অস্তিত্ব সংকটে ঝাঁপা বাওড়ের ২১টি সংযোগ খাল

0

ওসমান গণি, রাজগঞ্জ (যশোর) ॥ যশোরের মনিরামপুর উপজেলার ঝাঁপা বাওড়ের সঙ্গে মিশে আছে উপজেলার অনেক স্মৃতি। এ বাওড় দিয়ে ঘটেছে উপজেলার রাজগঞ্জ বাজারের বাণিজ্যিক প্রসারও। এক সময়ের খরস্্েরাতা এ বাওড় দিয়েই জেলার দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে ছিলো সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। সেই অবস্থা এখন আর নেই। ঝাঁপা বাওড়ের দুই পাশের ২১টি ছোট সংযোগ খাল দখল আর দূষণে অস্তিত্বহীন হয়ে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাাসন নির্বিকার থাকায় এ বাওড়ের দুই পাশের ছোট ছোট খালগুলো দখল করে প্রভাবশালীরা গড়ে তুলেছেন মৎস্যঘের ও বড় বড় ভবনসহ অসংখ্য দোকানপাট। এতে বাওড়ের সাথে সংযোগ ২১টি খালই এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। সেই সাথে উপজেলার ঝাঁপা বাওড় কেন্দ্রিক জীববৈচিত্র্য এখন মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। দুই পাড়ের বাসিন্দারা জানান, জেলার ঐতিহ্যবাহী এ বাওড়টির সাথে সংযোগ ২১টি খালই ভরাট ও পলি জমে প্রকৃত রূপ হারিয়ে ফেলেছে। ৯০ এর দশকেও বাওড়টি দিয়ে বড় বড় নৌযান চলাচল করতো। ওই সময়ে এ অঞ্চলের কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত ফসল ও বড় বড় ব্যবসায়ীরা নৌপথে বিভিন্ন পণ্য সহজে আনানেয়া করতেন। বাওড়ের একাধিক স্থানে অপরিকল্পিতভাবে বাঁশের বড় বড় পাটা দিয়ে মৎস্য চাষ করায় নৌ চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে।
সরজমিনে দেখা যায়, ঝাঁপা বাওড়ের সাথে সংযোগ খালগুলোর মধ্যে নানান বর্জ্য ফেলার কারণে খালের পানি কালো রঙ ধারণ করে বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। এই বিষাক্ত পানিতে জন্ম নিচ্ছে মশা। আর সন্ধ্যা হলেই মশার অত্যাচার অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন দুই পাড়ে বসবাসকারী বাসিন্দারা। একই সাথে অন্তত ১০ থেকে ১২টি স্পটে রাজগঞ্জ বাজারের যাবতীয় ময়লা –আবর্জনা ফেলায় ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এতে করে খালগুলো ভরাট ও পলি জমে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় রাজগঞ্জ অঞ্চলের কৃষি মারাত্মকভাবে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সেই সাথে সামান্য বৃষ্টিতে পানিতে আবদ্ধ হচ্ছে দ্বীপ নামে পরিচিত ঝাঁপা ও হানুয়ারসহ আশ পাশের ১০টি গ্রাম। গ্রামবাসীর জন্যে ঝাঁপা বাওড়ের সাথে সংযোগ ২১টি খালই বর্তমানে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সেই সাথে পানি বাহিত রোগ জীবানু ছড়ানোর পাশাপাশি মশা-মাছির উপদ্রব বেড়ে গেছে। খাল পাড়ের বাসিন্দা রাজগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাছুদ কামাল তুষার ও ডা. পরিমল কুমার সাধু, ডা. আব্দুস সালাম, মাস্টার হুমায়ন কবির ও মাস্টার আব্দুর রশীদ মুকুল জানান, গেল কয়েক বছর অবৈধ দখলদাররা বিভিন্ন খালের দুই পাড় দখল করে গড়ে তুলেছেন বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। রাজগঞ্জ পারবাজার, হানুয়ার মানিকগঞ্জ, মোবারকপুর ব্রিজ সংলগ্ন খাল ও শ্মশান মোড় খাল, কোমলপুর, রামপুর, ঝাঁপা, মশ্মিমনগর এলাকার খালগুলো দ্রুত দখলমুক্ত করে খনন করার উদ্যোগ নিতে প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান তারা।