যমেক শিক্ষার্থী নির্যাতনের মামলার ভবিষ্যত নিয়ে সংশয়

0

মীর মঈন হোসেন মুসা ॥ যশোর মেডিকেল কলেজ (যমেক) শিক্ষার্থী জাকির হোসেন বিপ্লবের নির্যাতনের মামলার ভবিষ্যত নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। নির্যাতনের ঘটনায় পরিবারের মামলা গ্রহণে পুলিশ প্রথম থেকেই নানা অজুহাতে তালবাহনা করে আসছিলো। পরে আদালতের আদেশে কোতয়ালি থানা পুলিশ মামলাটি গ্রহণ করে। কিন্তু পরবর্তীতে বাদী নির্যাতিত জাকির হোসেনের ভাই জাহাঙ্গীর আলম এফিডেভিটের মাধ্যমে মামলা থেকে আসামিদের নাম ‘প্রত্যাহার’ করে নেন। আর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলছেন, নির্যাতনের অভিযোগের কোনো সাক্ষীও পাওয়া যাচ্ছে না ! এ কারণে ওই মামলার ভবিষ্যত নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে।
গত ৩১ জানুয়ারি রাতে চাঁদার দাবিতে যমেক হোস্টেলের ১০৫ নম্বর কক্ষে শিক্ষার্থী জাকির হোসেন বিপ্লবকে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। পরে নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ঘটনাটি প্রকাশ পায়। অভিযোগ করা হয়, যমেক শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের কতিপয় কর্মী চাঁদার দাবিতে তাকে মারধর করেছেন। এ ঘটনায় সর্বত্র তোলপাড় শুরু হয়। তবে ওই ঘটনায় নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর ভাই রেলওয়ের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম কোতয়ালি থানায় অভিযোগ করলেও পুলিশ তার মামলা গ্রহণ করেনি।
ওই সময় কোতয়ালি থানা পুলিশের ওসি মো. তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, যমেক কর্তৃপক্ষ ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরই মামলা গ্রহণে পদক্ষেপ নেয়া হবে। ফলে কোনো উপায় না পেয়ে রেলওয়ে প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম ৭ জনের নাম উল্লেখ করে গত ৯ ফেব্রুয়ারি আদালতে মামলা করেন। পরে ১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে আদালতের আদেশে অভিযোগটি কোতয়ালি থানায় নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়। মামলায় যাদেরকে আসামি করা হয়েছিলো তারা হলেন, যশোর মেডিকেল কলেজের ৪র্থ ব্যাচের শিক্ষার্থী শামীম হোসেন, ৫ম ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান আকাশ, ৬ষ্ঠ ব্যাচের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান লিয়ন, ৯ম ব্যাচের শিক্ষার্থী শাকিব আহমেদ তনিম, সৌম্য সাহা, ১০ম ব্যাচের শিক্ষার্থী তন্ময় সরকার ও ৭ম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাসেল। এর মধ্যে রাসেল মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু কোতয়ালি থানায় মামলা রেকর্ডের ১০ দিনের মাথায় বাদী জাহাঙ্গীর আলম এফিডেভিটের মাধ্যমে আসামিদের নাম প্রত্যাহার করে নেন। একইদিন আসামিরা আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাদের জামিন আবেদন মঞ্জুর হয়।
ভাইকে নির্যাতনের ঘটনায় কোতয়ালি থানায় মামলা রেকর্ড করতে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি রেলওয়ের প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমকে। পুলিশ গ্রহণ না করায় শেষ পর্যন্ত তাকে আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়েছিলো। কিন্তু সেই মামলা থেকে কেন তিনি আসামিদের নাম প্রত্যাহার করে নিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম এই প্রতিনিধিকে বলেছিলেন, তাদের বাড়ি দূরে। মামলা পরিচালনায় যশোরে যাতায়াতে সমস্যা হতে পারে এই কারণে তিনি আসামিদের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। কিন্তু তার এই জবাব ভিন্নভাবে দেখছেন অনেকে। আসামিদের নাম প্রত্যাহারের নেপথ্যে প্রভাবশালী মহলের কোনো চাপ ছিলো কি-না এনিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতয়ালি থানা পুলিশের এসআই খান মাইদুল ইসলাম রাজিব জানান, বাদী এফিডেভিটের মাধ্যমে আসামিদের নাম প্রত্যাহার করে নেয়ায় মামলার গুরুত্ব কমে গেছে। তাছাড়া তদন্তকালে ঘটনাস্থলের কোনো সাক্ষীও পাওয়া যাচ্ছেনা। ফলে মামলাটি নিয়ে তিনিও সমস্যার মধ্যে রয়েছেন।