আইডিয়ার লস প্রজেক্টে গরুর মাংস ২৯০ টাকা!

0

 

স্টাফ রিপোর্টার॥ যশোরে লস প্রজেক্টের ঈদ বাজারে স্বস্তি দিয়েছে ৫৫৭ পরিবারকে। এই বাজারে বিক্রি হয়েছে ২৯০ টাকা কেজি গরুর মাংস, ৮০ টাকা কেজি পোলাওয়ের চাল, ১২০ টাকা লিটার সয়াবিন তেল আর ৪৫ টাকায় চিনি! আর এই পণ্য কিনে সাথে উপহার হিসেবে মিলছে সেমাই, কিসমিস, বাদাম, গুড়োদুধ, মাংসের মসলা! এমনই বাজার খুলেছিল যশোরের আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থা। ‘মধ্যবিত্তের ঈদ বাজার’ নাম দিয়ে এভাবেই মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তের পাশে দাঁড়িয়েছে সংস্থাটি। এখানে বাজারের মোট ১২৭০ টাকার পণ্য একজন ক্রেতা কিনেছেন মাত্র ৫৩৫ টাকায়। মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) যশোর শহরের খড়কি এলাকায় আইডিয়া সমাজ কল্যাণ সংস্থা চত্বরে বসেছিল ব্যতিক্রমী এই ‘মধ্যবিত্তের ঈদ বাজার’।
বাজার করতে আসা খড়কি রেললাইন এলাকার বৃদ্ধা আমেনা বেগম বলেন, ‘স্বামী নেই। ছেলেরা ঠিকমত দেখে না। কবে গরুর গোস্ত খাইছি মনে নেই। ঈদির দিন গরুর গোস্ত খাতি পারবো। অল্প টাকায় দেচ্চে বইলে কিনতি পারিচি।’
খড়কি কবরস্থান এলাকার ভাড়াটিয়া রিকসাচালক আনোয়ারের স্ত্রী নাসিমা বেগম বললেন, ‘রমজান মাসে কম দামে চাল, তেল, চিড়ে, ছোলা কিনিছি। এখন অর্ধেকের কম দামে গরুর গোস্ত, পোলাও চাল পাচ্ছি। আমি আল্লার কাছে দোয়া করি, এরা যেন আর বেশি বেশি মানষির জন্যি করতি পারে।’
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পলাশ হোসেন এই বাজার থেকে পণ্য ক্রয় করে বলেন, ‘ ঈদের দিন হয়তো ব্রয়লার কিনতাম ছেলেমেয়ের জন্য। পোলাও কিংবা গরুর মাংসের কথা ভাবনায়ও আসতো না। সেখানে এই সংস্থার জন্যে আমরা সাধ্যের মধ্যে ক্রয়ক্ষমতা পেয়েছি। এবার ঈদে আমার ছেলেমেয়েও পোলাও-মাংসের স্বাদ নিতে পারবে।’
‘মানবকল্যাণে আমরা ঠকতে চাই’- এই শ্লোগানকে সামনে রেখে শিক্ষার্থীদের বসানো এই ভিন্নধর্মী এই বাজার দেখতে মঙ্গলবার দুপুরে সেখানে যান যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান, স্থানীয় সরকার বিভাগ যশোরের উপ-পরিচালক রফিকুল হাসানসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ।
পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান শিক্ষার্থীদের এই মহতী উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, ‘মাসব্যাপী আইডিয়ার এই ভিন্নধর্মী বাজার রীতিমত সাড়া ফেলেছে সারাদেশে। যশোরের একঝাঁক স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থী এভাবে যোগ হয়ে এই ভালো কাজ করছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয় ও অনুকরণীয়।’
আইডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান উপদেষ্টা সহকারী অধ্যাপক মো. হামিদুল হক শাহীন বলেন, ‘মধ্যবিত্তের ঈদ বাজার কোনো দান নয়, ত্রাণ নয়- বরং মধ্যবিত্তের সাধ্যের মধ্যে ক্রয়ক্ষমতা ফিরিয়ে আনার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। একঝাঁক শিক্ষার্থী যোগ হয়ে মাসব্যাপী মানবকল্যাণে ঠকতে চাওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলো রমযান মাসব্যাপী। সেখানে যুক্ত হয়েছিলেন নানান বিত্তবান ও চিত্তবান মহৎ মানুষেরা। সাধ্য থাকলেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর লাভের লোভের নির্মম শিকার হয়ে বহু মধ্যবিত্ত পরিবারের সাধ্যের বাইরে ঈদ বাজারের পণ্য সামগ্রী। আমরা যোগ হয়ে চেষ্টা করেছি কিছু সংখ্যক মধ্যবিত্ত পরিবারের ঈদ আনন্দের শামিল হওয়ার এবং সারাদেশের জন্য একটি মডেল উপস্থাপনের- এভাবে সকলে মিলে ভালো থাকা যায়।’
যশোর সরকারি এমএম কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. হামিদুল হক শাহীন প্রতিষ্ঠা করেছেন আইডিয়ী সমাজ কল্যাণ সংস্থা। বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩৩ জন শিক্ষার্থী এ সংস্থার স্বেচ্ছাসেবক।