উপাচার্যের অডিও ভাইরাল ইবি’র নিয়োগ বোর্ডের প্রশ্নপত্র ফাঁস!

0

ইমানুল সোহান,ইবি॥ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বোর্ড, প্রশ্নপত্র ফাঁস, চাকরির বিনিময়ে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত পাঁচটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভাইরাল হওয়া অডিওতে উপাচার্যের কথোপকথনের বিষয়টি স্পষ্টভাবে শোনা গেছে। তবে উপাচার্য অডিওর কথাগুলো নিজের বলে স্বীকার করলেও সেগুলো ভিন্ন কনটেক্সটে প্রচার করা হয়েছে বলে দাবি তার। এদিকে অডিও ভাইরালের ঘটনায় বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ও প্রগতিশীল শিক্ষক সংগঠন ‘শাপলা ফোরাম। এছাড়াও উপাচার্যের অপসারণ চেয়ে কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছে অস্থায়ী চাকরিজীবী পরিষদ। অন্যদিকে ওই ঘটনায় ইবি থানায় জিডি (জিডি নং ৬৭২) করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। জানা যায়, গত ২ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি এ বিভাগের নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হবে। এতে চাকরি প্রত্যাশী তিনজন আবেদন করেছেন। তিনজনের একজন চাকরি প্রার্থী অলিউর রহমান। যার সাথে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের অডিওটি ভাইরাল হয়েছে। এতে নিয়োগ বোর্ডের আগে প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ বোর্ডের বৈধতার জন্য প্রার্থী সংগ্রহের কথা বলা হয়েছে। তবে চাকরি প্রার্থী অলিউর রহমান বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। বৃহস্পতিবার আনুমানিক রাত ১০টার দিকে ফারহা জেবিন নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে তিনটি অডিও ভাইরাল হয়। এর ৬মিনিট ১৬ সেকেন্ডের প্রথম অডিওতে চাকরি প্রার্থী অলিউরকে তিনজন প্রার্থী সংগ্রহ করতে বলা হয়। যাতে নিয়োগ বোর্ড করানো যায়। এছাড়াও পূর্বে স্থগিত হওয়া নিয়োগ বোর্ড পুনরায় পুনঃনিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হবে বলে তুলে ধরা হয়। অডিওতে বলা হয়, ‘আচ্ছা আপনি সব দিয়ে রেডি থাকেন। যেদিন সব দিয়ে দিবেন তার একুশ দিনের মাথায় গোছায় দিব।’
এদিকে ১মিনিট ২৯ সেকেন্ডের দ্বিতীয় অডিওতে নিয়োগ বোর্ডের দশটি প্রশ্ন পছন্দের প্রার্থীকে জানিয়ে দেয়া হয়। অডিওতে বলা হয়,‘খুব চমৎকার করে একবারে চুম্বক লেখা আছে আরকি, দশটা আইটেম।’ এছাড়াও অডিওতে অলিউর রহমানকে ইংরেজিতে প্রস্তুতি রাখতে বলা হয়। তৃতীয় অডিওতেও একই বিষয় বলা হয়েছে। অন্যদিকে শুক্রবার আনুমানিক রাত ১১টার দিকে মিসেস সালাম আইডি থেকে দুইটি অডিও ভাইরাল করা হয়। এর প্রথম অডিওতে শিক্ষক নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি উঠে আসে। অডিওতে বলা হয়,‘ এ বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন প্রার্থীর কাছ থেকে ১৬ লাখ ১৮ লাখ করে টাকা নেয়, টিচার নেয়, কর্মকর্তা-কর্মচারী নেয়। এমনকি কনট্রাক্টর নেয়।’ শেষ অডিওতে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত অস্থায়ী চাকরিজীবীদের অধিকাংশই ছাত্রলীগ করেন। এতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সন্ত্রাসী বলা হয়। এদিকে অডিও ভাইরালের পর উপাচার্যের নির্দেশক্রমে শুক্রবার রেজিস্ট্রার ইবি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এতে উল্লেখ করা হয়,‘ বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে ফারহা জেবিন নামের একটি ফেইসবুক আইডি থেকে ইবি ভিসির ‘কন্ঠ সদৃশ’ কথোপকথন প্রচারিত হয়েছে। যা ভবিষ্যতের জন্য সাধারণ ডায়েরিভুক্ত করার আবেদন করা হলো।’
এমন ঘটনা শনিবার বিবৃতি দিয়েছে শিক্ষক সমিতি ও শাপলা ফোরাম। বিবৃতিতে বলা হয়,‘ উপাচার্যের এমন মন্তব্যে শিক্ষক সমিতি হতবাক ও বিস্মিত। প্রচারিত অডিও এর বক্তব্যের বিষয়ে অনতিবিলম্বে উপাচার্য মহোদয়ের অবস্থান জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে। একই কথার উল্লেখ রয়েছে শাপলা ফোরামের বিবৃতিতেও। এদিকে অস্থায়ী চাকরিজীবী পরিষদ উপাচার্যের কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ করেছে। অস্থায়ী চাকরিজীবী পরিষদের সভাপতি মিজানুর রহমান টিটু দেশ বলেন,‘ আমরা এই দুর্নীতিবাজ উপাচার্যের অপসারণ চাই। তবে তালা দেয়ার বিষয়টি তারা অস্বীকার করেছে। উপাচার্যের অপসারণ না হলে কঠোর আন্দোলন করার হুশিয়ারি দেয় তারা।
এ বিষয়ে চাকরি প্রত্যাশী অলিউর রহমান বলেন, ‘ শিক্ষক হিসেবে তার সাথে আমার কথা হয়েছে। এর সাথে আমার কোনরকম সংশ্লিষ্টতা নেই। অডিও কথোপকথনের বিষয়ে  তিনি জানান, ‘ আমার মন্তব্য নেই।’বিষয়গুলো নিয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার বলেন,‘নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি হিসেবে উপাচার্য কখনোই কোন প্রার্থীর সাথে এরূপ কথা বলতে পারেন না।’ অডিও ভাইরালের বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘অডিওর শব্দগুলো আমার, তবে কনটেক্সটগুলো ফেক। রুচিহীন মানুষের দ্বারা এসব কাজ সম্ভব। এটা উদ্দেশ্য প্রণোদিত কাজ। তবে এসব অপপ্রচারের বিষয়ে শিক্ষক সমিতি বিবৃতি দিলে আমি খুশি হতাম। কিন্তু তারা আমার কাছে না জেনেই একটি বিবৃতি দিয়েছে। আমি অন্যায় করলে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তিনি আরও জানান,‘ আমার অতো পয়সা নেই আইন আদালতে যাওয়ার মতো। বিষয়টি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হয়েছে। তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’