প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ যশোর জেলা পরিষদ নির্বাচনে সদস্য পদে ভাগ্নে গৌতম চক্রবর্তীকে বিজয়ী করতে যশোর সার্কিট হাউজে ভোটার ইউপি চেয়ারম্যানদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য। যশোর (মণিরামপুর)- ৫ আসনের এই সংসদ সদস্যের ভাগ্নে গৌতম চক্রবর্তী ৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জেলা পরিষদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রায় তিন ঘণ্টা বৈঠক শেষে সার্কিট হাউজেই ভোটারদের সাথে দুপুরের খাবার খেয়েছেন প্রতিমন্ত্রী। সেই রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ছিল না কোন মন্ত্রীর প্রটোকল। যশোর সার্কিট হাউজের সভাকক্ষে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কোন পুলিশ সদস্য না থাকলেও প্রতিমন্ত্রীর এপিএস কবির খান যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতা কর্মীদের নিয়ে পাহারাদারের ভূমিকায় ছিলেন। তিনি সভাকক্ষে গণমাধ্যম কর্মীদের প্রবেশে করতে বাধা দেন। তবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের কোন বিষয় না এটি উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে ইউপি চেয়ারম্যানদের দ্বন্দ্ব আছে  সেটি নিরসণের জন্য মতবিনিময় সভা। তবে সভায় উপস্থিত ছিলেন না উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম ।
এদিকে প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্যের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে জেলা পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী শহিদুল ইসলাম জেলা রিটার্নিং ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার পক্ষে অভিযোগটি গ্রহণ করেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আনিছুর রহমান।
লিখিত অভিযোগে শহিদুল ইসলাম বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে আমার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী গৌতম চক্রবর্ত্তী। তার মামা মণিরামপুর ৫ আসনের সংসদ সদস্য ও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য। জেলা পরিষদ নির্বাচনের আচরণবিধিতে বলা আছে সংসদ সদস্যরা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। কিন্তু এই বিধি লঙ্ঘন করে আমার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী গৌতম চক্রবর্তীর পক্ষে শনিবার বেলা ১১ টার দিকে যশোর সার্কিট হাউজে উপজেলার ইউপি চেয়ারম্যানদের ডেকে তার আপন ভাগ্নে গৌতম চক্রবর্ত্তীর উপস্থিতিতে তার নির্বাচনী প্রচারণা চালান। সেখানে নির্বাচনী মিটিং করে ইউপি চেয়ারম্যানদের বিভিন্ন লোভ লালসা দেখিয়ে তার ভাগ্নে গৌতম চক্রবর্তীকে বিজয়ী করতে নিজ নিজ ইউপি সদস্যদেও ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। সার্কিট হাউজে নির্বাচনী প্রচারণার সভায় ভিডিও ফুটেজ সার্কিট হাউজের সিসি টিভির ফুটেজ তদন্ত করলে সত্যতা প্রমাণ পাওয়া যাবে বলে । আচরণ বিধিতে কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নির্বাচনী প্রচারনা চালানো যাবে না এমন কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু গত ৪ অক্টোবর মশিহাটিসহ বিভিন্ন দুর্গাপূজায় পরিদর্শনকালে ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের কাছে তিনি তার ভাগ্নে গৌতম চক্রবর্তীর হয়ে প্রচারণা চালিয়েছিলেন। তাকে বিজয়ী করতে নিতে নির্দেশনা দেন। সরকারি ডাক বাংলো বা সার্কিট হাউজ নির্বাচনের কোন প্রার্থী বা তার পক্ষে কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। কোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নির্বাচন পূর্বে এসকল স্থানে অবস্থান করতে পারবে না। কিন্তু সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী গৌতম চক্রবর্তী উপস্থিত ছিলেন। প্রতিমন্ত্রীর একের পর এক নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন যা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের পথকে রুদ্ধ করেছে। প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টচার্য্য যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনের সংসদ সদস্য। তিনি তার আপন ভাগ্নে জেলা পরিষদের সদস্য প্রার্থী গৌতম চক্রবর্ত্তীর পক্ষে বিভিন্নভাবে ভোটারদের প্রভাবিত করছেন অভিযোগ প্রার্থীর।
