যশোরে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির কারিগরদের ক্রেতা কারা?

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরে একের পর এক অস্ত্র তৈরির কারিগর আটকের খবরে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে অবৈধ উপায়ে তৈরি এসব আগ্নেয়াস্ত্রের ক্রেতা কারা। কেননা অস্ত্রের এই কারিগররা আটকের পর পুলিশ বলছে তারা যশোরসহ সারা দেশে তাদের তৈরি অস্ত্র সরবরাহ করছে। অপরদিকে আটক ব্যক্তিরা বলছে, তারা এসব অস্ত্র তৈরি করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্যের জন্য।
মাত্র ৯ দিনের ব্যবধানে যশোরে ২টি অবৈধ অস্ত্র তৈরির কারখানা আবিষ্কার হয়েছে। এ ঘটনার ৩ বছর আগে যশোরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে একটি অবৈধ অস্ত্র তৈরির কারখানা আবিষ্কার হয়েছিলো। প্রশ্ন উঠেছে, এই অস্ত্রের ক্রেতা কারা এবং এতোদিন ধরে অস্ত্র তৈরি করে আসলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে কেন আসেনি ? এছাড়া অস্ত্র তৈরির ঘটনায় যারা আটক হচ্ছেন তারা ক্রেতা হিসেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো কোনো কর্মকর্তা বলে দাবি করেছেন। তবে যশোরে জেলা পুলিশের মিডিয়া সমন্বয়কারী ডিবি পুলিশের ওসি রুপণ কুমার সরকার বলছেন, আটকরা ক্রেতা হিসেবে সন্ত্রাসীদের নাম বলছে। তারা কোনো বাহিনীর নাম বলেনি।
গত রোববার রাতে সদর উপজেলার ভাতুড়িয়া দাড়িপাড়ার মৃত মোহর আলী বিশ্বাসের ছেলে ইকবাল হোসেনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে অবৈধ অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম পায় ডিবি পুলিশ। এ সময় ইকবাল হোসেনকে আটকের পাশাপাশি ২টি ওয়ান শ্যুটারগান এবং অস্ত্র তৈরির বিপুল সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত ১৪ অক্টোবর রাতে শহরের বারান্দীপাড়া রাঙ্গামাটি গ্যারেজ এলাকার একটি লেদে অভিযান চালিয়ে নির্মিত ২টি পিস্তল ও অস্ত্র তৈরির বিপুল সরঞ্জাম উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ। এ সময় ৩ জনকে আটক করা হয়। পরে আটক ৩ জনের মধ্যে ২ জনকে রিমান্ডে নিয়ে তাদের স্বীকারোক্তিতে ওই কারখানায় পুঁতে রাখা অস্ত্র তৈরির আরও সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে বেজপাড়ার আব্দুল আজিজের স্বজনেরা সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছিলেন, র‌্যাব সদস্যরা তার কাছ থেকে এই অস্ত্র নিয়ে যেতো। স্থানীয় একটি পত্রিকায় এ সংক্রান্ত একটি সংবাদও প্রকাশ করে। এর আগে ২০১৯ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝিতে ২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে গঠিত ভ্রাম্যমাণ আদালত সদর উপজেলার ভাতুড়িয়ার দাড়িপাড়ার কামরুল ইসলামের বাড়িতে মাদক বিরোধী অভিযান চালাতে গিয়ে অবৈধ অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান পায়। এ সময় সেখান থেকে ১টি পিস্তল, ২টি ম্যাগজিন, ১ রাউন্ড গুলি এবং অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। অভিযানে আটক কামরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী রাবেয়া সুলতানা সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছিলেন যে, পুলিশের জন্য তারা অস্ত্র বানাতেন। ক্রেতা হিসেবে ২ জন পুলিশ কর্মকর্তার নাম বলেছিলেন সেই সময়। অবশ্য তৎকালীন যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনসার উদ্দিন বলেছিলেন, আটক দম্পতি চতুর প্রকৃতির। তারা ঘটনার সাথে পুলিশকে জড়িয়ে মিথ্য তথ্য দিয়ে নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে।
এদিকে ৯ দিনের ব্যবধানে যশোরে ২টি অবৈধ অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান পাওয়ায় এবং সেখানে নির্মিত অস্ত্রের ক্রেতা হিসেবে সন্ত্রাসীদের কথা বলেছেন ডিবি পুলিশের ওসি রূপণ কুমার সরকার। তিনি বলেন, অস্ত্রের কারিগররা দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করতেন। এর মধ্যে ভাতুড়িয়া দাড়িপাড়ার ইকবাল হোসেন দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্র তৈরির সাথে জড়িত। এক প্রশ্নের জবাবে ডিবি পুলিশের ওসি বলেন, আটক ইকবাল হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে ক্রেতা হিসেবে কোনো বাহিনীর নাম বলেনি।
ডিবি পুুলিশের একটি সূত্র জানায়, ভাতুড়িয়া দাড়িপাড়ার কামরুল ইসলাম ও ইকবাল হোসেন এক সময় একসাথে অস্ত্র তৈরি করতেন। কিন্তু এখন তারা আলাদাভাবে অস্ত্র তৈরি করেন। কিছুদিন আগে পুলিশ অস্ত্র কারবারি কামরুল ইসলামকে অস্ত্রসহ আটক করেছিলো।