প্রধানমন্ত্রী যশোরে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার ওয়াদা চাইলেন

0

 

স্টাফ রিপোর্টার॥ যশোরে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় উপস্থিত বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছ থেকে আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার ওয়াদা চাইলেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এটুকুই বলবো আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে আমাদেরকে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। আগামী নির্বাচনে আমি আপনাদের কাছে ওয়াদা চাই আগামী নির্বাচনেও আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন। যশোর শামস-উল-হুদা স্টেডিয়ামে আয়োজিত জনসভায় যশোরসহ খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, মাগুরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির ভাষণে শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানাই বিগত ২০১৮ সালের নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের প্রতিটি প্রার্থীকে জয়যুক্ত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন, তাই আপনাদের প্রতি জানাই আন্তরিক অভিনন্দন এবং ধন্যবাদ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ কেউ রিজার্ভ নিয়ে কথা বলে। রিজার্ভ নিয়ে কোন সমস্যা নাই। অনেকে বলে ব্যাংকে টাকা নাই। কেউ কেউ ব্যাংক থেকে টাকা তোলে। ব্যাংকের টাকা তুলে ঘরে রাখলে তো চোরে নিয়ে যাবে। চোরের জন্য সুযোগ করে দেওয়া। ব্যাংকের টাকা নিয়ে কথাটা মিথ্যা। গতকালকে আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ ওদের সাথে মিটিং করেছি। আমাদের এ বিষয়ে কোন সমস্যা নাই। প্রত্যেকটা ব্যাংকে যথেষ্ট টাকা আছে। তিনি বলেন, আমাদের রেমিট্যান্স আসছে। বিদেশ থেকে বিনিয়োগ আসছে, আমদানি আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, রফতানি আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, আমাদের ট্যাক্স কালেকশন বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বে অন্য দেশ তাই হিমশিম খাচ্ছে, নিজেরা অর্থনৈতিক মন্দায় ভুগছে, বাংলাদেশ এখনও যথেষ্ট শক্তিশালী আছে। আজকে আমরা ধান উৎপাদনে আমরা সারা বিশ্বে তৃতীয় স্থান। ‘রিজার্ভ কোথাও যায়নি। মানুষের কাজে লেগেছে। যেহেতু য্দ্ধু লেগেছে, যে গম ২শ ডলারে আনতাম সেই গম এখন ৬শ ডলার। তারপরও আমরা কিনে নিয়ে আসছি দেশের মানুষের জন্য। গম, ভুট্টা, সার প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়েছে আন্তর্জাতিকভাবে। পরিবহণ খরচ বেড়েছে। তারপরও আমরা খরচ করছি। আমার দেশে যেন কোন মতে খাদ্য ঘাটতি না দেখা যায়।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুজবে কখনও কান দেবেন না। আপনারাতো জানেন, বিএনপির কাজ হচ্ছে সব সময় গুজব ছড়ানো। ক্ষমতায় যখন গিয়েছে লুটপাট করে খেয়েছে। ৯৬ সালে আমরা যখন সরকার গঠন করি তার আগে ছিল বিএনপি, রিজার্ভ রেখে গিয়েছিল ২ পয়েন্ট ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর ২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করলাম দ্বিতীয় দফায় তখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল, এরপর কেয়ারটেকার। ৫ বিলিয়ন (রিজার্ভ) ছিল। আমাদের আমদানি-রফতানি ছিল না, সেই জন্য আমাদের রিজার্ভ হয়েছিল প্রায় ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। শেখ হাসিনা বলেন,খালেদা জিয়ার সময় প্রায় ৪০ ভাগ মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে বাস করতো। এই ৪০ ভাগ দরিদ্র থেকে আমরা কমিয়ে এনে এটা ২০ ভাগে এসেছে। আমরা যদি আরও কমাতে পারতাম তাহলে বাংলাদেশে আর দ্ররিদ্র বলে থাকতো না। যে হতদ্ররিদ্র ২৫ ভাগ ছিল, তা ১০ভাগে নামিয়ে এনেছি। কারণ আমরা মানুষের কথা চিন্ত করি। আরও বলেন, আপনারা ভোট দিয়েছেন, আপনাদের ভোটে বারবার নির্বাচিত হয়ে আজকে দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে। যে বাংলাদেশকে ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করেছিল। বিদেশ থেকে পুরনো কাপড় এনে এদেশের মানুষকে পরাতো। মানুষের পেটে খাবার ছিল না। মাথা গোজার ঠাঁই ছিলো না। রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা ছিল না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক করি। যেখানে এখন বিনা পয়সায় ওষুধ পাওয়া যায়। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। যেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে অনেক মানুষের। সকলের হাতে হাতে মোবাইল ফোন। এটা আওয়ামী লীগ সরকার আপনাদের হাতে তুলে দিয়েছে। আর বিএনপি জামায়াত ক্ষমতায় থাকতে কী দিয়েছে? দিয়েছে অস্ত্র, দিয়েছে খুন, দিয়েছে হত্যা। শুধু রক্ত আর হত্যা ছাড়া বিএনপিতো আর কিছু দিতে পারেনি দেশের মানুষকে। নিজেরা লুটপাট করেছে। নিজেরা মানুষের অর্থ পাচার করেছে। মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে নিজেদের উদরপূর্তি করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যশোরে ভবদহ-কপোতক্ষ জলাবদ্ধতা দূরিকরণে প্রথম প্রকল্প শেষ হয়েছে। এবার দ্বিতীয় প্রকল্প হাতে নেয়া হবে। তাহলে ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টর এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন হবে। ফলে এই জলাবদ্ধতা একটা দীর্ঘ দিনের সমস্যা, সেই সমস্যা দূর করার পদক্ষেপ নিয়েছি। তিনি বলেন, যশোরের অভয়নগরে একটি ইপিজেড করে দিচ্ছি। ইতিমধ্যে ৫০০ একর জমি নেয়া হয়ে গেছে। ৪০০টা শিল্প প্লট হবে। আরও বলেন, যশোরে ২০১০ সালে একটি মেডিকেল কলেজ করে দেয়া হয়েছে। ৫০০ শয্যার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্থাপনের প্রাথমিক কাজ এখনও চলমান আছে। যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি,প্রেডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক,আব্দুর রহমান, ড.আব্দর রাজ্জাক,পিযূষ কান্তি ভট্রাচার্য্য, যুগ্ম-সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ,আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম,সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক,এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া,কুষ্টিয়া জেলা সভাপতি সদর উদ্দিন খান, ঝিনাইদহ জেলা সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু,নড়াইল জেলা সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলু, যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ,পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী একে এম এনামুল হক শামীম,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্রাচর্য্য,যশোরের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ,শেখ আফিল উদ্দিন, খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল, বাগেরহাটের-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, ২ আসনের সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময়, ৪ আসনের সদস্য আমিরুল আলম মিলন, শরিয়তপুর-১ আসনের সদস্য ইকবাল হোসেন অপু, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য পারভিন জামান কল্পনা, গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্রাচার্য্য,স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, যুব মহিলা লীগের সভাপতি অধ্যাপক নাজমা রহমান প্রমুখ। পরিচালনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার ।