১৮ বছর বন্ধ তারপরও বিদ্যালয়ের অনুমোদন!

0

বাঘারপাড়া (যশোর) সংবাদদাতা॥ শিক্ষার্থী, অবকাঠামো, শিক্ষাউপকরণ সঙ্কটে প্রতিষ্ঠার পরই বন্ধ হয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটি। বন্ধ অবস্থায় থাকে প্রায় ১৮বছর। এরপরও পাঠদানের অনুমতি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও যশোর শিক্ষাবোর্ড। অভিযোগ উঠেছে, একটি অসাধুচক্র নিয়োগ বাণিজ্য করতে উৎকোচের বিনিময়ে এ অনুমতি সংগ্রহ করেছে। মফস্বল এলাকায় নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ন্যূনতম নীতিমালাও এখানে মানা হয়নি। তারপরও গত বছরের শেষ দিনে পাঁচ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৪ সালে ‘রোস্তমপুর দেবীনগর কৈখালী আয়াপুর (এডিকে) নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি’ যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার বাসুয়াড়ি ইউনিয়নের আয়াপুর গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয়। আয়াপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে চার কক্ষের স্কুলটি প্রতিষ্ঠার সময় বাঁশের বেড়া ও ছাউনিতে টিন ব্যবহার করা হয়েছে। প্রাথমিক অনুমতিপ্রাপ্ত নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি থেকে মাত্র ৩ শ গজ পশ্চিমে মাহমুদপুর সিএসসি নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, ১ কিলোমিটার পূর্বে মাহমুদপুর দাখিল মাদ্রাসা এবং দেড় কিলোমিটার দক্ষিণে মাহমুদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজও সেখানে হয়নি কোনো দিন পাঠদান। ভর্তিও হয়নি কোনো শিক্ষার্থী। কাম্যসংখ্যক বই থাকার বিধান থাকলেও প্রতিষ্ঠানটিতে লাইব্রেরির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেলো না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে পর্যাপ্ত জমিও নেই এখানে। যা আছে সেখানেও মামলা চলমান। প্রস্তাবিত প্রতিষ্ঠানের চতুর্দিকে বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানসমূহের দূরত্বের সনদও নেই এখানে। এছাড়াও স্কুল ক্যাচমেন্ট এলাকায় জনসংখ্যাও সাড়ে ৩ হাজারের (রোস্তমপুর গ্রামে-৬ শ, আয়াপুরে-১ হাজার ৩৫জন, কৈখালি-১ হাজার ৬শ ১০জন) বেশি নয়। তারপরও গত বছরের ১৩ অক্টোবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত পাঠদান ও একাডেমিক স্বীকৃতির অনুমোদন দেয় মন্ত্রণালয়। এরপর একই বছরের ২৫ অক্টোবার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড যশোরের বিদ্যালয় পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রাথমিক পাঠদানের অনুমতি পায় প্রতিষ্ঠানটি।
নিয়মে আছে, মফস্বল এলাকায় নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় হতে গেলে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে অন্যটির দূরত্ব হতে হবে ন্যূনতম ২কিলোমিটার, এলাকার জনসংখ্যা হতে হবে দশ হাজার, জমির পরিমাণ ০.৫০একর, শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা তিনটি, দুইটি অফিস কক্ষ (একটি শিক্ষক ও অন্যটি অফিস), একটি লাইব্রেরি কক্ষ একটি কমনরুম ও তিনটি টয়লেট থাকতে হবে। এ ছাড়াও প্রস্তাবিত প্রতিষ্ঠানে বইয়ের সংখ্যা এক হাজার ও শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রতি শ্রেণিতে ন্যূনতম ৩০ জন করে থাকতে হবে। কিন্তু এ সকল শর্ত না মেনেই প্রতিষ্ঠানটির প্রাথমিক অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, সম্পূর্ণ অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্য চূড়ান্ত করতে গত বছরের শেষ দিনে পত্রিকায় পাঁচটি পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। যেখানে একজন করে ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী, নিরাপত্তাকর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, অফিস সহায়ক, আয়া ও নৈশ প্রহরীর পদ রয়েছে। স্বুল এলাকার ইউপি সদস্য শিমুল হোসেন বলেন,‘যেখানে পাশের একটি বিদ্যালয় শিক্ষার্থী সঙ্কটে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে সেখানে নতুন এ প্রতিষ্ঠানটি কিভাবে চলবে? তিনি আরও বলেন, শিক্ষা মূল বিষয় নয়, সম্পূর্ণ অসৎ উদ্দেশ্যে এ প্রতিষ্ঠানটি করা হয়েছে’। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, রিসিভ করে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোনটি বন্ধ করে দেন। অনেকবার চেষ্টা করেও আর সংযোগ পাওয়া সম্ভব হয়নি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ জাকির হাসান বলেন,‘এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। এমনকি সে প্রতিষ্ঠান থেকে আমার কাছে আজ পর্যন্ত কেউ আসেনি’।
যশোর শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম বলেন,‘ গত বছরের ৩০ অক্টোবরের আগ পর্যন্ত পাঠদানের অনুমোদনের কাজটি করতো শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর যশোর শিক্ষাবোর্ড দায়িত্ব পায়। কিন্তু এখনো বোর্ড কোনো মঞ্জুরী কমিশনের মিটিং করেনি। তাই যে আদেশটি প্রতিষ্ঠানটি পেয়েছে তা মন্ত্রণালয়ের আদেশ আদিষ্ট হয়ে যশোর শিক্ষা বোর্ড চিঠি পাঠিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমি ১০ অক্টোবর যোগদান করে এখনো বাঘারপাড়ার কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করিনি’।