ভাঙনের কবলে দুবলার সবচেয়ে বড় শুটকিপল্লী আলোরকোল

0

নজরুল ইসলাম আকন,শরণখোলা (বাগেরহাট)॥ ভাঙনের কবলে বিলীন হতে চলেছে সুন্দরবনের দুবলার চরের সবচেয়ে বড় শুটকি পল্লী আলোরকোল ও মাঝিরকিল্লা। কয়েকবারের সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে আলোরকোল চরের একটি বড় অংশ বিলীন হওয়ায় এ বছর মৌসুমী জেলেরা থাকার ঘর এবং শুটকির মাচা তৈরি করতে স্থান সংকটে পড়েছেন । দুবলা অফিস, আলোরকোল ও কটকা সমুদ্র পাড়ের কিছু অংশে বালুর বস্তা ফেলে ভাঙ্গন প্রতিরোধের চেষ্টা করা হলেও সমুদ্রের প্রবল ঢেউ ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে তা তেমন কোন কাজে আসছে না।
সাগর দীপ দুবলার চরের সবচেয়ে বড় জেলে পল্লী হচ্ছে আলোরকোল। প্রতিবছর শুটকি মৌসুমে প্রায় ১০ হাজার মৎস্যজীবী সাগরে মাছ ধরতে এসে বাসা বাঁধেন সুন্দরবন অধ্যুষিত আলোরকোল চরে। প্রতিবেশী মাঝির কিল্লা চরেও থাকেন দুই হাজারের বেশি জেলে। প্রতি বছর ১ নভেম্বর থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত পাঁচ মাস এখানে মৎস্য কেন্দ্রিক নানামুখী কর্মযজ্ঞে তৎপর থাকেন তারা। কিন্তু যুগ যুগ ধরে শুটকি পল্লীর জন্য ব্যবহৃত তিন কিলোমিটারের এ মৎস্য পল্লী এখন ভাঙনের কবলে পড়ে সংক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছে। কিছু জায়গার গাছ কেটে নতুন ঘর ও মাঁচা তৈরি করতে হয়েছে।
অফিস কিল্লার সুকুমার বহদ্দর, সাতক্ষীরার প্রতাপ নগরের জেলে  রেজাউল হকসহ অন্যান্য জেলে ও ব্যবসায়ীরা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, আলোরকোল ও মাঝিরকিল্লা চর বিলুপ্ত হলে হুমকির মুখে পড়বে দেশের সামুদ্র কেন্দ্রিক শুটকি শিল্প। পেশা হারিয়ে বেকার হয়ে পড়বে কয়েক লাখ মানুষ। শুটকি শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে তারা বিকল্প চরের ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
জেলেরা আরও জানান, প্রতি বছর এসব চর থেকে জেলেরা বনবিভাগকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব দিয়ে থাকেন। ২০২২ সালে এ সব চর থেকে শুটকি আহরণ ও বিপণণ করে প্রায় পৌনে চার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে বনবিভাগ। এবছর শুটকি পল্লী থেকে চার কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া এ ব্যবসা থেকে থেকে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে প্রায় পাঁচ লাখ লোক উপকার ভোগ করে থাকেন। জানা যায়, ৫০ বছরের অধিককাল সুন্দরবন ঘেষা এ সাগরদ্বীপে শুটকীপল্লী গড়ে তোলেন চট্টগ্রামসহ দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলার বাসিন্দারা ।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের ডিএফও মোঃ বেলায়েত হোসেন জানান, বালুর বস্তা (জিও ব্যাগ) ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের প্রাথমিক চেষ্টা চলছে। সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য ভাঙন কবলিত এলাকায় সিসি ব্লক স্থাপনের আবেদন জানানো হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে।