ছেলেকে নাস্তা খাওয়ানো হলোনা কৃষক পিতার মণিরামপুরে কাভার্ডভ্যান কেড়ে নিল পিতাপুত্রসহ ৫ জনের প্রাণ

0

মজনুর রহমান,মণিরামপুর(যশোর)॥ যশোরের মণিরামপুরে টুনিয়াঘরা গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমানের ছোট ছেলে ছয় বছর বয়সি তাওশিকুর রহমান শুক্রবার সকালে পিতার কাছে আবদার করেছিল তাকে বাজারে হোটেলে নিয়ে গিয়ে নাস্তা করানোর জন্যে। আবদার মেটানোর জন্যে ছেলেকে সাথে নিয়ে হোটেলে যাওয়ার সময় একটি কাভার্ডভ্যানের চাপায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ দিতে হলো পিতা-ছেলেকে। গতকাল সকালে বেগারীতলা বাজারে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় পিতা-ছেলেসহ একে একে নিহত হন পাঁচজন। কমবেশি আহত হন নজরুল ইসলাম, আবু তালেব, মনির উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন। মর্মান্তিক এ ঘটনায় নিহতদের পরিবারসহ এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। কৃষক হাবিবুর রহমানের বড় ছেলে নবম শ্রেণির ছাত্র তাজিম হাসান ও ছোটভাই ইব্রাহিম খলিল ঝন্টু জানান, শুক্রবার সকালে তাওশিকুর রহমান পিতার কাছে আবদার করেছিল তাকে বাজারে নিয়ে গিয়ে হোটেল থেকে নাস্তা খাওয়ানোর জন্যে। পিতা আবদার মেটাতে ছোট ছেলে তাওশিকুরকে সাথে নিয়ে বাড়ির সামনে বেগারীতলা বাজারের হোটেলের উদ্দেশে রওনা হয়ে আপনভাই বজলুর মুদি দোকানের সামনে পৌছান। এ সময় পাশের জমিতে কাজ করছিলেন প্রতিবেশী গৃহবধূ আমেনা বেগম। তিনি জানান, দোকানের সামনে পৌঁছানো মাত্রই উত্তর দিক(যশোর) থেকে দ্রুতগামী একটি কাভার্ডভ্যান এসে তাদের(পিতা-ছেলে) ধাক্কা দিয়ে দোকানের একাংশ ভেঙ্গে সামনের দিকে সারিবদ্ধ অন্য ১০ দোকানেও আঘাত করে।

কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় রক্তাক্ত হয়ে ছটপট করতে করতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় পিতা-ছেলের। এছাড়াও ওই কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় জীবনপ্রদীপ নিভে যায় পাশের রুহুল আমিনের চায়ের দোকানের সামনে বেঞ্চে বসে চা পানরত একই গ্রামের খন্ডকালিন শিক্ষক শামছুর রহমান ও তার নাতি ছেলে(ভাইপোর ছেলে) তৌহিদুল ইসলামের। তৌহিদুল ইসলাম মীর বাবুর ছেলে। এর পাশেই বিসমিল্লাহ হোটেলে নাস্তা খাওয়ার জন্যে প্রবেশ করার মুহূর্তে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় মৃত্যু হয় জয়পুর গ্রামের আবদুল মোমেনের ছেলে মাটিকাটা শ্রমিক জিয়াউর রহমানের। হোটেল মালিক আবু তালেব জানান, কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই কাভার্ডভ্যানটি জিয়াকে ধাক্কা দিয়ে তার হোটেলের মধ্যে ঢুকে যায়। অবশ্য এতে জিয়াউর রহমানের মৃত্যু হলেও আবু তালেব রয়েছেন অক্ষত। তবে তার হোটেলটি ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। দেখে চেনার উপায় নেই। এভাবেই নিমিষেই ঘাতক কাভার্ডভ্যানের আঘাতে পাঁচটি তরতাজা প্রাণ গেল । নিহত পিতা-ছেলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় শোকের মাতম। স্বামী এবং ছেলেকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে গেছেন তৌহিদা বেগম। স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। উপস্থিত সকলের চোখ দিয়েই ঝরছিল পানি। সবাই শোকে মুহ্যমান। একই দৃশ্য চোখে পড়ে দাদা শামছুর রহমান ও তার ভাইপোর ছেলে(নাতি ছেলে) তৌহিদুল ইসলামের বাড়িতে গিয়েও। প্রত্যক্ষদর্শী, এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, শুক্রবার সকালের দিকে যশোর থেকে বিস্কুট বোঝাই একটি কাভার্ডভ্যান মণিরামপুরের দিকে আসছিল। সকাল সাড়ে সাতটার দিকে মণিরামপুরের বেগারীতলা বাজারে পৌঁছুলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দ্রুতগামী কাভার্ডভ্যানটি সারিবদ্ধ ১০ টি দোকানের ভেতর ঢুকে যায়। এ সময় কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় দোকানের সামনে থাকা পাঁচজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায় ১০ টি দোকান। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ভারপ্রাপ্ত) আলী হোসেন, সহকারী পুলিশ সুপার(মণিরামপুর সার্কেল) আশেক মামুন সুজা, থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ মনিরুজ্জামান, ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার প্রনব কুমার বিশ্বাসসহ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তবে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনার সময় বাজারের অধিকাংশ দোকানপাট ছিল বন্ধ। হতাহতের পর পরই এলাকাবাসী বিক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরে পুলিশ ফায়ার সার্ভিসসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসে পাঁচটি মরদেহ উদ্ধারের পর সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে সড়ক থেকে অবরোধ সরিয়ে দেয়া হয়। মণিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ মনিরুজ্জামান জানান, পাঁচটি মরদেহ উদ্ধারের পর ময়না তদন্তের জন্যে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা করা হয়েছে। এদিকে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে হতাহতদের বাড়িতে গিয়ে শোকসন্তপ্তদের সান্ত¡না এবং পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান থানা বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট শহীদ ইকবাল হোসেন, সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মুছা, খায়রুল ইসলাম, মফিজুর রহমান, আসাদুজ্জামান মিন্টু, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী জলি আক্তার, সিটিপ্লাজার চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা এসএম ইয়াকুব আলী, জেলা জামায়াত নেতা অ্যাডভোকেট গাজী এনামুল হক, ভোজগাতী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাকসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।