিবসেও ছুটির ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর এবারই প্রথম তীব্র গরমের মধ্যে দেশের মুসলমানরা বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন। ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ঈদের জামাতের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সারা দেশে ঈদের জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র‌্যাব ও পুলিশসহ আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক নজরদারি বজায় রাখবে। সাদা পোশাকে র‌্যাব এবং পুলিশ সদস্যরা তৎপর থাকবেন। প্রতি বছরের মতো এবারও দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায়। ইতোমধ্যে সেখানে ঈদের জামাতের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করেছেন।
ঈদুল ফিতরে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও শুভকামনা জানিয়ে আরও বাণী দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ঈদের দিন সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানসমূহের ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। এ ছাড়া ঈদের দিন দিবাগত রাতে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি আধা সরকারি ভবনসমূহে আলোকসজ্জা করা হবে।
বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বেসরকারি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলো ঈদের দিন বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে। ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন জাতীয় আঞ্চলিক দৈনিক পত্রিকা, নিউজ পোর্টালগুলো বিশেষ ঈদ সংখ্যা প্রকাশ করেছে।
ঈদের দিন দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, ছোটমনি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, আশ্রয়কেন্দ্র, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র ও দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্রসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।
বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ জাতীয় কর্মসূচি ও নিজ নিজ কর্মসূচির আলোকে ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন।
এ ছাড়া বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহে যথাযথ মর্যাদায় সরকারি কর্মসূচির আলোকে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে।
হিজরি বর্ষপঞ্জী অনুসারে রমজান মাসের শেষে শাওয়াল মাসের ১ তারিখে ঈদুল ফিতর উৎসব পালন করা হয়। তবে কোনও অবস্থাতে রমজান মাস ৩০ দিনের বেশি দীর্ঘ হবে না। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে রমজানের সমাপ্তিতে শাওয়ালের প্রারম্ভ গণনা করা হয়। ঈদের আগের রাতটিকে ইসলামী পরিভাষায় লাইলাতুল জায়জা (অর্থ: পুরস্কার রজনী) এবং চলতি ভাষায় চাঁদ রাত বলা হয়। শাওয়াল মাসের চাঁদ অর্থাৎ সূর্যাস্তে একফালি নতুন চাঁদ দেখা গেলে পরদিন ঈদ হয়, এই কথা থেকেই চাঁদ রাত কথাটির উদ্ভব। ঈদের চাঁদ স্বচক্ষে দেখে তবেই ঈদের ঘোষণা দেয়া ইসলামী বিধান। আধুনিককালে অনেক দেশে গাণিতিক হিসেবে ঈদের দিন নির্ধারিত হলেও বাংলাদেশে ঈদের দিন নির্ধারিত হয় দেশের কোথাও না-কোথাও চাঁদ দর্শনের ওপর ভিত্তি করে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে। দেশের কোনো স্থানে স্থানীয়ভাবে চাঁদ দেখা গেলে যথাযথ প্রমাণ সাপেক্ষে ঈদের দিন ঠিক করা হয়। ঈদের পূর্বে পুরো রমজান মাস রোজা রাখা হলেও ঈদের দিনে রোজা রাখা নিষিদ্ধ বা হারাম।
অপরদিকে ২ রাকাত ঈদের নামাজ ৬ তাকবির সহকারে ময়দান বা বড় মসজিদে পড়া হয়। ফজরের নামাজের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পর ঈদুল ফিতরের নামাজের ওয়াক্ত হয়। এই নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। ইমাম কর্তৃক জুমার নামাজের পূর্বে খুৎবা প্রদানের বিধান থাকলেও ঈদের নামাজের খুৎবা নামাজের পরে প্রদান করা বিধেয়। ঈদুল ফিতরের নামাজ শেষে খুৎবা প্রদান ইমামের জন্যে সুন্নত ; তা শ্রবণ করা মুসল্লীর জন্যে ওয়াজিব। সাধারণত ঈদের নামাজের পরে সমবেতভাবে মুনাজাত করা হয় এবং মুসলমানরা একে অন্যের সাথে মুসাফাহা ও কোলাকুলি পূর্ব্বক সম্ভাষণ বিনিময় করে থাকেন। ঈদের বিশেষ শুভেচ্ছাসূচক সম্ভাষণটি হলো ঈদ মুবারাক।
ঈদের নামাজ আদায় করতে যাওযার আগে একটি খেজুর কিংবা খোরমা অথবা মিষ্টান্ন খেয়ে রওনা হওয়া সওয়াবের কাজ। ঈদুল ফিতরের সুন্নতের মধ্যে রয়েছে গোসল করা, মিসওয়াক করা, আতর-সুরমা লাগানো, এক রাস্তা দিয়ে ঈদের মাঠে গমন এবং নামাজ-শেষে ভিন্ন পথে গৃহে প্রত্যাবর্তন। সর্বাগ্রে অযু-গোসলের মাধ্যমে পাক-পবিত্র হতে হবে।
বাংলাদেশসহ অন্যান্য মুসলিম প্রধান দেশে ঈদুল ফিতরই হলো বৃহত্তম বার্ষিক উৎসব।
বাংলাদেশে ঈদ উপলক্ষে সারা রমজান মাস ধরে সন্ধ্যাবেলা কেনাকাটা চলে। অধিকাংশ পরিবারে ঈদের সময়েই নতুন পোষাক কেনা হয়। ঈদের দিন ঘরে ঘরে সাধ্যমত বিশেষ আহারাদির আয়োজন করা হয়। ঈদের দিনে সেমাই বা অন্যান্য মিষ্টি নাস্তা তৈরি করার চল রয়েছে। রাজধানী থেকে ঈদের ছুটিতে প্রচুর লোক নাড়ির টানে নিজেদের বসতভিটেয় ফিরে আসেন। এ কারণে ঈদের সময়ে রেল, সড়ক ও নৌপথে প্রচন্ড ভিড় দেখা যায়।
ঈদের চাঁদ দেখার সময়কার আনন্দমুখর পরিবেশকে নিয়ে লেখা ও সুর করা কাজী নজরুল ইসলামের ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ ঈদের দিন ধ্বনিত হবে সবখানে।