যশোরে নৃশংস ১০ হত্যা

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরে চলতি বছর বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ নৃশংসভাবে হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। এরমধ্যে সদর উপজেলার বি-পতেঙ্গালী গ্রামে সানজিদা জান্নাত মিষ্টি নামে এক শিশু এবং বাঘারপাড়া উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামে নকিম উদ্দিন নামে এক বৃদ্ধের নৃশংস ও নিষ্ঠুর হত্যাকান্ড ব্যাপক আলোচিত হয়। অবশ্য প্রায় প্রতিটি হত্যাকান্ডে জড়িতদের অধিকাংশকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
১ অক্টোবর যশোর সদর উপজেলার আরবপুর ইউনিয়নের বি-পতেঙ্গালী কলোনিপাড়ায় সানজিদা জান্নাত মিষ্টি নামে ৪ বছরের এক শিশু নৃশংস হত্যার শিকার হয়। নানা আক্রোশের জেরে প্রতিবেশী আঞ্জুয়ারা খাতুন নামে এক নারী আপেল খাওয়ানোর প্রলোভন দেখিয়ে ডেকে নিয়ে হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করেন। হত্যার পর তার লাশ ড্রামের ভেতর রেখে চাল দিয়ে ঢেকে রেখেছিলেন।
একইদিন নৃশংস হত্যার শিকার হন আলোচিত ইমরোজ হত্যা মামলার আসামি রনি। তাকে উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরদিন চাঁচড়ার বর্মণপাড়ার শ্মশান সংলগ্ন মুক্তেশ্বরী খালের ভেতর থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। আলোচিত ইমরোজ হত্যার প্রতিশোধ নিতে এই হত্যাকান্ড বলে পরে পুলিশ জানতে পারে।
গত ৫ অক্টোবর মণিরামপুর উপজেলার জয়নগর গ্রামের একটি ইটভাটার পাশে হীরা বেগম নামে এক নারীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন সদ্য তালাক দেয়া স্বামী মশ্মিমনগর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার ইসলাম গাজী। ফের বিয়ে করার প্রলোভন দেখিয়ে মোটরসাইকেলে করে উল্লিখিত স্থানে নিয়ে হীরা বেগমকে হত্যা করেন তিনি।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাতে যশোর শহরের শংকরপুর রেল লাইন সংলগ্ন ব্রাদার্স ক্লাবের ভেতর আলোচিত ইয়াসিন আরাফাত ওরফে হুজুর ইয়াসিন নৃশংসভাবে খুন হন। একই এলাকার স্বর্ণকার রানাসহ কয়েকজন তাকে কুপিয়ে হত্যা করেন। কয়েক বছর আগে হুজুর ইয়াসিনের হাতে গুরুতর আহত হয়েছিলেন স্বর্ণাকার রানা। এই হামলার প্রতিশোধ নিতে এবং নিজ এলাকায় বাড়ি নির্মাণে ইট বালির ব্যবসা থেকে হিস্যা আদায়সহ নানা দ্বন্দ্বের জেরে হুজুর ইয়াসিন খুন হন বলে ডিবি পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে।
গত ১২ জুলাই যশোর শংকরপুর আকবরের মোড়ে নিজ বাড়ির সামনে সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হন জেলা যুবদলের সহসভাপতি বদিউজ্জামান ধনি। আলোচিত হুজুর ইয়াসিন হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসীরা তাকে হত্যা করে।
গত ২৯ আগস্ট যশোর শহরের রেল রোড আশ্রম মোড়ের নিজ বাড়িতে নৃশংসভাবে খুন হন রওশনারা বেগম ওরফে রোশনী নামে পঞ্চাশোর্ধ এক নারী। পরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের তদন্তে বেরিয়ে আসে, স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা লুট করতে নিজ বোনের ছেলে হৃদয়সহ দুজনে তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন। এরপর লাশ বঙ্খাটের নিচে তারা লুকিয়ে রাখেন।
গত ২৬ মে রাতে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামে নকিম উদ্দিন নামে এক বৃদ্ধ নৃশংসভাবে খুন হন। হত্যার পর তার চোখের মনি, অন্ডকোষ ও পুরুষাঙ্গ কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। পরে ডিবি পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে, চির যৌবন লাভের আশায় কবিরাজের পরামর্শে তাকে হত্যার পর চোখের মনি, পুরুষাঙ্গ ও অন্ডকোষ কেটে নিয়ে যান লিটন মালিথা নামে এক যুবক।
গত ২১ জুন রাতে শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার আসানুজ্জামান বাবলুকে স্থানীয় বালুন্ডা বাজারে বোমা মেরে ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। স্থানীয় একটি চক্রের সাথে বিরোধের জের ধরে পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়। অবশ্য এ ঘটনায় জড়িত কয়েকজনকে ইতোমধ্যে আটকও করেছে ডিবি পুলিশ।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে চৌগাছা উপজেলার পাতিবিলা বটতলা বাজারে স্থানীয় ইউপি মেম্বার ঠান্ডুকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্বের জের ধরে তাকে এভাবে নৃশংসভাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
গত ২৫ মার্চ রাতে যশোর শহরের পুরাতন কসবা কাঁঠালতলায় হোসাইন মোহাম্মদ রুম্মান নামে এক যুবক প্রতিপক্ষ কয়েকজন দুর্বৃত্তের এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে খুন হন। শহরতলীর বিরামপুরের এক নারীর হয়ে তার স্বামীর সাথে বিয়ে বিচ্ছেদে ভূমিকা পালনে পাওয়া টাকার হিস্যার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্বের জের ধরে তাকে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা।