যশোরে আলাদা হত্যা মামলায় নারীসহ দুজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

0

 

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরে দুটি হত্যা মামলায় দুজন আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত । বৃহস্পতিবার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. ইখতিয়ারুল ইসলাম মল্লিক এবং অতিরিক্ত দায়রা জজ ৪র্থ আদালতের বিচারক সোহানী পূষণ আলাদা এই রায় প্রদান করেন।
সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গঙ্গানন্দপুর মাঠুয়াপাড়া গ্রামের আতিয়ার রহমানের ছেলে মো. রাসেল ও অভয়নগর উপজেলার কোটা গ্রামের মৃত আলমগীর ওরফে আলমের স্ত্রী রেনুকা ওরফে রেনু।
একটি মামলার বিবরণে জানা গেছে, ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের বাসিন্দা শাহিনুর ইসলাম ওরফে ইসলাম ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালাতেন। তার একটি হিরো স্পেলন্ডার স্মার্ট ব্র্যান্ডে মোটরসাইকেল (যশোর-হ-১৭-৭২৬০) ছিলো। ২০১৯ সালের ৯ আগস্ট দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ইসলাম ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালানোর উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন। কিন্তু পরদিনে সকাল ১০টা বেজে গেলেও তিনি বাড়িতে ফিরে না আসায় তার মোবাইল ফোন নম্বরে রিং দিয়ে বন্ধ পান স্ত্রী সুফিয়া খাতুন। এ ঘটনায় ইসলামের ভাই শামীম রেজা ১০ আগস্ট ঝিকরগাছা থানায় নিখোঁজ সংক্রান্ত একটি জিডি করেন। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে ১১ আগস্ট বিকেল পৌনে ৩টার দিকে ঝিকরগাছার মোহাম্মদপুর বাজারের একটি পেট্রোল পাম্পের সামনে থেকে স্থানীয় জনগণ নিখোঁজ ইসলামের মোটরসাইকেলসহ মেহেদী (২০) নামে এক যুবককে আটক করে। মেহেদী একই উপজেলার গঙ্গানন্দপুর মাঠুয়াপাড়া গ্রামের আব্দুল কাদেরের ছেলে। এ খবর পেয়ে সুফিয়া খাতুন ও তার দেবর শামীম রেজা সেখানে গিয়ে মোটরসাইকেলটি ইসলামের বলে শনাক্ত করেন। এ সময় স্থানীয় জনগণ মেহেদীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারেন, ৯ আগস্ট দিবাগত রাত দেড়টার দিকে তিনি ঝিকরগাছা বাসস্ট্যান্ড থেকে ছুটিপুর বাজারে যাওয়ার কথা বলে ইসলামের মোটরসাইকলটি ভাড়া করেন। মূল উদ্দেশ্য ছিলো তার মোটরসাইকেল ছিনতাই করা। এরপর রওনা হওয়ার পর রাত ২টার দিকে গঙ্গানন্দপুর মাঠের জিউলীগাছা রাস্তার মোড়ে পৌঁছালে পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা গঙ্গানন্দপুর (মাঠুয়াপাড়া) গ্রামের আতিয়ার রহমানের ছেলে মো. রাসেল (৩৫)সহ অজ্ঞাতনামা আরও দুইজন ইসলামকে আটকিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে লাশটি রাস্তার পাশের ঝোপের মধ্যে রেখে দিয়ে তারা মোটরসাইকেলটি নিয়ে পালিয়ে যায়। মেহেদীর দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহত ইসলামের লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় মেহেদী ও রাসেলসহ অজ্ঞাতনামা আরও দুইজনকে আসামি করে ঝিকরগাছা থানায় মামলা করেন নিহতের স্ত্রী সুফিয়া খাতুন। এ মামলার তদন্ত শেষে ঝিকরগাছা থানা পুলিশের এসআই কাজী মো. সাহিদুজ্জামান পলাতক আসামি রাসেলের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। তদন্তে অপর আসামি অপ্রাপ্ত হওয়ায় শিশু আদালতে তার বিরুদ্ধে দোষীপত্র দেয়া হয়।
পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. এম ইদ্রীস আলী জানান, সাক্ষ্য প্রমাণে পলাতক আসামি রাসেলের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. ইখতিয়ারুল ইসলাম তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড এবং ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড প্রদান করেন। একই সাথে সাজাপ্রাপ্ত আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ইস্যুর আদেশ দেন আদালত।
অপর মামলার বিবরণে জানা গেছে, অভয়নগর উপজেলার কোটা গ্রামের ফজলুর রহমানের ছেলে আলমগীর ওরফে আলমকে তার স্ত্রী রেনুকা ওরফে রেনু ২০০৯ সালের মে মাসের প্রথম দিকে প্রতিবেশী এক নারীর সাথে পরকীয়া রয়েছে বলে সন্দেহ করেন। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হলে আলম তার স্ত্রীকে মুখে মুখে তালাক দেন। পরে স্থানীয় লোকজন তওবা পড়িয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মিলমিশ করে দেন। এরপর ১৫ মে রাতে রেনু তার মেয়ে ফাতেমাকে নিয়ে ঘরে ঘুমাতে যান। পরদিন ভোর ৫টার দিকে আলমের মেয়ে ফাতেমার ডাকে তার দাদি রাবেয়া খাতুন নিজ ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। এ সময় তিনি পুত্রবধূ রেনুকে রক্তমাখা কাপড় চোপড়সহ ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পান। ঘরের ভেতর আলমকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে বলে দেখতে পাওয়া যায়। তখন রাবেয়া খাতুনের চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। আলমের মেয়ে ফাতেমা লোকজনকে জানান, ভোরে চিৎকারের শব্দ শুনে তার ঘুম ভেঙে যায়। এ সময় সে দেখতে পায় খাটের পাশে দাঁড়িয়ে ধারালো চাপট দিয়ে তার মা রেনু পিতা আলমকে কোপাচ্ছেন। এ কথা শুনে লোকজন রেনুকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি স্বীকার করেন যে, ওইদিন রাত ১১টার দিকে পরকীয়া সম্পর্কের ওই নারীর ঘরে গিয়েছিলেন আলম। তিনি নিজ চোখে ঘটনাটি দেখতে পেয়ে পরে স্বামীকে জিজ্ঞাসা করলে তাকে থাপ্পড় মেরে ঘরে শুয়ে পড়েন আলম। এ সময় রেনু স্বামীকে খুনের পরিকল্পনা করেন। ধারালো চাপট এনে ১৬ মে ভোর ৫টার দিকে ঘুমিয়ে থাকা স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনায় নিহতের মা রাবেয়া খাতুন পুত্রবধূ রেনুকে আসামি করে অভয়নগর থানায় মামলা করেন। এ মামলার তদন্ত শেষে আসামি রেনুকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন এসআই মো. এমদাদুল হক।
আদালত সূত্র জানায়, মামলায় আসামি রেনুর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় অতিরিক্ত দায়রা জজ ৪র্থ আদালতের বিচারক সোহানী পূষণ তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড এবং ৩০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে আরও ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। সাজাপ্রাপ্ত আসামি রেনু কারাগারে আটক রয়েছেন।