ফ্যাসিস্ট সরকারের চক্রান্ত্রের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে দুদক: মির্জা ফখরুল

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বর্তমানে আওয়ামী সরকারের ছত্রছায়ায় এবং পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের অনুগত ব্যবসায়ী, আমলা এবং নেতাকর্মীরা দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলছে এমন অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তাদের বিরুদ্ধে দুদক কোন পদক্ষেপ নেয় না। জনগণকে বিভ্রান্ত ও আন্দোলন দমন করতে নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে আবারও চক্রান্ত শুরু করেছে ফ্যাসিস্ট সরকার। আর এই চক্রান্ত্রের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে দুদক।
শনিবার ( ১৫ এপ্রিল)  দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান ব্যর্থ, দুর্নীতিবাজ, ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রতিহিংসার রাজনীতির কারণে সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এই প্রতিহিংসার পরায়ণ রাজনীতির শিকার স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তথা জিয়া পরিবার এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা জেনেছেন, গত ১৩ এপ্রিল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেছেন আদালত। এই প্রসিডিংস ফরমায়েশি এবং প্রতিহিংসামূলক। ১/১১ জরুরি অবস্থার অনৈতিক সরকার দেশকে বিরাজনীতিকরণের লক্ষে মাইনাস টু ফর্মূলাসহ রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে তাদের মিশন সফল করতে চেয়েছিল। সে সময় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয় এবং রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র তারেক রহমানের স্ত্রী এবং জিয়া পরিবারের সদস্য বিধায় ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধেও একই মিথ্যা মামলায় আসামি করা হয়। জনগণের কাছে রাজনীতিকে এবং একই সঙ্গে স্বাধীনতা, স্বার্বভৌমত্ব, বহুদলীয় গণতন্ত্র, উন্নয়ন সমৃদ্ধির ধারক ও বাহক জিয়া পরিবারকে হেয় প্রতিপন্ন ও বিতর্কিত করার অপচেষ্টায় বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা করা হয়।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ১/১১ জরুরি অবস্থার ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালের জরুরি অবস্থার সরকারের হাত ধরে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকার নিজেদের মামলাগুলো বিভিন্ন উপায়ে স্থগিত বা প্রত্যাহার করলেও বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, ডা. জোবাইদা রহমানসহ বিএনপি নেতৃবৃদ্ধের বিরুদ্ধে ১/১১ সরকারের দায়ের করা মামলাগুলো অব্যাহত রেখে সেগুলো ফরমায়েশি রায় দিয়ে তাদেরকে রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্র করেছে। যা আজও অব্যাহত আছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজ এমন এক সময় তারেক রহমান এবং ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হলো, যখন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হিরণ্ময় নেতৃত্বে বর্তমানে ব্যর্থ, অযোগ্য, দুর্নীতিবাজ সরকারের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী তীব্র গণ-আন্দোলন চলছে। ব্যাপক জনসম্পৃক্ত এই আন্দোলনে সরকার ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে দমন করার জন্য গুলি করে আন্দোলনকারীদের হত্যা করছে। বাঁধা, প্রতিবন্ধকতা, গ্রেপ্তার মিথ্যা মামলা দিয়ে নিষ্ঠুর দমন নিপীড়ন চালিয়েও আন্দোলন নসাৎ করতে পারছে না, জনস্রোত ঠেকাতে পারছে না। তাই, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে নেতাকর্মী ও জনসাধারণের মনোবল বিনষ্ট করতে সরকারের ইঙ্গিতে এই মামলা অব্যাহত আছে। বিএনপি এবং চলমান আন্দোলনকে নেতৃত্ব শূন্য করতে প্রতিহিংসাপরায়ণ সরকার মিথ্যা, বানোয়াট, কাল্পনিক অভিযোগে মামলা ও রায় দিয়ে গোয়েবলসের মতো মিথ্যাচার করছে। দুর্নীতি দমন কমিশন যেন আজ বিএনপি দমন কমিশনে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, যে সকল সম্পত্তির মালিক তারেক রহমান নন, কোন দলিল বা চুক্তিতে যেখানে তারেক রহমানের নাম, স্বাক্ষর বা সংশ্লিষ্টতা নাই, তাকে সেসব সম্পত্তির গায়েবি মালিক বানিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এমনকি তারেক রহমান এবং ডা. জোবাইদা রহমানের কর পরিশোধকৃত সম্পদ নিয়েও কাল্পনিক অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সরকারের নির্মম প্রতিহিংসায় দেশ আজ পুড়ে ছাড়খার হয়ে যাচ্ছে। সরকার দেশপ্রেমিক, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক কাউকেই রেহাই দিচ্ছেনা। চাঁদাবাজি, মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তার করে সকলের জীবন অতিষ্ঠ করে ফেলেছে। দেশে বিরাজমান সীমাহীন দুর্নীতির মহাতাত্তর দুদকের চোখে পড়ে না। বর্তমানে আওয়ামী সরকারের ছত্রছায়ায় এবং পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের অনুগত ব্যবসায়ী, আমলা এবং নেতাকর্মীরা দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলছে। তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ দুদক নেয় না। জনগণকে বিভ্রান্ত ও আন্দোলন দমন করতে নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে আবারও চক্রান্ত শুরু করেছে ফ্যাসিস্ট সরকার। আর এই চক্রান্ত্রের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে দুদক।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা ইতিপূর্বেও বলেছি এই ১/১১ থেকেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও দেশনায়ক জনাব তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে সরানোর একটা স্কিম কাজ করছে, যা বর্তমানেও অব্যাহত রয়েছে। আর তারই অংশ হিসেবে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগে আগে অর্থাৎ ২০১৮ সালে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে সাজা দেওয়া হয়েছিল। এখনও ঠিক একই কায়দায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আগে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে একতরফাভাবে সাজা দেওয়ার সকল প্রকারের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে এই সরকার। তারেক রহমান ও ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে তা অবান্তর, ভিত্তিহীন, অমূলক। চার্জ গঠন করে মামলার একতরফা যে রায় দেওয়া হবে তা হবে প্রতিহিংসামূলক ফরমায়েশি। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি সরকারের হীন এই কর্মকা-ের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছে।