সরকার ঘোষণা দেয় কিন্তু কমায় না কোম্পানি, এলপিজি ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম কমেনি মোটেও

0

আকরামুজ্জামান ॥ বেসরকারি তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ২৪৪ টাকা কমিয়ে ১ হাজার ১৭৮ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। যা এর আগে ১ হাজার ৪২২ টাকা নির্ধারিত ছিলো। গত রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে নতুন এই দাম কার্যকর করার ঘোষণা দেয় বিইআরসি।
তবে দাম কমলেও যশোরের খুচরো ও পাইকারি বাজারে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে এলপিজি গ্যাস। ফলে দাম কমার সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ভোক্তারা। খুচরো ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম কমানো হলেও এখনো পর্যন্ত পরিবেশক পর্যায়ে আগের দামে গ্যাস বিক্রি হচ্ছে। নতুন দামের গ্যাস বাজারে আসা না পর্যন্ত তাদের আগের দামেই গ্যাস বিক্রি করতে হবে জানান তারা।
মঙ্গলবার যশোরের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, প্রতি ১২ কেজি সিলিন্ডারের এলপিজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা করে। দাম কমার দুদিন পরও কেনো বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে খুচরো দোকানদাররা বলেন, সরকার পর্যায়ে দাম কমানো হলেও এখনো পর্যন্ত কোম্পানি পর্যায়ে দাম কমানো হয়নি। যে কারণে আগের বাড়তি দামেই গ্যাস বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। নতুন দামের গ্যাস না আসা পর্যন্ত আগের দামেই গ্যাস বিক্রি করবেন বলে ব্যবসায়ীরা জানান।
শহরের বকুলতলার শিমু এন্টারপ্রাইজের মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের সরকার নির্ধারিত দামে গ্যাস বিক্রি করতে কোনো আপত্তি নেই। সরকার দাম কমাচ্ছে অথচ কোম্পানি পর্যায়ে দাম কমছেনা। এমন পরিস্থিতিতে আমরা বেকায়দায় পড়েছি। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট একটা সিদ্ধান্ত আসা উচিৎ বলে তিনি মন্তব্য করেন।
পাশেই মেসার্স মামুন এন্টারপ্রাইজ এন্ড চুলা ঘরের স্বত্বাধিকারী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এলপিজির ব্যবসা এখন আমাদের গলার কাটা হয়ে দেখা দিয়েছে। প্রতিনিয়ত দাম নিয়ে আমাদের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। তিনি বলেন, রোববার সন্ধ্যা থেকে নতুন দাম কার্যকর ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলেও মঙ্গলবারও(৪ এপ্রিল) আমাদের ডিলার পয়েন্ট থেকে বাড়তি দামে গ্যাস কিনতে হয়েছে। প্রতি ১২ কেজি বসুন্ধরা গ্যাসের সিলিন্ডার ১৩০০ টাকা, যমুনা ১২৩০, ওমেরা ১২৫০, বেক্সিমকো ১২৫০ টাকা ও অন্যান্য গ্যাস ১২০০ টাকা করে কিনতে হয়েছে পাইকার পর্যায় থেকে। খুচরো পর্যায়ে পরিবহন খরচসহ আমরা যদি ৫০ টাকাও লাভ করি তাতে প্রতি সিলিন্ডারে আরও ১০০ থেকে ১৫০ টাকা যোগ হয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে আমাদের। অথচ নতুন নির্ধারিত দামে গ্যাস বিক্রি করলে আদের সিলিন্ডার প্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা লোকসান হবে।
কাদের এন্টারপ্রাইজের বিক্রয় প্রতিনিধি সুমন বলেন, সরকার এলপিজির দাম কমানোর ঘোষণার পর থেকেই গ্রাহকরা আমাদের কাছে কম দামে গ্যাস দেয়ার জন্যে বলছে। অনেকের সাথে আমাদের ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে।
এ বিষয়ে শহরের পালবাড়ী এলাকার সোনালী ট্রেডার্সের ম্যানেজার ফসিয়ার রহমান বলেন, নতুন নির্ধারিত দামে কিছু গ্যাস বিক্রি করা গেলেও বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, যমুনা, ওমেরাসহ কিছু গ্যাস দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। কোম্পানি পর্যায়ে এখনো এসব গ্যাসের দাম বাড়তি। তিনি বলেন, গ্যাসের দাম সরকার কমালেও কোম্পানি পর্যায়ে না কমানোর কারণে আমাদেরকে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।
এ বিষয়ে যশোর এলপি গ্যাস ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক একেএম শামসুল কাদের বলেন,এলপিজির দাম কমছে শুধু ঘোষণায়। একদিকে কোম্পানি থেকে এক ধরনের দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে, অন্যদিকে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) দাম কমানোর ঘোষণা দিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে খুচরো ব্যবসায়ীরা চরম সংকটে রয়েছে। এর আগেও যখন দাম কমানোর ঘোষণা দেয়া হয় তখন এমন পরিস্থিতি হয় বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ও কোম্পানির মালিকদের সাথে বসা উচিৎ। নইলে খুচরো ব্যবসায়ীদের এ ব্যবসা ছেড়ে দেয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবেনা।