বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে নির্মূল নীতি অবলম্বন করেছে সরকার : প্রিন্স

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হয়েই নিম্ন আদালতকে কব্জায় নিয়ে বিএনপিকে নির্মূলের নীতি অবলম্বন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।
তিনি বলেন, তারই ধারাবাহিকতায় আজ এক ফরমায়েসী রায়ে সাতক্ষীরায় সাবেক এমপি ও সাতক্ষীরা জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জন নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) বিকেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
প্রিন্স বলেন, ‘২০০২ সালের ৩০ আগস্ট সাতক্ষীরার কলারোয়ায় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও মিডনাইট ইলেকশনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার রায়ে বিএনপি’র সাবেক এমপি ও বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ চারজনের যাবজ্জীবন ও ৪৪ জনের সাত বছর করে কারাদণ্ডের যে রায় ঘোষণা করা হলো তা নিঃসন্দেহে ফরমায়েসী রায়। এর আগেও ২০২১ সালে তৈরি করা আইনে হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে ১০ বছরের সাজা দেয়া হয়েছে। বিরোধী দলকে নির্মূলের জন্য বেছে বেছে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অবৈধ সরকারের নির্দেশেই রায় দেয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘সাবেক এক প্রধান বিচারপতিকে বন্দুকের জোরে সরিয়ে দেয়াসহ আওয়ামী সরকারের নির্দেশে আদালতকে দিয়ে অনেক কিছুই করা হয়েছে এবং হচ্ছে। এসব কার নির্দেশে হচ্ছে সেটির জন্য বেশি লেখাপড়ার প্রয়োজন পড়ে না। সাধারণ জনগণও তা বুঝে গেছে। শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার আজকের রায়ও আওয়ামী সরকারের ইচ্ছার বাইরে হয়নি। আইন-আদালতকেও সরকার প্রতিহিংসা চরিতার্থের রাজনীতির অনুসঙ্গ করে ফেলেছে।’
তিনি বলেন, ‘একটি মামলাকে পরবর্তী সময়ে তিনটি মামলায় বিভক্ত করে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপি’র নেতাকর্মীদেরকে সীমাহীন ও নিষ্ঠুর নির্যাতন ও হয়রানি করা হয়েছে। হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ বিএনপি নেতাকর্মীরা এই ঘটনার সাথে জড়িত না থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে প্রতিহিংসার কারণে অবৈধ সরকার তাদেরকে এই মিথ্যা মামলার সাথে জড়িত করেছে। অথচ এফআইআরে হাবিবুল ইসলাম হাবিবের নামটি পর্যন্ত ছিল না। সেদিন হাবিবুল ইসলাম ঢাকায় অবস্থান করছিলেন, ঘটনাটি বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে ঘটে এবং ঘটনার পরপরই দুপুর ১টায় বিবিসি থেকে হাবিবুল ইসলাম হাবিবের ঢাকার টিঅ্যান্ডটি ফোনে ফোন করে সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। হাবিবুল ইসলাম হাবিব যদি ঘটনার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়ায় উপস্থিত থাকেন তবে তার পক্ষে কিভাবে সেদিনই ঢাকায় এসে ল্যান্ডফোনে বিবিসি’র সাথে কথা বলা সম্ভব? এই ঘটনায় কেউ হতাহত ছিল না, কিন্তু পরবর্তী সময়ে একজনকে আহত সাজিয়ে মামলা করা হলেও সেও সাক্ষী দিতে যায়নি, এমনকি যেসব সাংবাদিকদের সাক্ষী করা হয়েছিল, মূলধারার সংবাদপত্রের সাংবাদিকরাও এই সাজানো মামলায় সাক্ষী দেননি।’
প্রিন্স বলেন, ঘটনার এক যুগ পর পাকা রাস্তার ওপর থেকে একটি বুলেটের খোসা উদ্ধারের নাটক সাজিয়ে মামলাটিকে পরিচালনা করা হয়। আপনাদের (সাংবাদিক) কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই- তর্কের খাতিরে যদি বলি, সেসময় যদি সেখানে গুলি করার ঘটনা ঘটেও থাকে তাহলে এক যুগ পর রাস্তায় বুলেটের খোসা পাওয়া কি হাস্যকর কিংবা অসম্ভব নয়? প্রকৃতপক্ষে সেদিন তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী নিরাপত্তারক্ষীরাই দুই রাউন্ড গুলি ছুড়েছিল। এছাড়া সেখানে কোনো গুলির ঘটনা ঘটেনি। তাহলে এটা পরিষ্কার যে, কেবলমাত্র রাজনৈতিকভাবে হেনস্তা করতেই বিএনপি’র প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ চারজনকে যাবজ্জীবন এবং বাকিদের সাত বছর করে কারাদণ্ড প্রদানের ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।’
প্রিন্স আরো বলেন, ‘বিএনপি গণতন্ত্রে অঙ্গীকারাবদ্ধ একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। বিএনপি বরাবরই জনগণের শক্তিকে অবলম্বন করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছে। অতীতের মতো বর্তমান অবৈধ সরকার নানাভাবে নিজেরাই নাশকতার সৃষ্টি করে ‘উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে’ চাপানোর মতো পরিকল্পনা করে তা বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর এর দায় চাপানোর অংশ হিসেবে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ অন্যান্য নেতাকর্মীদের জড়ানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আজ যে দণ্ড ঘোষণা করা হলো তা সম্পূর্ণরূপে ফরমায়েসী। যতই দিন যাচ্ছে ততই একের পর এক সরকারের হিংস্র রূপের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে, মানবিক বিবেচনাগুলো পদদলিত করা হচ্ছে। আজকে আদালতের রায়ে সরকারের নিষ্ঠুর দানবীয় রূপের আরো একটি নতুন চেহারা দেখা গেল।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘দেশব্যাপী অত্যাচার, নিপীড়ন, লুণ্ঠন, দখল এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে এগুলোকে আড়াল করতেই সাজানো মিথ্যা মামলায় বিএনপি’র নেতৃবৃন্দকে জড়িয়ে আদালতকে ব্যবহার করে নির্দয় রায় দেয়া হচ্ছে, আজকের রায়ও সেই নিষ্ঠুরতার অংশ। সরকার ক্ষমতাসীন হয়েই নিম্ন আদালতকে কব্জায় নিয়ে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে যে নির্মূলের নীতি অবলম্বন করেছে, আজকের রায় সেটিরই ধারাবাহিকতা। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এই রায় ঘোষণার ঘটনা শুধু অবান্তর ও হাস্যকরই নয়, এটি একটি সুদূরপ্রসারী মাস্টারপ্ল্যানেরই অংশ। আমরা আজকের এই রায়ের বিরুদ্ধে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এর তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাচ্ছি।’
সোমবার রাতে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে বিএনপির ১৫ নেতা-কর্মী গ্রেফতার এবং রায় ঘোষণার পর এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল থেকে ছাত্রদলের ৬ নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়ে তাদের মুক্তিও দাবি করা হয় এই সংবাদ সম্মেলন থেকে।
বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু ও কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।