যশোর থেকে হঠাৎ খুলনাগামী বাস বন্ধ, যাত্রীদের ভোগান্তি

0

 

স্টাফ রিপোর্টার॥ যশোরে হঠাৎ করে  শুক্রবার দুপুর থেকে খুলনা অভিমুখি বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন বাস মালিক ও শ্রমিকরা। বিএনপির খুলনার মহাসমাবেশের কারণে এ সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছের বাস মালিক ও শ্রমিকরা।
শুক্রবার সকালেও যশোর-খুলনা মহাসড়কের খুলনা ব্যাতিত অন্যান্য স্থান থেকে বাস এসেছে যশোরে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বলা হচ্ছিল শুধুমাত্র খুলনায় গণপরিবহণ চলাচল করবে না। কিন্তু হঠাৎ করে যশোর থেকে খুলনা রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় দুর্ভোগে পড়েন শহরে চাকরির পরীক্ষা দিতে আসা নারী ও পুরুষ। বিভিন্ন জেলা থেকে খুলনামুখি যাত্রীদের ভিড় দেখা যায় যশোর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে। এদিকে খুলনা রুটে বাস বন্ধ থাকায় যাত্রীরা ভিড় করেন রেল স্টেশনে।
বিপ্লব বিশ্বাস নামে এক যাত্রী বলেন, অভয়নগর উপজেলা থেকে সকালে সমাজ সেবা অধিদপ্তরে চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা দিতে যশোর শহরে এসেছি। পরীক্ষা শেষে বাড়িতে ফেরার জন্যে দুপুরে বাস টার্মিনালে এসে দেখি খুলনা রুটে কোনো বাস চলছে না। বড় ধরণের সংকটে পড়েছি। কারণ, ইজিবাইকে কেটে কেটে যেতে গেলেও ভাড়া লাগছে বাসের চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ বেশি। আবার তা পাওয়াও যাচ্ছে না। রাজনৈতিক সমাবেশের কারণে সাধারণ মানুষের এই ভোগান্তি দেওয়ার কোনো মানে হয় না।’
যশোর থেকে খুলনাগামী বেসরকারি একটি সংস্থার কর্মী হুমায়ুন কবির তার ৬ মাস ও ৬ বছর বয়সী মেয়েসহ স্ত্রীকে নিয়ে যশোর বাসটার্মিনালে বসে থাকতে দেখা যায়। তিনি বলেন, শুক্রবার ও শনিবার ছুটি থাকায় স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে খুলনার বয়রায় গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলাম। যশোর টার্মিনালে এসে দেখি বাস চলাচল বন্ধ। শুনেছিলাম খুলনার সাথে বাস চলাচল বন্ধ থাকবে; তবে এ রুটে সব বাস বন্ধ থাকবে সেটা জানতাম না। বাস না পাওয়ায় আর গ্রামের বাড়ি যাওয়া হলো না। কর্মস্থলের কোয়ার্টারে চলে যাচ্ছি।
খুলনা -চুয়াডাঙ্গা লাইনের শাপলা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার সবদুল শেখ বলেন, ‘যশোর থেকে ১৭ রুটে বাস চলাচল করছে। শুধু যশোর থেকে খুলনায় কোনো বাস চলাচল করছে না। বিএনপির সমাবেশের কারণে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।’
যশোর খুলনা পরিবহন রুটের যশোর টার্মিনালের সময় নিয়ন্ত্রক মাছুম চৌধুরি বলেন, মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। বাস বন্ধ হওয়ায় অফিসে বসে মানুষের ভোগান্তি দেখছি; তবে আমাদের কিছু করার নেই।
যশোর আন্তঃজেলা বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক ও ঈগল পরিবহনের স্বত্ত্বাধিকারী পবিত্র কাপড়িয়া বলেন, ‘ সরকারের কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। খুলনার সমাবেশকে কেন্দ্র করে কোন অপ্রীতকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেই কারণে আমরা নিজেরাই খুলনাগামী সকল রুটে বাস বন্ধ রেখেছি। এমনকি বিএনপি কোন নেতাকর্মীদেরও বাস ভাড়া দিচ্ছি না।
বাংলাদেশ পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়ন যশোরের সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা মিঠু জানান, শনিবার খুলনায় বিএনপির মহাসমাবেশ হবে। ষেখানে গাড়ি চলাচল করলে শ্রমিকদের জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে, আবার গাড়ি ভাঙচুরের আশংকায় মালিক শ্রমিকরা মিলে যশোর খুলনার গণপরিবহন চলাচল দুই দিন বন্ধ রাখা হয়েছে।
পরে তিনি বিকেল চারটার দিকে জানান, বিভাগীয় বাস, মিনিবাস ও মাইক্রোবাস এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে মহাড়কে ইজিবাইক, নসিমন, করিমনসহ অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধের দাবিতে শুক্রবার ও শনিবার পরিবহণ ধর্মঘট পালন করা হচ্ছে।
যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক বলেন, ‘যশোরের কোনো বাস বা মাইক্রোবাস আমাদের কাছে ভাড়া দিচ্ছে না। এ বিষয়ে আমরা পরিবহন মালিক সমিতির নেতাদের সাথে কথা বলেছি। তাদের অনেকে বলেছেন, সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।’
বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগের নির্দেশেই খুলনাকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। লঞ্চ-ট্রলার এবং ঘাটও বন্ধ করে রেখেছে তারা। সরকার যে ষড়যন্ত্র করবে তা আগেই ধারণা ছিল। তবে বিএনপির বিকল্প কৌশল রয়েছে। সমাবেশে ১০ লাখ মানুষের সমাগম ঘাটানো হবে। বিএনপির প্রতিটি কর্মী শত বাঁধা উপেক্ষা করে সমাবেশস্থলে আসবে।