চৌগাছার শর্তযুক্ত বলুহ মেলা আজ শুরু

0

 

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ নানা জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ১৭টি শর্ত সাপেক্ষে যশোরের চৌগাছার ঐতিহ্যবাহী বলুহ মেলা আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে। চলবে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। প্রশাসনের পক্ষ হতে সোমবার সন্ধ্যার পর এই অনুমতিপত্র পেয়েছেন বলে জানান মেলা কমিটির সদস্য সচিব ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামান মিলন।
চৌগাছার ঐতিহ্যবাহী বলুহ মেলা এ জনপদের সর্বস্তরের মানুষের কাছে বছরের পর বছর ধরে প্রাণের মেলাতে রূপ নিয়েছে। ভাদ্র মাসের শেষ মঙ্গলবার মেলা শুরুর কথা থাকলেও ৪/৫ দিন আগে থেকে শুরু হয়ে চলে আরও ১০/১২ দিন। গত দুই বছর মেলা করোনার কারণে না হওয়ায় এ বছর জাকজমকপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে প্রত্যাশা ছিল সকলের। কিন্তু প্রশাসনের অনুমতি না মেলায় চরম দুঃশ্চিন্তায় পড়েন সকলে। অবশেষে সোমবার সন্ধ্যার পর শর্ত সাপেক্ষে ১০ দিনের অনুমতি মিলেছে বলুহ মেলার।
চৌগাছা উপজেলা সদরের উত্তর পশ্চিম কোনে হাজরাখানা গ্রাম। সাপের চলার পথের মত আঁকাবাঁকা পথ পাড়ি দিয়ে এই গ্রামে পৌঁছাতে হয়। হাজরাখানা গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহমান মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের কপোতাক্ষ নদ। এই নদের পশ্চিম পাড়ে উঁচু মাটির ঢিবিতে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন এ অঞ্চলের প্রখ্যাত পীর বলুহ দেওয়ান (র.)। এই পীরের রওজা শরীফকে ঘিরে ভাদ্র মাসের শেষ মঙ্গলবার শুরু হয় ওরশ যা তিন ধরে চলে। ওরশের সাথে বসে মেলা, যে মেলাতে ঢল নামে সাধারণ মানুষের।
স্থানীয়রা জানান, কোন প্রচার প্রচারণা ছাড়াই ভাদ্র মাসের শেষ মঙ্গলবার এলেই বলুহ ভক্তরা রওজা শরিফে হাজির হন, চলে ওরশ। বছরের পর বছর ধরে এই ওরশের পাশাপাশি শুরু হয় মেলা। বিশাল এলাকা জুড়ে বসে হরেক রকমের দোকান, তারমধ্যে কাঠের তৈরি ফার্নিচার সকলের নজর কাড়ে। গ্রামটির বাসিন্দা রহমান আলী বলেন, পীর বলুহ মেলা আমাদের হৃদয়ের মেলা। যুগযুগ ধরে এই মেলা চলে আসছে। নিদিষ্ট কোন জায়গা না থাকায় গ্রামের মাঝ দিয়ে চলে যাওয়া সড়ক ও ব্যক্তি মালিকানা জমিতে বসে মেলার দোকান পাট। আব্দুল মমিন বলেন, পীরের রওজাকে ঘিরে বসা এই মেলাতে মানুষের ঢল নামে। গত বছরগুলোতে মেলাকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের অশ্লীলতা হয়েছে যা সচেতন মানুষের হৃদয়কে ব্যথিত করেছে। তবে এবছর কোন ধরনের অশ্লীলতা হবেনা। তার কারণ এই গ্রামেই নারায়নপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিনুর রহমান শাহিনের বাড়ি। তিনি কখনও মেলার পরিবেশ নষ্ট হতে দেবেন না।
যাকে ঘিরে এতো কিছু সেই পীর বলুহ দেওয়ান (রঃ) সম্পর্কে গ্রামের বয়োবৃদ্ধরা জানিয়েছেন, পীর বলুহ দেওয়ান (র.) এর জন্মস্থান ঝিনাইদাহ জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার বড় ধোপাদি গ্রামে, তার পিতার নাম ছুটি বিশ্বাস। চরম দারিদ্রতার সংসারে জন্ম নেয়া বলুহ খুব ছোট বেলায় হাজরাখানা গ্রামে মামার বাড়িতে চলে আসেন। কথিত আছে, বলুহ’র মামাদেরও আর্থিক অবস্থা খুব ভালো ছিলনা। তাই বলুহ অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। একদিন বাড়িওয়ালা বলুহকে মাঠে গরু চরাতে বলেন। বলুহ গরুর দল মাঠে নিয়ে অন্যের ফসলের ক্ষেতে ছেড়ে দিয়ে একটি গাছের ছাঁয়াতে বিশ্রাম করতে থাকেন। ক্ষেত মালিক খবর পেয়ে গরুরদল খোয়াড়ে নেয়ার উদ্যেশে রওনা হয়। বলুহ ঘটনাটি দেখে সমস্ত গরুকে বক বানিয়ে পাশেই বাঁশ ঝাড়ে বসিয়ে রাখেন। এ ধরনের অসংখ্য কিংবদন্তির কারণে তিনি পীর উপাধি পান। তার মৃত্যুর পর হাজরাখানা গ্রামে কপোতাক্ষ নদের পাড়ে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। যুগযুগ ধরে বলুহ’র রওজাকে ঘিরে বসে মেলা, যার নামকরণ করা হয় বলুহ মেলা।
এ বিষয়ে বলুহ মেলা পরিচালনা কমিটির আহবায়ক হাজরাখানা গ্রামের সন্তান ইউপি চেয়াম্যান শাহিনুর রহমান শাহিন ও সদস্য সচিব ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামান মিলন বলেন, প্রশাসনের পক্ষ হতে ১৭টি শর্ত সাপেক্ষে মেলার অনুমতি মিলেছে।