যবিপ্রবিতে ছাত্র নির্যাতনকারীদের স্থায়ী বহিষ্কার দাবি

0

 

যবিপ্রবি সংবাদদাতা॥ যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) এক শিক্ষার্থীকে হলে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন ও ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসন। সাময়িক বহিষ্কারের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই দুই শিক্ষার্থীর স্থায়ী বহিষ্কার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
নির্যাতনের দিন রোববার রাতেই একদফা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ইসমাইলের সহপাঠীরা। ঠিক তার পর মুহূতেই তাদেরকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ফাঁসানো হচ্ছে দাবি করে পাল্টা মানববন্ধন করেন নির্যাতনকারীর সহপাঠী কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পরদিন সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক,শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে একাত্মতা ঘোষণা করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর ফয়সাল। তবে আবাসিক হল ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কারের প্রতিক্রিয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও ইসমাইলের সহপাঠী সুমাইয়া সিদ্দিকা ফেসবুকে লেখেন, শুধুমাত্র অভিযুক্ত নির্যাতনকারী শিক্ষার্থীই নয়, তাদের পেছনে সাহসদাতা, মদদদাতা, ইন্ধনদাতা যে বা যারাই হোক তাদের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের হলে বসে এভাবে অমানুষিক নির্যাতন করার সাহস শুধুমাত্র অভিযুক্ত নির্যাতনকারী শিক্ষার্থীদের থাকার কথা না। এর পেছনে অবশ্যই কেউ না কেউ সাহস, ইন্ধন, আশ্রয় দিচ্ছে। যদি পর্দার আড়ালের সাহসদাতা, আশ্রয়দাতাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না করা হয় তবে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতেই পারে। যবিপ্রবিতে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা যেন না ঘটে, তার জন্যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা সময়ের দাবি। ‘আবরার হত্যা’ ঘটনার পুনরাবৃত্তি যবিপ্রবিসহ বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন না ঘটে তার জন্যে যবিপ্রবি প্রশাসনের প্রতি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি শোয়েব, সালমানসহ বাকি দোষীদের বের করে (হত্যা চেষ্টার শাস্তি) মৃত্যুদন্ড হোক।
রসায়ন বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী রাশেদ খান তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে লেখেন, যবিপ্রবি সিএসই বিভাগের একজন ছাত্রলীগ কর্মী যখন কনভোকেশনের লোগো প্রতিযোগিতায় ফার্স্ট হলো, তখন তার সবটুকু ক্রেডিট যবিপ্রবি ছাত্রলীগ ইউনিট গ্রহণ করলো। তার এই অর্জনটুকু ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা সার্বজনীনভাবে অভিনন্দন জানিয়ে পোস্ট করলো। অথচ, সালমান আর শোয়েবের মত কর্মীদের এই জঘন্য অপরাধের দায় ছাত্রলীগ কেন নিতে চাইছে না? মারুফ, রনিরা ভিক্টিম ইসমাইলকে হল থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার না করলে হয়তো আর একটি “আবরার ট্রাজেডি” যবিপ্রবির শহীদ মসিয়ূর রহমান হলে রচিত হতে পারতো। বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, আর এই সংগঠনের ঐতিহ্যকে জলাঞ্জলি দিয়ে যারা ঔদ্ধত্যের ঔরসজাত অহমে ধরাকে সরা জ্ঞান করে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের কাছে একটি বিতর্কিত সংগঠনে পরিণত করেছে, সেইসব নেতা কর্মীর প্রতি একরাশ ঘৃণা। যেকোনো অপ্রীতিকর ইস্যুতে “ব্যক্তির দায় সংগঠন গ্রহণ করবে না” বলে যে দায় মুক্তির অলিখিত অধ্যাদেশ জারি করার সংস্কৃতি, এটা উচ্ছ্বংখল ছাত্রদের ভবিষ্যতের জন্য একটি সর্তকবার্তা হয়ে রইলো।
পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষার্থী চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নবী নদী বলেন, বাড়ি থেকে পরিবার-পরিজন ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে এই বিশ্ববিদ্যালয়কেই আমরা সেকেন্ড হোম বলি। বাড়ির পরেই নিরাপদ আবাসস্থল হওয়ার কথা ছিল আমাদের এই সেকেন্ড হোম। কিন্তু যে বা যারা আমাদের এই আবাসস্থলের নিরাপত্তা ও শান্তি বিঘিœত করার প্রচেষ্টায় আছে তাদের সবার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যাবস্থা নিয়ে আমাদের নিরাপদ আবাসস্থলের নিশ্চয়তা দিতে হবে। নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই যেখানে শিক্ষার্থীরা নিজেদের বাড়ির মতই নিরাপদে নিশ্চিন্তে থাকবে।
যবিপ্রবির প্রাক্তন শিক্ষার্থী মাহাফুজ হোসেন মেঘ মন্তব্যে বলেন, যারা এই ঘটনা ঘটালো তারা কোন আদর্শের অনুসারী? নাকি তারা সাধারণ শিক্ষার্থী? ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে শাস্তি বাস্তবায়ন করা যেমন জরুরি, তেমনি এই জঘন্য কাজ করার জন্যে তারা কিভাবে বা কোথা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে সেটাও বের করা উচিত,মারধর,চাঁদাবাজি,সিন্ডিকেট, নেশা এই শব্দ গুলো এখন কমন হয়ে গেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে।পরিবর্তন আসুক সবখানে।
২ এপ্রিল যবিপ্রবির শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের ৫২৮ নং রুমে প্রায় ৪ ঘন্টা ধরে ইসমাইল হোসেন নামের এক শিক্ষার্থীকে আটকে রেখে রড, জিআই পাইপ ও বেল্ট দিয়ে মারধর করে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী শোয়েব ও সালমান।