এদিকে, ভাগ্নের হয়ে যশোর সার্কিট হাউজে মণিরামপুর উপজেলার ইউপি চেয়ারম্যানদের নিয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে এমন খবরে গণমাধ্যম কর্মীরা সেখানে উপস্থিত হন। তবে প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য এমপির এপিএস কবির খান গণমাধ্যম কর্মীদের সার্কিট হাউজের সভাকক্ষে যেতে বাধা দেন। এসময় তিনি তাদের বলেন, এটা কোন সরকারি অনুষ্ঠান না। এটা প্রতিমন্ত্রী মহাদয়ের নিজস্ব অনুষ্ঠান। সভাকক্ষের বাইরে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নাছিমা আক্তার জলির নেতৃত্বে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও ইউনিয়ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ অবস্থান নেন। সকলেই গণমাধ্যম কর্মীদের ভিতরে প্রবেশ করতে নিষেধ করেন। সেখানে সভাকক্ষের মঞ্চে প্রতিমন্ত্রীর ডানে উপজেলার ঝাঁপা ইউপির চেয়ারম্যান সামছুল হক মন্টু, বামে ভোজগাতি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক ও খেদাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম জিন্নাহ বসে ছিলেন। সামনে সারিতে উপজেলার হরিহরনগর ইউপি চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম, মশ্বিমনগর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন, চালুহাটি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ সরদার, শ্যামকুড় ইউপি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন,কুলটিয়া ইউপি চেয়াম্যান শেখর চন্দ্র রায়, খানপুর ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম,ঢাকুরিয়া ইউপি গাজী আইউব, রোহিতা ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। বেলা ১ টা ৪৫ মিনিটে বৈঠক শেষ হওয়ার পর সার্কিট হাউসের ডায়নিংয়ে প্রতিমন্ত্রীসহ উপস্থিত সকল ইউপি চেয়ারম্যান এক সাথে দুপুরের খাবার গ্রহণ শেষে স্থান ত্যাগ করেন।
মণিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা খানম বলেন, আমার সাথে কোন ইউপি চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্ব নেই। আমি সবাইকে নিয়ে কাজ করি। এদিকে বৈঠকে অংশ না নেওয়া কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, আমরা প্রতিমন্ত্রীর পক্ষের লোক নই, এজন্য আমাদের জানানো হয়নি। যে কারণে আমরা বিষয়টি জানি না। তবে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এস এম আব্দুল্লাহ বায়েজিদের মাধ্যমে উপজেলা পরিষদ থেকে ভোটারদেরকে চাল দেওয়া হচ্ছে ভোটকে টার্গেট করে।
এবিষয়ে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন নির্বাচন অফিসার আনিছুর রহমান বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। জেলা রিটার্নিং অফিসার ঢাকাতে আছে। বিষয়টি তাকে জানানো হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য সাংবাদিকদের বলেন, উপজেলার চেয়ারম্যানদের নিয়ে এডিবি ও কাবিখার টাকা নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যানদের সাথে কিছুটা দ্বন্দ্ব রয়েছে। সেটা নিয়ে কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যানদের সাথে বসেছিলাম। ওখানে কোন নির্বাচন নিয়ে কথা হয়নি। আমার বাড়িতে বসার কথা ছিল, কিন্তু লোকজন বেশি হওয়ায় এখানে বসতে হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় আরেক প্রার্থী অভিযোগ করেছে। সাংবাদিকদের কোন ছবি বা ভিডিও ধারণ করতে বাধা দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। এটা নিউজ করার মত কোন বিষয় না । অন্য সময় সাংবাদিকদের ডাকলে পাওয়া যায় না।