মৌসুমে বর্ণিল ফুলের রাজ্য

0

 

আকরামুজ্জামান ॥ ফুল চাষ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন যশোরের গদখালীর ফুল চাষিরা। নতুন বছরের বিশেষ দিনগুলোকে সামনে রেখে নানান জাতের ফুলের চারা রোপণ ও পরিচর্যা করছেন তারা। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফুল চাষে লাভবান হবেন বলে আশা তাদের। ইতোমধ্যে বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফুল বিক্রি হয়েছে বলে গদখালীর চাষিরা জানিয়েছেন।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি ও পানিসারা ইউনিয়নের বহু চাষি আছেন যারা দীর্ঘদিন ফুল চাষের সাথে যুক্ত। তাদের উৎপাদিত রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকাসহ ১১ ধরনের ফুল সারা দেশের মানুষের মন রাঙাচ্ছে। করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় ফুলের বাজার ধরার চেষ্টা করছেন ফুল চাষিরা। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সাধ্যমতো ফুল চাষ করেছেন তারা।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গদখালীর পানিসারায় গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠে শুধু ফুল আর ফুল। করোনার টানা দুই বছরের মন্দাভাব কাটিয়ে উঠে সাধ্যমত ফুল চাষ করেছেন গদখালীর ফুল চাষিরা। ইতোমধ্যেই তাদের উৎপাদিত ফুলের কেনাবেচা ফের চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। কৃষকরা জানান, অন্যান্য বছরে ফুল চাষের উপযুক্ত সময়ে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেমে আসলেও এবার অনেকটা আবহাওয়া চাষের অনুকূলে। যে কারণে গত কয়েক মাস ধরে তাদের পরিশ্রমের কারণে মাঠে মাঠে দল খাচ্ছে গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, রজনীগন্ধাসহ নানা ধরনের ফুল।
ফুল চাষি ইসমাইল হোসেন বলেন, করোনার কারণে গত দুই বছরে আমরা ফুল চাষে তেমন কোনো লাভ করতে পারিনি। লোকসানের কারণে অনেকেই ফুলের ক্ষেতে সবজিসহ অন্যান্য ফুল চাষ শুরু করে। সেই পরিস্থিতি আর এখন নেই। যেসব চাষিরা ফুল চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন তারা ফের ফুল চাষ শুরু করেছেন। আশা করা যাচ্ছে এবার প্রত্যাশার চেয়ে ফুল বিক্রি সম্ভব হবে। তিনি বলেন, বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি গোলাপ ও গাদা ফুল বিক্রি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার গদখালীর ফুল বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি পিস গোলাপ ৩ টাকা, গ্লাাডিওলাস ৮ থেকে ১৫ টাকা, জারবেরা ৮ থেকে ১০ টাকা, রজনীগন্ধা ৪ টাকা, একশ’ পিস চন্দ্রমল্লিকা দেড়শো টাকা, এক হাজার গাঁদা ফুল ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ফুল বিক্রেতা আমিনুর রহমান বলেন, বিজয় দিবসের কারণে আজ ফুলের দাম বেড়েছে। বিক্রি হয়েছে তেমন। তবে সামনে নতুন বছরের বিশেষ দিনগুলোতে ফুলের চাহিদা ও দাম দুইই বাড়বে বলে তিনি আশা করেন। তিনি বলেন, অন্যান্য বছরের চেয়ে এবছর আগেভাগেই বাজারে ফুল এসেছে। দিন যত যাবে ততই এর চাহিদা বাড়বে বলে তিনি জানান।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থেকে আগত শাহিদুর রহমান নামে এক পাইকার ব্যবসায়ী বলেন, বিজয় দিবস উপলক্ষে ফুল নিতে তিনি গত তিন দিন ধরে এখানে অবস্থান করছেন। এখান থেকে ফুল কিনে তিনি পরিবহনে করে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আজ শেষ বাজার ধরে তিনি ঢাকায় ফিরবেন বলে জানান। তিনি বলেন, দেশের অন্যান্য এলাকায় এখনো ফুল বাজারে তোলার সময় আসেনি। বিশেষ করে গদখালীতে আগেভাগেই গোলাপের সরবরাহ বেড়েছে। এ কারণে এখান থেকে ফুল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, করোনার ধকল কেটে এবছর প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ফুল চাষ হয়েছে গদখালীতে। ইতোমধ্যে ক্ষেতের ফুল বাজারে আসতে শুরু করেছে। বছরের প্রথম বড় একটি বাজারেও ভালো দামে ফুল বিক্রি করতে পেরেছেন চাষিরা। সামনের দিনগুলোতেও ভালো দাম পাবেন বলে তিনি আশা করেন। তিনি বলেন, ফুলের উৎপাদন হলেও একশ্রেণীর ব্যবসায়ী প্লাস্টিকের ফুল সরবরাহ করে বিভিন্ন বড়বড় অনুষ্ঠানে নিয়ে যাচ্ছে। এজন্যে দেশের ফুল চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ফুল চাষিদের দাবি, সরকার যেনো প্লাস্টিকের ফুল সরবরাহ বন্ধ করে কাঁচা ফুল ব্যবহারে সবাইকে উৎসাহিত করে।
এ বিষয়ে ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ হোসেন পলাশ বলেন, ঝিকরগাছার গদখালী, পানিসারা ছাড়াও জেলায় প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে নানান জাতের ফুলের চাষ রয়েছে। এসব ফুল চাষে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষককে নানাভাবে সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফুল চাষিরা ভালো ফলন পাবে এবং আগামী বিশেষ দিনগুলোতে ভালো দামে বিক্রি করতে পারবেন।