যশোর উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর উল্লেখযোগ্য ঘোষণা না থাকায় অসন্তুষ্টি ফেসবুকেও

0

শিকদার খালিদ॥ যশোরের জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার যশোর উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য কোন ঘোষণা না থাকায় অসন্তুষ্টি তৈরি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকেও এ নিয়ে সরব হয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। এ জন্য তারা দায়ি করেছেন যশোরের আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে।

যশোরের বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারাজী আহমেদ সাঈদ বুলবুল তার ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন, ‘যশোরে একজনও নেতা নেই, নতুন করে প্রমাণিত হল’। তার এই মন্তব্যে অভিমত ব্যক্ত করেছেন যশোরের অর্ধশতাধিক মানুষ। তার মধ্যে রয়েছেন রাজনীতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষাবিদসহ সাধারণ মানুষও।

ফারাজী আহমেদ সাঈদ বুলবুলের ফেসবুকে ওই মন্তব্যে বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ যশোর শাখার সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান ভিটু লিখেছেন, ‘কথা পরিপূর্ণ হল না। বলেন সরকারী দলে।’

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও কলামনিস্ট অধ্যাপক আমিরুল আলম খান বলেন, নেতৃত্বহীন যশোর।

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শ্রাবণী সুর বলেন, আশা ছিলো সিটি কর্পোরেশন হবে এই ঘোষণা আসবে।

সাংবাদিক হারুন জামিল বলেন, এটা লজ্জার। আশায় ছিলাম। খুবই দুঃখ পেয়েছি।

সাংবাদিক সাজেদ রহমান বলেন, দাবি করার ক্ষেমতা নেই।

সাংবাদিক ও রাজনীতিক রিমন খাঁন বলেন, বড় অবাক হলাম।

সিপিবি যশোরের নেতা অ্যাড. আবুল হোসেন প্রশ্ন করেন, কেন এমন হলো?

বিশিষ্ট কবি ও সাংবাদিক দারা মাহমুদ বলেন, নেতারা সব মারা গেছেন।

যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মো. মাজহারুল ইসলাম প্রিন্স লিখেছেন, অবাক আমিও হয়েছি ….বুঝিনা কেন অমন হয় বার বার!

যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা নিলু মজুমদার বলেছেন, ‘ভাই ( ফারাজী আহমেদ সাঈদ বুলবুল) যে কারণে বলেছেন আমি মনে হয় বুঝতে পেরেছি তবে এখানে মূল দায়ী দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। কারণ প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে একমাত্র তারাই কথা বলার সুযোগ পেয়েছে, একজন ছিলেন উপস্থাপনাই আর একজন সভাপতিত্বের বক্তব্য দিয়েছেন অথচ তাদের মুখফুটে একটা কোন দাবির কথা বলার সাহস হলোনা। বড় অবাক হলাম।’

ক্যাব যশোরের সদস্য অপু সরদার বলেন, ‘আন্দোলন (আন্দোলন) সংগ্রাম না করে সারাজীবন ঠিকাদারী ব্যবসা করে হঠাৎ টাকার মালিক হলে দলের সাধারণ সম্পাদক ও নেতা হলে তিনি এলাকার উন্নয়ন কথা জনগণের দাবির কথা বলবার সাহস থাকে না।’ সাংবাদিক বকুল মাহবুব বলেছেন, বহু দিন পরে সত্যটি বলে ফেললেন। কেউ এভাবে বলে না। ধন্যবাদ প্রিয় সুহৃদ। নেত্রীর সামনে যাদের কথা বলার সাহস নেই তাদের নেতৃত্ব না দেয়ায় ভাল। নেতা হতে গেলে তৃণমূল তেকে উঠে এসে রাজনীতি করতে হয়।

আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা মুন্সি মহিউদ্দিন বলেন, সহমত।
নাজমুল হাসান নামে এক জন লিখেছেন, যশোরের নেতা যিনি ছিলেন তিনি আর কখনো ফিরে আসবেন না।
মেফতাহ উদ্দিন ফেরদাউস নামে এক লিখেছেন, সরকার দলীয় নেতারা তৈল আর তৈল নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সুপরিচিত যশোর ইনফো’র পরিচালক হাসানুজ্জামান বিপুল বলেন, যশোরের নেতারা সব মেরুদণ্ডহীন। প্রধানমন্ত্রীর সামনে নিজের দাবি আদায়ের কথা বলার যোগ্যতা নেই কারো।

এদিকে রাজনীতিক জিল্লুর রহমান ভিটু ফেসবুকের নিজ অ্যাকাউন্টে মন্তব্য করেছেন, কি পেল যশোর?

সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ নিঃস্ব আমি, রিক্ত আমি দেবার কিছু নাই আছে শুধু ভালোবাসা দিয়ে গেলাম তাই… যশোরবাসী শুধু ভালোবাসাই পেলো !!!’

গত ২৪ নভেম্বর যশোর শামস-উল-হুদা স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক বিশাল সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণ দেন দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ভাষণে যশোরের কৃষি নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তিনি। এছাড়া যশোরের বিভিন্ন সমস্যা ও তার সমাধান নিয়ে তিনি বলেন, এই যশোরে ভবদহ-কপোতক্ষ জলাবদ্ধতা দূরিকরণে প্রথম প্রকল্প শেষ হয়েছে। এবার দ্বিতীয় প্রকল্প হাতে নেয়া হবে। তাহলে ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টর এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন হবে। ফলে এই জলাবদ্ধতা একটা দীর্ঘ দিনের সমস্যা, সেই সমস্যা দূর করার পদক্ষেপ নিয়েছি। তিনি বলেন, যশোরের অভয়নগরে একটি ইপিজেড করে দিচ্ছি। ইতিমধ্যে ৫০০ একর জমি নেয়া হয়ে গেছে। ৪০০টা শিল্প প্লট হবে।  আরও বলেন, যশোরে ২০১০ সালে একটি মেডিকেল কলেজ করে দেয়া হয়েছে। ৫০০ শয্যার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্থাপনের প্রাথমিক কাজ এখনও চলমান আছে।

এছাড়া যশোর স্টেডিয়ামকে উন্নত করার প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর উল্লিখিত বক্তব্যে সন্তুষ্ট হতে পারেননি যশোরের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ। তাদের অভিমত প্রধানমন্ত্রী যশোর উন্নয়ন নিয়ে যে বিষয়গুলো আলোকপাত করেছেন সেগুলো হয়েছে বা চলমান। কোন কোন প্রকল্প নিয়ে অসন্তুষ্টি রয়েছে স্থানীয়দের। ভৈরব নদ খননসহ কোন কোনটির মেয়াদ বাড়তে বাড়তে অনিশ্চতা দেখা দিয়েছে। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ভবদহ সমস্যার সমাধান নিয়ে প্রায় রাজপথে নামছেন যশোরবাসী। একারণে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজের বিষয়ে ও নতুন কোন উন্নয়নের সুনির্দিষ্ট ঘোষণা আশা করেছিলেন তারা। ভেবে ছিলেন নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি যশোর সিটি করপোরেশন হয়তো বাস্তবায়ন হবে এবার।